রিংয়ের উচ্চ মূল্যের ফাঁদে ছিলেন হৃদরোগীরা

  29-04-2017 07:09PM

পিএনএস : অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে হার্টের রিং বা করোনারি স্টেন্টের ম্যাক্সিমাম রিটেইল প্রাইস (এমআরপি) নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রিংয়ের মূল্য তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রোগীদের রিংয়ের দাম সম্পর্কে ধারণা দিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর স্টেন্টের মূল্যমান নিয়ে পোস্টার ছাপানোর উদ্যোগও নিয়েছে।

১৮ এপ্রিল হার্টের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় রিংয়ের মূল্য নির্ধারণে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জাতীয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। সেখানে অধিদফতরে ২৮ রকমের রিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে। এখন থেকে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের কাছে নির্ধারিত দামে রিং বিক্রি করতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১/২টি নয়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত সব রিংয়ের দাম না কমালে রোগীদের ভোগান্তি কমবে না। কারণ কোন কোম্পানির রিং ব্যবহার করতে হবে তা নির্ধারণে রোগী ও তার পরিবার চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে রিংয়ের দাম আমদানি মূল্যের চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি রাখা হয়। অথচ ভারতে মূল্য নির্ধারনের পর বোস্টন কোম্পানির সিনার্জি স্টেন্টের দাম রাখা হয় মাত্র ২৯ হাজার ৬০০ রুপি বা ৩৬ হাজার ৪০৮ টাকা।

গত বছর অক্টোবরে রাজধানীর একটি অভিজাত হাসপাতালে হার্টে রিং পরানো বাবদ বিল রাখা হয় ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। অথচ রিংয়ের আমদানি মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৯৩ হাজার টাকা।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের ক্যাথল্যাবগুলোয় বোস্টন সায়েন্টিফিক কোম্পানির প্রোমাস এলিমেন্ট রিং সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে যার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আগে হাসপাতাল ভেদে এর দাম রাখা হতো এক লাখ ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকা। রেজুলেট ইন্টেগ্রিটি রিংয়ের দাম ছিল এক লাখ ৮ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা। আর জিনেন্স প্রাইমের দাম ছিল এক লাখ ১৪ হাজার থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা।

ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে জানা যায়, এরই মধ্যেই হৃদ রোগীদের চিকিৎসায় ৩৯ ব্র্যান্ডের রিংয়ের দাম ঠিক করেছে মূল্য নির্ধারণ কমিটি। সেখানে ১৪ হাজার ৩৮৮ টাকা থেকে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮৯১ টাকার স্টেন্টও রয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জে. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘তালিকা অনুযায়ী রিংয়ের দাম রাখা হচ্ছে কিনা এবং তালিকা ঝোলানে আছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করতে অধিদফতরের পক্ষ থেকে তিনটি টিম প্রতিদিন বিভিন্ন হাসপাতাল পরিদর্শন করছে।’

স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব বলেন, ‘দেশের রোগীরা এখন অর্ধেক মূল্যে রিং পাবে। তবে রোগীরা যেন অন্য কোনোভাবে প্রতারণা শিকার না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’

রিংয়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটির সদস্য ও যুগ্ম সচিব মাহবুব কবীর মিলন বলেন, ‘করোনারি স্টেন্টের মূল্য নিয়ে দেশে অরাজকতা ছিল। আগে একই ব্র্যান্ডের রিংয়ের দাম হাসপাতাল ভেদে এক থেকে ২ লাখ টাকা রাখা হতো। এখন মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ায় রোগীদের ভোগান্তি কমবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে অনুরোধ করেছি, অধিদফতর থেকে রোগীর বিল ও ভাউচারে রিংয়ের বর্ণনা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে নির্দেশ জারি করতে। কারণ কিছু হাসপাতাল শুধু বিলে রিংয়ের দাম উল্লেখ করছে।’

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন