‘সরকার আমরা চালাই, আমাদের সরকার শাজাহান খান’(পর্ব-১)

  23-05-2017 05:33PM

পিএনএস (জে এ মোহন) : সিটিং সার্ভিস বন্ধ করতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেই ব্যর্থতায় এখন বেপরোয়া পরিবহন ব্যবস্থা। রাজধানীতে ক্ষমতাসীনদের প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকায় পরিবহন সেক্টরে এখনো নৈরাজ্য চলছে।

সাধারণ যাত্রী ও যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের অভিযোগ, এই জনভোগান্তির নেপথ্যে রয়েছেন মালিক-শ্রমিক সমিতির সঙ্গে যুক্ত সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা ও সমর্থকেরা।

দেশের বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলেছেন, সড়ক পরিবহন খাতের মালিক এবং শ্রমিক সংগঠনের দাপটের কাছে সরকার অনেক সময় নির্লিপ্ত ভূমিকার পরিচয় দিচ্ছে। ফলে এই খাতে বিশৃঙ্খলা বা নৈরাজ্য অব্যাহত রয়েছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।সরকারি সিদ্ধান্তকে নগরবাসীর কাছে দুঃসহ করে তুলতে সড়কে বাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন মালিকরা।

বাস-মিনিবাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষায় থাকতে হবে না, ভাড়া কমে যাবে—এমন আশ্বাস দিয়ে মালিক সমিতি সিটিং সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিলেও সেই মালিকেরাই এখন তা মানছেন না।

সাধারণ যাত্রীরা বলেন, ভাইরে আগে বাসের কন্টেকদারের সাথে কথা বলা যেত, এখন আর কথাই বলা যায় না। তারা (শ্রমিকরা) বলেন, ‘সরকার আমরা চালাই,(নিয়ন্ত্রনে) আমাদের সরকার নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান’ আমাদের সাথে আছেন। ‘তিনিই’(শাজাহান খান) শ্রমিকদের সরকার। এভাবে বাসের কন্টেকদাররা মন্ত্রীর নাম ব্যবহার করছে। মৈত্রী বাসের যাত্রীরা বলেন, শাজাহান খানকে যদি বিষয়টা জানানো যেত তাহলে তারা এভাবে মন্ত্রীর মানে অপপ্রচার করতে পারত না।

অনেক যাত্রীদের অভিযোগ শুধু সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে না, সরকারকেও জিম্মি করে তাদের অনিময়ের বৈধতা করে নিয়েছে।

সিটিং সার্ভিস বন্ধ হবে এমন ঘোষনার আগে যে সকল বাস লোকাল সার্ভিস ছিল, কিন্তু ১৫ দিনের জন্য সিটিং সার্ভিস বন্ধের অভিযান স্থগিত করা হয়েছে এই ঘোষনা আসার পর থেকে লোকাল বাসগুলোতে সিটিং ভাড়া আদায় করছে।সার্ভিস লোকাল রয়েছে কিন্তু ভাড়া আদায় হচ্ছে দ্বিগুন।

গণপরিবহনের সংকটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তির প্রেক্ষিতে ‘কথিত’ সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত ১৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বিআরটিএ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানও বন্ধ থাকবে বলে ঘোষনা আসার পর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই সেক্টর।

মো. আল আমীন নামের এক যাত্রী বলেন, ভাড়া নিয়ে কন্টেকদাদের সাথে কথা বলতে গেলে আমারে বলে ‘সরকার আমাদের সাথে পারেনি, ভাড়া যা চাই তাই দেন, না গেলে নেমে যান’এভাবে চরম খারাপ আচরণ করেছে যাত্রীদের সাথে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ছেড়ে আসা মৈত্রী পরিবহন, এফ টি সি এল, মালঞ্চ, এম টি সি এল, দ্বীপনসহ সকল বাসেই যাত্রীদের কাছ থেকে যে যেভাবে পারছে ভাড়া আদায় করছে। যে সকল লোকাল বাস রয়েছে সেই বাসগুলোতে নেই কোনো ভাড়ার তালিকা। বরং অফিসের সময় তারা সিটিং হয়ে যায়। মোহাম্মদপুর থেকে সিটি কলেজ পর্যন্ত গাড়ি চলে রিকসার গতিতে। শাহাবাগ পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া আদায় করে আবার গুলিস্তান পর্যন্ত একই ভাড়া আদায় করছে লোকাল বাসগুলো।

যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন ব্যক্তিদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। মেশকাত, সুপ্রভাত, গাজীপুর পরিবহন, লাব্বাইক পরিবহন একাধিকবার লোকাল থেকে সিটিং এবং সিটিং থেকে লোকালে পরিবর্তন করা হয়েছে।

কেরানীগঞ্জ থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানা পর্যন্ত চলে দিশারি পরিবহন। এই কোম্পানির বাসে কেরানীগঞ্জ থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যত্রতত্র যাত্রী তোলা হয়। গুলিস্তান থেকে আবার সিটিং হয়ে যায়। এভাবে একেক সময় একেক ব্যবস্থায় চলে ঢাকার পরিবহন।

ঘোষণা দিয়ে প্রকাশ্যে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধ হলেও প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্বশীলদের ভূমিকা কালা-বধিরের মতো।অর্থ আদায়ের নানা কৌশল।সে কৌশলের অংশ হিসেবে রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস বন্ধের নামে চিটিং চলছে প্রকাশ্যে।

যদিও চলাচলের অনুমতির (রুট পারমিট) শর্ত অনুযায়ী, কোনো কারণ ছাড়া বাস-মিনিবাস বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। সেটা করলে রুট পারমিট বাতিলের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) আইন প্রয়োগ না করেই সিটিং সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে কার্যত পিছু হটল।

যাত্রীরা বলছেন, এবার ভাড়া কমানোর কথা বলে সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হয়। কিন্তু ভাড়া কমেনি। মূলত যাত্রীদের জিম্মি করে বাড়তি ভাড়া আদায়ের জন্য এটা মালিকদের কারসাজি।

বিআরটিএর কর্মকর্তা ও যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় সিটিং সার্ভিস অব্যাহত রাখার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা অনেকটাই অবাস্তব।

এর ফলে পরিবহনমালিকেরা বন্ধ বাস চালু করে দিতে পারেন। তবে বাড়তি ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য থেকেই যাবে। আর ভ্রাম্যমাণ আদালত সীমিত হলেও এত দিন বাড়তি ভাড়া আদায় রোধে যে তৎপরতা চালাচ্ছিল, এখন এই সিদ্ধান্তের কারণে শিথিল হয়ে যায়।

অন্যদিকে প্রতিবারই যাত্রীদের জিম্মি করে মালিক-শ্রমিকেরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। যার ফলে মাঝপথে সরকার অভিযান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।

যাত্রী কল্যাণ সমিতি এক বিবৃতিতে বলেছে, অবৈধ সিটিং সার্ভিস বন্ধ-চালুর খেলায় সরকারের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে গণপরিবহনে ‘ভাড়া ডাকাতি’অব্যাহত রাখার ষড়যন্ত্র চলছে।

উলেখ্য এর আগে ১৬ এপ্রিল থেকে রাজধানীতে বন্ধ হয় কথিত সিটিং সার্ভিস। বিষয়টি তদারকি করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। ফলে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা গণপরিবহনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।

[পর্ব-১ চলবে……….]
পিএনএস /জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন