সুদিনে নানা সম্ভাবনার মাঝেও শেখ হাসিনার সামনে চ্যালেঞ্জ

  27-04-2017 12:18PM


পিএনএস ডেস্ক: ৭০ বছর পেরিয়ে ৭১-এ পা পড়েছে, জীবনের পড়ন্ত বেলা। জীবনের এই শেষ বেলায় এতোটা সুদিন আসবে তা নিজে তো নয়ই, বরং দলের নেতাকর্মীরাও কী কখনো ভেবেছিলেন! এরপরও আজ বাস্তবেই পরম সুদিন বিরাজ করছে বঙ্গবন্ধু কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। শুধু শেখ হাসিনার জীবনেই নয়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবার জীবনেই আজ সুদিন, এমন কী দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য স্বর্ণযুগ। চারদিকে সুখের হাতছানি, আশার আলো আর সম্ভাবনা।

তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। শান্তি, গণতন্ত্র ও মানবতার জন্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর ভঙ্গুর ও বিভক্ত দলকেও সংগঠিত করে পরিণত করেছেন দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক শক্তিশালী দলে। নেতৃত্বের জোরে ব্যক্তি শেখ হাসিনাও বিশ্বের শক্তিধর নারী রাষ্ট্রনায়কদের একজন। নিজেকে গঠন করেছেন এক প্রাজ্ঞ ও কৌশলী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে। সন্তানদেরও গড়েছেন সেভাবে। তাদেরও সুনাম-সুখ্যাতি ছড়িয়েছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও।

এই কৃতিত্বের জন্য শেখ হাসিনাকে অনেকে ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ আবার অনেক বাঙালি জাতির ‘শান্তির প্রতীক’ বলেও তাকে উপাধিতে ভূষিত করেছেন। আবার অনেকে বলছেন, অমর কীর্তিতে বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর উপাধি, এবার তারই কন্যা শেখ হাসিনা হতে যাচ্ছেন হাজার বছরের ‘শ্রেষ্ঠ বাঙালী নারী’। সবমিলেই শেখ হাসিনার এখন পরম সুদিন। এই সুদিনে তার চারপাশে বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্খী ও গুণকীর্তনকারী লোকের অভাব নেই। মুজিব পরিবারে এমন সুদিন ফিরবে তা হয়তো অনেকেই কল্পনা করতেও পারেননি। তবে বিরোধীদের দিক থেকে তার সমালোচনাও একেবারে কম নেই।

এই সুদিনের আগে তাকেও অনেক দুর্দিনের কষ্ট-যন্ত্রনা পোহাতে হয়েছে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট বাবা-মা, ভাইসহ আপনজনদের হারিয়ে এতিম হয়েছেন সেই ২৮ বছর বয়সেই। এরপর আল্লাহর অসীম কৃপায় বেঁচে যাওয়া (জার্মানীতে থাকায়) একমাত্র বোন শেখ রেহেনাকে নিয়ে পথচলা শুরু। এরপর অনেকটা নিয়তির ডাকেই রাজনীতিতে আসেন শেখ হাসিনা। দলে বাবার শূন্যতা পূরণে দলীয় সভানেত্রী নির্বাচিত হয়ে নেতানেত্রীদের পীড়াপিড়িতেই সেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন তিনি। হাল ধরেন বিভক্ত আওয়ামী লীগের। অনেকটাই ছন্নছাড়া দলের নেতাকর্মিদের সংগঠিত করে ধীর পায়ে এগুতে থাকেন আগামীর পথে।

বলা যায়, বর্তমান সময়টাই শেখ হাসিনার জীবনের ‘শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত’। আর এই সময়টা যদি শেখ হাসিনার জীবনের ‘শ্রেষ্ঠ সময়’ হয়ে থাকে তবে ৭৫ ও এর পরবর্তী সময় থেকে স্বৈরাচার এরশাদ এবং পরে খালেদা জিয়া ও মইন-ফখরুদ্দীন বিরোধী আন্দোলনের সময়গুলো ছিল তার জীবনের সবচেয়ে ‘অন্ধকার সময়’।

কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাত্রিতে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিহত হলেও তৎকালীন পশ্চিম জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। পরবর্তী ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয় তাদের দু’বোনকে। এরপর দেশে ফিরে ১৯৮২ সালে জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আরোহনকে অবৈধ ঘোষণা করে এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন শেখ হাসিনা।

১৯৮৩ সালে পনেরো দলের জোট গঠন করে তারই নেতৃত্বে দেশ জুড়ে সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে ওঠায় ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের ৩১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। চোঁখ বেঁধে তাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের ভাষায় কৌশলগত কারণে ১৯৮৬ সংসদ নির্বাচনে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে গৃহে অন্তরীণ করা হয়। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শুরু হওয়া ৮ দলের মিছিলে জনতার ওপর পুলিশ ও বিডিআর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় ৯ জন নিহত হয়। এরপরও তাকে দমাতে পারেনি। শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরে ১৯৯০ সালে তিনি এক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর আন্দোলনের জোয়ার ঠেকাতে সারা দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় এবং শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডির বাসায় গৃহবন্দি করা হয়। ৪ ডিসেম্বর জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত জনসভায় ভাষণ দেন শেখ হাসিনা। পরে অভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদ সরকারকে ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন। স্বৈরশাসনের নাগপাশ থেকে মুক্তি পায় বাংলাদেশ। পরে ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হন।

এরপর খালেদা সরকার বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৯৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা মিন্টো রোডের বিরোধীদলীয় নেতার বাসভবন ত্যাগ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দাবিতে ২৮ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদ থেকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি বিরোধী দলের সদস্যরা একযোগে পদত্যাগ করেন। চলতে থাকে আন্দোলন। কিন্তু বিএনপি সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করলেও তার দল এবং জোট তা বর্জন করে। পরে বিএনপি সরকার সংবিধান সংশোধন করে একপর্যায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

পরবতীর্তে ১৯৯৬, ১২ জুন অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি আসন পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আবারো সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যান। এ সময় দলের পরীক্ষিতনেত্রী আইভি রহমানসহ আরো ২৪জন নেতাকর্মি মারা গেলেও বড় ধরনের কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেননি। সেই সাথে এই ভয়াবহ হামলার বিচারও পাননি। ফলে জীবনের কঠিন দুর্দিন এ এক অন্যরকম সময় পার করেছেন। সেটা যেন ৭৫ এর চেয়েও কোনো অংশে কম ছিল না।

সেই দুর্দিন কাটাতে নেতাকর্মিদের সংগঠিত করে ধীর পায়ে এগুতে থাকেন আগামীর পথে। পরে সেনা নিয়ন্ত্রিত ড. ফকরুদ্দীনের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৮ সালের ১১ জুন প্যারোলো মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কারান্তরীণ থাকেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তার দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

বিরোধীদের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গেল বছরের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। এরই মধ্যে বিরোধী জোটের গড়ে উঠা আন্দোলনও মোটামুটিভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। গেল সিটি, জেলা-উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচনেও নিজের পছন্দের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। আগামী জাতীয় নির্বাচনেও সমূহ সম্ভাবনা দেখছেন। সবমিলেই এখন পরম সুদিন।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে সামনের পথ যে একেবারেই মসৃণ হবে তা বলার উপায় নেই। কেননা, উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতি মূলতঃ অস্থিতিশীল, কখন কী ঘটে তা বলার উপায় নেই। এত সুদিনেও শেখ হাসিনার সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ অপেক্ষয়মান-

প্রথমত: প্রধান বিরোধী দল ছাড়া নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন সরকারের সামনে এখন নানামুখী চ্যালেঞ্জ। চাপ আর চ্যালেঞ্জ সামলে পথ চলা যে এই সরকারের জন্য সহজ নয় তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেই স্পষ্ট হয়েছে। তিনি বারবার গণমাধ্যমের সামনে উচ্চারণ করছেন, দেশি-বিদেশি কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। মন্ত্রীরাও বিভিন্ন সময়ে তাদের কথা-বার্তায় জানিয়েছেন তাদের সামনে থাকা নানা চাপ আর চ্যালেঞ্জের কথা। এই চাপ ক্রমেই বাড়ছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে গত কয়েকদিনে সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের কথাবার্তায়।

১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বিষয়টি কূটনীতিক দুনিয়া ভালভাবে দেখেনি। এক্ষেত্রে নতুন নির্বাচন দেয়া ছাড়া তাদের সমর্থন আদায় কঠিন বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে আগামী দিনে এই দেশি-বিদেশি চাপ সামলিয়ে উঠে সরকার পরিচালনা এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে পারাটাই শেখ হাসিনার সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ।

দ্বিতীয়ত: সরকার যাই বলুক না কেন, বিতর্কিত নির্বাচনের পর নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা যে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চা ফিরিয়ে আনাই শেখ হাসিনা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তৃতীয়ত: সেই ২০০৯ সাল থেকেই হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা বিরোধী মত দমন করে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নির্বাসনে পাঠিয়েছে। এমন কী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের অনেকের অভিযোগ, দেশে এক ধরনের একদলীয় শাসন চলছে। অবশ্য তাদের এধরনের অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু যৌক্তিক কারণ উত্থাপন করতে সক্ষমও হয়েছেন। যেমনটি বলা যায়- দেশের প্রধান বিরোধী শক্তিকে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, বিরোধী জোটের নেত্রীকে কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং বিরোধ নেতাকর্মিদের উপর দমন নিপীড়নের অভিযোগ সরকার উড়িয়ে দিতে পারছে না। ফলে ভবিষ্যৎ সহনশীল রাজনীতির স্বার্থে দেশে একটি সুস্থ সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরেয়ে আনাই শেখ হাসিনা সরকারের আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ।

চতুর্থত: আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ দুটি নির্বাচনী ইশতিহারেই ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার অঙ্গিকার করেছেন। কিন্তু সেটা করতে হলে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেটা এখনো নিতে পারেনি সরকার, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সর্বশেষ তথ্যে এমনটিই জানা গেছে। ফলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করাও শেখ হাসিনার সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

পঞ্চমত: উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতি ও উন্নতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে দুর্নীতি। এক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও নেতানেত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বলা যায়- এটা ক্রমেই বিস্তৃত হচ্ছে। সরকার সংশ্লিষ্টরাও বলছেন, দুর্নীতি রোধ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সরকারের বিগত পাঁচ বছরে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল বিভিন্ন মন্ত্রী ও এমপিদের বিরুদ্ধে। বিগত নির্বাচনে জমা দেয়া হলফনামায় দেয়া তাদের সম্পদ বিবরণী থেকে অস্বাভাবিক সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে সরকারি দলের নীতিনির্ধারকদের অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে বাইরেও। পাঁচ বছরে বহু গুণ সম্পদের মালিক হওয়া মন্ত্রী-এমপিদের কেউ কেউ নয়া মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। সামনে দুর্নীতি রোধ ও সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ফলে আগামী দিনে দেশকে উন্নয়নে পথে এগিয়ে নিতে হলে শেখ হাসিনাকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফলে এক্ষেত্রে তিনি কতটা সাহসী ভুমিকা নিতে পারেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ষষ্ঠত: যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়েও চ্যালেঞ্জের মুখে আছে সরকার। এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের প্রশ্ন থাকলেও ইতিমধ্যে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডের বিধানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের বিরোধিতার মুখে এ বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া ও বিচার কার্যকরের ক্ষেত্রে সরকারের সামনের পথ চলায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখবে বন্ধু রাষ্ট্র ও সহযোগী সংস্থাগুলো। এই বিচার প্রক্রিয়া রাজনৈতিক না সত্যিকার অর্থেই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার প্রক্রিয়া তা বলে দিবে সরকারের আগামী দিনের কর্মকাণ্ডই।

সপ্তমত: দ্বিতীয়বারের মতো শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর দলীয় নেতাকর্মিরা অনেকটাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকায় আধিপত্য, পদ-পদবী, টেন্ডার পাওয়া-ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ইত্যাদি নিয়ে চলছে দলের ভেতর নেতাকর্মিদের মধ্যে এক ধরনের অরাজকতা। ফলে এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করাও শেখ হাসিনার সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এদেরকে সময়মত নিয়ন্ত্রণ করে দলে শৃংখলা ফিরিয়ে না আনতে পারলে যে সামনে দিনে কঠিন মাশুল দিতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সাথে রয়েছে বিরোধী জোটের নেতাকর্মিদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। কেননা, ৮ বছর ধরে বিএনপি-জামায়াতের এক বিরাট কর্মিবাহিনী প্রচলিত ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে অনেক জেলজুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। প্রতিকূল পরিবেশে এখনো তা অব্যাহত আছে। অনেকে গত কয়েক বছর থেকেই ফেরারি জীবন যাপন করছেন। আবার অনেকে দীর্ঘ সময় ধরে কারা ভোগ করছেন। ফলে এই বিশাল বিরোধী কর্মী বাহিনীর এখন কী হবে! এরাও তো রাষ্ট্রের নাগরিক। এদেরও তো মৌলিক নাগরিক অধিকার রয়েছে। এদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়াটাও রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। ফলে প্রচলিত প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে বিরোধী দল-মতের লোকজনকে সহনীয় মাত্রায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়াটাও শেখ হাসিনার জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। আর এটা করতে না পারলে দেশে যে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

ফলে দল নয়, রাষ্ট্রীয় পদে থেকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এখন বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে এগুতে হবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আগামী দিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন পথে হাটেঁন সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে প্রচলিত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সামনের পথ যে একেবারেই মসৃণ হবে সেটা বলার উপায় নেই।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন