রমজানে রাজধানীতে থাকছে ৩ স্তরের নিরাপত্তা

  28-05-2017 04:49AM

পিএনএস ডেস্ক: রমজানে শুরু থেকে তিন স্তুরের নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে রাজধানী। এ ধাপগুলো হলো সকাল থেকে ইফতার পর্যন্ত, ইফতারের পর থেকে তারাবির নামাজ এবং সেহরীর সময়। এ সময়গুলোতে ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে থাকবে আলাদা নজরদারি। এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে সারাদেশে রোজায় নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠকের পর ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার করতে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। কমিশনারের নির্দেশ পাওয়ার পরপরই ডিএমপির ৮ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনাররা ওসিদের নিয়ে বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ শুরু করেছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বিভাগের উপ-কমিশনারের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস ও ঈদ-উল-ফিতর নিরাপদে নির্বিঘ্নে উৎসব ও আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। মঙ্গলবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সম্মেলন কক্ষে পবিত্র রোজা ও ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।

ওই সভায় নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পবিত্র রোজা ও ঈদ উদযাপন নির্বিঘ্ন করার জন্য আইজিপি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি সুষ্ঠু যানবাহন চলাচল ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি যানবাহন যাতে চলাচল না করে সেজন্য ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ এবং সজাগ থাকারও নির্দেশ দেন।

সভায় আইজিপি বলেন, ফরমালিন ও রাসায়নিক উপাদান মিশ্রিত ফল ও খাদ্যদ্রব্য বিরোধী চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে এ অভিযান পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্যদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা বা অপেশাদার আচরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সভায় পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, রেলওয়ের অতিরিক্ত আইজিপি আবুল কাশেম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের মহাপরিচালক মো. নওশের আলী, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, সব পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ও হাইওয়ে পুলিশসহ অন্য ইউনিটের ডিআইজিরা, ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারসহ এনএসআই, ডিজিএফআই, আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সদর দফতরের সিদ্ধান্ত:
সভায় ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ রোধে বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে পকেটমার ও অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় শহরে বিপণী বিতান ও শপিংমল যথাসম্ভব সিসিটিভির আওতায় এনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। জনসাধারণের কেনা-কাটার সুবিধার্থে এবং তারাবির নামাজের সময় অপরাধমূলক তৎপরতা প্রতিরোধে গভীর রাত পর্যন্ত পর্যাপ্ত নৈশ টহলের ব্যবস্থা করা হবে। ব্যাংক ও অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে পুলিশ জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

মহাসড়কে সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পুলিশ কোনো যানবাহন তল্লাশি করবে না। মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধ এবং যানজট নিরসনে হাইওয়ে এবং জেলা পুলিশ বিশেষ তৎপর থেকে দায়িত্ব পালন করবে।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য রেলওয়ে স্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে টিকেট কালোবাজারী প্রতিরোধে পুলিশ, মালিক ও শ্রমিক নেতারা এবং কমিউনিটি পুলিশের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ঈদ জামাতস্থলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পুলিশ সদর দফতরের সভা শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে রোজায় রাজধানীতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কমিশনারের এ নির্দেশ পাওয়ার পরপরই ডিএমপির ৮ বিভাগের উপ-কমিশনাররা থানার ওসিদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে ওসিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, রমজান মাস ও ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে বিভিন্ন মার্কেট, বিপণি বিতান, কাঁচা বাজার, আড়তে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ীরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়। এগুলো রোধে তিনস্তরের নিরাপত্তা কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা চলছে মধ্য রমজানে নিরাপত্তা আরো বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, রোজা ও পবিত্র ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।

মতিঝিল থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, মতিঝিল থানা এলাকা ব্যাংকপাড়া হওয়ায় এখানে ছিনতাইয়ের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে এ এলাকায় আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ নজরদারি রয়েছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

রমপুরা থানার ওসি প্রলয়কুমার বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এ থানা এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হচ্ছে। রোজার শুরু থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় সকল নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেব।

তেজগাঁও থানার ওসি মাজাহার হোসেন বলেন, শিল্পাঞ্চল এলাকার নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত যেন কোনো ঘটনা না ঘটে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন