‘নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিন’

  30-05-2017 01:52AM



পিএনএস ডেস্ক: “জীবন বাঁচাতে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিন। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। ক্ষতি কমাতে এখনই সবরকম প্রস্তুতি নিন। ঘূর্নিঝড় ‘মোরা’র সর্বোচ্চ আঘাত থেকে বাঁচার জন্যই আমরা সর্বোচ্চ বিপদ সংকেত জারি করেছি। আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই উপকূলীয় এলাকায় ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঘোষণা করেছি।”

এমন সতর্কবার্তা জানিয়ে উপকূলী এলাকার মানুষকে সাবধান করে দেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক শামসুদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “আমরা ‘মোরা’র গতি ও ক্ষিপ্রতা অনুধাবন করতে পেরেই উপকূলীয় অঞ্চলে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছি। এ ব্যাপারে তথ্য রয়েছে আমাদের কাছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিকালের পর থেকেই সংকেত দেখানো হয়েছে।”

আবহাওয়া অধিদফতর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে ‘মোরা’র গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলছি। আবহাওয়া অধিদফতর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবাইকে নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। যারা এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি, তারা কালবিলম্ব না করে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সবাইকে আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।’

ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ এর পরিবর্তে ১০ নম্বর পুনঃ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর পুনঃ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৮ নম্বর পুনঃ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর পুনঃ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান সোমবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বুলেটিনেও বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ আরও সামান্য উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে একই এলাকায় (১৮.৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১.৩ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছিল। এটি সোমবার সন্ধ্যা ০৬ টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৮৫ কি.মি. দক্ষিণে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩০৫ কি.মি. দক্ষিণে, মংলা সমু্দ্রবন্দর থেকে ৪৫০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৭০ কি.মি. দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব দিকে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত ও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকাল নাগাদ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬২ কি.মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ কি.মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্দ রয়েছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন