হাওয়ারবাসীর কান্না : ঠিকাদার ও দায়িত্বশীলদের অবহেলা…

  27-04-2017 05:50PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের হাওরবাসীর কান্না থামছে না। অকালের সর্বনাশা বন্যা তাদের কপাল পুড়িয়েছে। হঠাৎ আসা বানের পানি তাদের ঘরে তোলার উপযোগী ধানসহ মূল্যবান ফসল তলিয়ে দিয়েছে। চোখের সামনে তাদের আশা-ভরসার সব বিলীন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য তারা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। চোখের পানিতে বুক ভিজিয়ে তারা ফসলের শোক ভোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে।

মূলত খাই খাই অপ-রাজনীতির শিকার হাওরাঞ্চলবাসী। কাজের নামে ফাঁকিবাজি তাদের আজ পথে বসিয়ে দিয়েছে। অসৎ ঠিকাদারদের দৌরাত্ম্যে হাওরের লাখ লাখ হেক্টর জমির আবাদি ফসলহানি ঘটেছে। সঠিকভাবে বাঁধ নির্মাণ না করায় এর কুফল ভোগ করতে হচ্ছে হাওরাঞ্চলের কৃষক সমাজকে। কষ্টের ফসল হারিয়ে তারা হতাশ। পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা দিশেহারা। চরম বিপাকে নিজের পাশাপাশি গবাদিপশুর খাবার নিয়ে।

হাওরাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ ঠিকাদারের মানহীন কাজের কারণে যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তারা মনে করে, এর মধ্য দিয়ে ঠিকাদাররা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে। সচেতন জনগোষ্ঠীর মতে, যে অপরাধের মার্জনা কোনোমতেই কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না্। যাদের কৃতকর্মের কারণে লাখ লাখ একর জমির ফসলহানি ঘটেছে, তাদের তো এর কাফফারা দিতেই হবে। তাদের এবং তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

যেসব ঠিকাদার কাজের নামে গাফিলতি করেছে, সেটাকে ইচ্ছাকৃত মনে করা হচ্ছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এটা করা হয়েছে কাজের মান রক্ষা না করে; প্রাক্কলনকে পাশ কাটিয়ে। সর্বোপরি অর্থ লোপাটের অভিপ্রায়ে। নামকাওয়াস্তে কাজ হয়েছে, বাকিটা হয়েছে পুকুরচুরি। যার খেসারত দিচ্ছে নিরপরাধ কৃষক সমাজ। হাওরাঞ্চলজুড়ে আজ যে হাহাকার বিরাজ করছে, তা কেবলই বাড়ছে। বাড়ছে অসহায় মানুষের আর্তনাদ।

তথ্যমতে, সুনামগঞ্জের ১১৬টি প্যাকেজে বোরো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত বা সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা হলেও সঠিক সময়ে সে কাজ সম্পন্ন হয়নি। আবার কেউ কেউ ২০ শতাংশের মতো কাজ করে পুরো বিল তুলে নিয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ঠিকাদার ও পিআইসির অবহেলাকে দায়ী করা হচ্ছে। কাজের গুণগত মান রক্ষা না করায় নিরীহ কৃষক সমাজকে বড় ধরনের মাসুল গুনতে হচ্ছে। এতে লাখ লাখ কৃষক পরিবারের পথে বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

এসব হাওরাঞ্চলের মানুষ পেটের খিদে, মনে কষ্ট আর ফসল হারানোর বেদনায় কাতর। তাদের কাছে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা কারো জানা নেই। ঠিকাদারদের অবহেলা আর দায়িত্বশীলদের পাহাড়সম গাফিলতি তাদের আজ পথে বসিয়ে দিয়েছে। একটু সহযোগিতা পাওয়ার আশায় তারা হন্যে হয়ে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো তাদের উপর নেমে এসেছে নানা দুর্যোগ ও দুর্ভোগ। তারা যা কখনো কল্পনাও করতে পারেননি, এমন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা তাদের আষ্টেপিষ্ঠে ঘিরে ধরতে পারে।

অতি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জোড়াতালি দিয়ে গড়া বাঁধ তাসের ঘরের মতো একের পর এক ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। মুহূর্তেই ধূলিসাৎ করে দেয় কৃষকের সব স্বপ্ন। স্বপ্ন ভাঙ্গার পাশাপাশি পানি হয়ে ওঠে অভিশাপের মতো। এ পানিতে মরছে মাছ ও হাঁস। ঘাস খেয়ে মরছে মহিষ। পানিদূষণে এসব ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে। পানিতে আবাদী ফসলের সঙ্গে গবাদিপশুর খাবার হিসেবে পরিচিত খড়ও নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে গবাদিপশুর খাবার নিয়ে কৃষক সমাজ চরম বিপাকে পড়েছে।

মাছে-ভাতে বাঙালির যে ঐতিহ্য অকাল বন্যার পর সে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে হাওরাঞ্চলবাসী। একদিকে ফসল হারিয়ে খাবার সংকট অন্যদিকে হাওরে সহজপ্রাপ্য মাছে মড়ক, গবাদিপশুর খাবার নিয়ে বিপাকে থাকা মানুষ বহুমুখী সংকট-সমস্যার মুখোমুখি। এসব সংকট কাটিয়ে উঠতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ ও নগদ অর্থ বরাদ্দ জরুরি। সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনকে হাওরাঞ্চলবাসীর পাশে দাঁড়ানো অতীব প্রয়োজন। আরো বেশি প্রয়োজন পানিকে দূষণমুক্তকরণে উদ্যোগ গ্রহণ।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]


পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন