‘দুর্নীতি বন্ধ না হলে ভ্যাট বাড়িয়ে কোন লাভ হবে না’

  18-06-2017 06:47PM

পিএনএস ডেস্ক : বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সোমবারও ভ্যাট এবং ব্যাংক আমানতের শুল্ক প্রত্যারের দাবি অব্যাহত রেখেছেন সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা। তারা বলেন, ব্যাংক হিসাবে বাড়তি আবগারি শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ না হলে বাজেটে ভ্যাটের আওয়তা বাড়িয়ে কোন লাভ হবে না। বাজেটে যেভাবে ভ্যাটের আওয়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে দেশের জনগণের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এই বাজেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভোগান্তি বাড়াবে। এজন্য তারা ভ্যাট ও ব্যাংক আমানত থেকে আবগারি শুল্প প্রত্যাহারের দাবি জানান।

একইসঙ্গে ভ্যাটের কারণে রমজান মাসে দ্রব্য মূল্যের পাগলা ঘোড়া জনগণকে দিশেহারা করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। পাশাপাশি চালের দাম বৃদ্ধি ও নগরীরর জলাবদ্ধকতার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের সদস্যরা।

সংসদের বাজেট অধিবেশনে সোমবার বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের সদস্যরা এসব কথা বলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে কোরাম সংকটে অধিবেশন শুরু করতে দেরি হয়।

সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ নেতা শেখ হাসিনা সংসদে উপস্থিত হলেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্যের অনুপস্থিতির কারণে অধিবেশন শুরু আধা ঘণ্টা পর। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে সংসদ ভবনে পৌঁছে সরাসরি অধিবেশন কক্ষে যখন পৌঁছেন, তখন অধিবেশন কক্ষে মাত্র ১৬ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী অধিবেশন শুরু করতে হলে ৬০ জন সংসদ সদস্য উপস্থিত থাকতে হয়, যেটা কোরাম বলা হয়। পরে ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়।

বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেট দেশকে আরো সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথ নির্দেশ বলে উল্লেখ করেন। তবে ব্যাংক হিসাবে ওপর আবগারি শুল্কারোপ প্রস্তাব প্রত্যাহার এবং ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার আহবানও জানান তারা। আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক তাঁত শিল্পের ওপর ভ্যাটের হার কম ধরা, ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক কমানো, হুণ্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানান।

একইসঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ও স্বাস্থ্য যন্ত্রপাতির উপর নতুন ভ্যাট আরোপ না করায় তিনি অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, বিএনপি যখন বলে পকেট কাটার বাজেট তখন সন্দেহ হয়। দুর্নীতি কত প্রকার ও কীভাবে করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছে বিএনপি। তাদের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে অশুভ শক্তি অতীতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত করেছে, আগামীতেও করবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অশুভ পায়তারা লক্ষ্য করছি। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে।

আবগারি শুল্ক বাস্তবায়ন হলে দেশ থেকে দুইশ' কোটি টাকা পাচার হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, অর্থমন্ত্রীর ব্যাংকে সাধারণ মানুষের গচ্ছিত টাকার ওপরও নজর পড়েছে। আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে জনমনে মারাত্মক অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটটি নির্বাচনীমুখী হওয়া উচিত ছিল। সরকার যেভাবে ভ্যাটের বোঝা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তা অনাকাঙ্খিত। এ নিয়ে দেশের মানুষ হতাশ, নির্বাক।

তিনি বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতিদের ওপর ১৫ ভাগ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এর ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, কেন চালের দাম সর্বনিম্ন ৫০ টাকা? কীভাবে এতো বাড়লো, কীভাবে কমাবেন তা জানি না। নির্বাচন সামনে, অথচ সরকার মনে হয় নির্বিকার। শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং ব্যাংকগুলো থেকে লুটপাট হয়ে গেলেও সরকার কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

জাসদের লুৎফা তাহের বলেন, বাজেটে যেভাবে ভ্যাটের আওয়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে তাতে দেশের জনগণের মারাত্মক ক্ষতি হবে। তিনি ব্যাংক আমানত থেকে আবগারি শুল্প প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এফবিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন বলেন, জ্বালাও-পোড়াও ও অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার কারণে বিএনপি অনেক আগেই সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এখন জনগণকে বিভ্রান্ত করতে রূপকল্প দিচ্ছে। কিন্তু দেশের জনগণ তাদের আর কোনদিন গ্রহণ করবে না।

জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমান বলেন, দুর্নীতি বন্ধ না হলে ভ্যাটের আওয়তা বাড়িয়ে কোন লাভ হবে না। এই বাজেট মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভোগান্তি বাড়াবে। যার কাছে (অর্থমন্ত্রী) চার হাজার কোটি কিছুই ছিল না, তাঁর কাছে এক লাখ টাকা বড় হয়ে গেল? কথায় কথায় রাবিশ, তাঁর কথায় জনগণ হাসে, আমরাও হাসি। এটা বয়সের কারণে কি না জানি না। এই বাজেটকে ‘বেদনার বেলা ভূমিতে দাঁড়িয়ে বেদনার অট্রহাসি’।


পিএনএস/জে এ/ মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন