ঢাকা ছাড়ার পর ভোগান্তি শুরু

  23-06-2017 09:12AM


পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবারই ছিল ঈদ-পূর্ববর্তী শেষ কর্মদিবস। তাই অফিস ছুটি শেষে বাসায় ফিরেই অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রওনা দেয় বাড়ির পথে।

রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনালমুখী মানুষের ঢল শুরু হয়ে যায় বিকেলের মধ্যেই। রাজধানীর রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষের বাড়তি চাপ দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যার পর পর্যন্ত প্রতিটি বাস, ট্রেন ও লঞ্চ তাদের নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, ঈদ উপলক্ষে আজ ও আগামীকাল বাড়িমুখী যাত্রীদের মূল চাপ দেখা যাবে।

তবে ঢাকা থেকে ঠিক সময়ে বের হতে পারলেও গতকাল সড়কপথের যাত্রীদের মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজট ও ধীরগতির কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনগুলো থেমে থেমে চলতে দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সকাল থেকে মাঝেমধ্যেই যানজট দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত বুধবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট লেগেই ছিল। এই মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশের মেঘনা সেতু থেকে বাউশিয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারজুড়ে যানজট ছিল দিনভর। সংশ্লিষ্টরা জানায়, ঈদ যাত্রায় শেষের দিকে ভোগান্তি হবে—এমন ভেবে যাত্রীরা আগেভাগেই রওনা দিয়েছে। একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক যাত্রী পথে নামায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

বাস-ট্রেন ছাড়ছে ঠিক সময়েই : মহাখালীর আন্ত জেলা বাস টার্মিনালে গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় কথা হয় বগুড়াগামী একতা পরিবহনের যাত্রী শফিক আহমেদের সঙ্গে। পরিবারের আরো চার সদস্য নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। বললেন, ‘আধাঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছি। এর মধ্যে একতা পরিবহন ছাড়াও অন্যান্য পরিবহনের গাড়িগুলো সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের তেমন একটা অসুবিধা হচ্ছে না। বাইপাইল, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর ও মির্জাপুর এলাকায় যানজট না হলে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব। ’

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, শেরপুর ও সিলেটের বাস যাতায়াত করে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করা শাহ ফতেহ আলী পরিবহনের ম্যানেজার তুহিনের সঙ্গে রাত ৮টায় কথা হয়। তুহিন বললেন, ‘সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আমাদের ৩৯টি গাড়ি উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে ছাড়ে। রাত ৮টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ে গাড়ি ছাড়তে পেরেছি আমরা। প্রশাসন ও পুলিশের লোকজন সচেতনভাবে দায়িত্ব পালন করায় এখন পর্যন্ত যানজট হয়নি। রাতের দিকে কিছুটা যানজট থাকতে পারে। সময়মতো বাস ছাড়তে পারলে যাত্রীদের ভোগান্তিও কম হবে। ’

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরবঙ্গের লালমনিরহাট, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রাজশাহীর পথে চলাচলকারী সবচেয়ে বড় বাস সার্ভিস নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক আব্দুল আউয়াল জানান, এ বছর তাঁদের ৭৫ শতাংশ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। তাই কাউন্টারের সামনে ঘরমুখী মানুষের চাপ তেমন বোঝা যাচ্ছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু জেলা ও উত্তরবঙ্গের পথে চলা হানিফ পরিবহন, আগমনী, শ্যামলী পরিবহন, এসআর পরিবহন, মানিক এক্সপ্রেসেও একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।

চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জেলার বাস ছাড়ে রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে। সেখানেও সকালে যাত্রীদের খুব বেশি চাপ ছিল না বলে জানান সায়েদাবাদ আন্ত জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম। তবে রাতে যাত্রীদের চাপ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। আজ সারা দিনও ঘরমুখো মানুষের চাপ থাকতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদের ট্রিপ দেওয়ার জন্য সব গাড়ি সায়েদাবাদ চলে আসছে। সকাল থেকে অন্তত ১০০ বাস ছেড়েছে। প্রতিটি বাস তার নির্ধারিত সময়েই টার্মিনাল ত্যাগ করছে। ’

কল্যাণপুরে টিআর পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মিলন আহমেদ বলেন, প্রতিবছর রাস্তায় যানজটের কারণে কোনো বাস নির্ধারিত সময়ে টার্মিনাল ছেড়ে যেতে পারে না। এবার গতকাল পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি। টার্মিনালে হাজারো যাত্রী দেখা গেলেও সবাই নির্ধারিত সময়ের বাসেই রওনা করছে।

গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে যাত্রীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। আগের দিন ট্রেনের সূচিতে গড়বড় দেখা গেলেও গতকাল সকাল থেকে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়েই গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে বলে জানান স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী। সর্বশেষ তাঁর সঙ্গে কথা হয় গতকাল রাত ৮টায়। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৪০টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে গেছে। সূচি মোটামুটি ঠিকই আছে। পরের ট্রেনগুলোও নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যাবে বলে আশা করছি। ’

প্রতিটি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় লিখে রাখছেন কমলাপুর স্টেশনে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। আনসার কমান্ডার ইয়ার হোসেন জানান, দিনের প্রথম ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস নির্ধারিত ৬টা ৩৫ মিনিটেই সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এর পর থেকে প্রতিটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। শুধু রাজশাহীগামী ‘রাজশাহী এক্সপ্রেস’ দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর ছেড়ে গেছে।

রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদে এক হাজার ৩৩২টি কোচ দিয়ে যাত্রীসেবা দিচ্ছে রেলওয়ে। ঢাকা থেকে ৬০ হাজার এবং চট্টগ্রাম থেকে ১৫ হাজার যাত্রীসহ সারা দেশে প্রতিদিন দুই লাখ ৬৫ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে রেলওয়ের।

বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ, র্যাব ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাদল রয়েছে।

সদরঘাটমুখী ঢল নামবে আজ : ‘অ্যাডভেঞ্চার’ নামের দেশে তৈরি দৃষ্টিনন্দন এক লঞ্চের উদ্বোধনী যাত্রা দিয়েই আজ শুক্রবার থেকে শুরু হবে ঢাকা থেকে দঞ্চিণাঞ্চলগামী ঘরমুখী মানুষের ঢল। সকালে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চটি যাত্রা শুরু করবে বরিশালগামী যাত্রী নিয়ে। ক্যাটামেরান পদ্ধতির এ লঞ্চের পর আজ সারা দিনই যাত্রীর চাপ সামাল দিতে আসবে-যাবে বহু লঞ্চ। যাত্রীদের চাপ শুরু হয়ে গেছে গতকাল বিকেল থেকেই। আজ মূল ঢল শুরু হবে।

গতকাল পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক মোড়ে দেখা গেল রিকশা থেকে নেমে মাথায় ব্যাগ নিয়ে ছুটতে শুরু করলেন এক ব্যক্তি। নাম বললেন নিজামউদ্দিন, যাবেন বরিশাল। পেছনে স্ত্রী আর সাত বছরের মেয়ে। তাদের হাতেও ব্যাগ। হেঁটে কুলাতে পারছে না তারা। রিকশা ছাড়লেন কেন, জানতে চাইলে নিজামউদ্দিন বললেন, ‘সামনে যেই হারে জ্যাম তাতে মনে হয়, এইখান দিয়া টার্মিনাল পর্যন্ত যাইতে রিকশার আরো এক ঘণ্টা লাগব। কিন্তু হাইট্টা গেলে বেশি হইলে লাগব ১০ মিনিট। আগে লঞ্চে উঠতে পারলে জায়গা পাইতে সুবিধা হইব। ’

এ পরিবারটির মতো আরো অসংখ্য মানুষকে মাথায় কিংবা হাতে ব্যাগ নিয়ে ছুটতে দেখা যায় সদরঘাটের দিকে। তারাও আগেভাগে লঞ্চে ওঠার তাড়ার কথা জানায়।

পাটুয়াটুলি ফুট ওভারব্রিজের নিচে পুলিশ থামিয়ে দিচ্ছিল কিছু যানবাহন। কিছু কিছু পরিবহন ঘাট পর্যন্ত যেতে পারলেও বেশির ভাগ মানুষই ওইটুকু পথের যানজট এড়াতে হেঁটেই পৌঁছে যায় ঘাটে। তবে যাত্রীদের হুড়োহুড়ি আর উৎকণ্ঠার অনেকটাই কেটে যায় ঘাটে পৌঁছে। গতকাল থেকে ঈদ যাত্রার বিশেষ ব্যবস্থা শুরু হওয়ায় লঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দূরপাল্লার বেশির ভাগ লঞ্চ কম্পানিই তাদের একাধিক লঞ্চ শিডিউলে রেখেছিল গতকাল। ফলে যাত্রীরা ভাগ হয়ে বিভিন্ন লঞ্চে উঠে পড়ায় তুলনামূলক তেমন চাপ পড়েনি। বরং প্রতিটি লঞ্চই ঈদের সময়ের তুলনায় মনে হয়েছে অনেকটা ফাঁকা। আজ থেকে ঈদের নৌপথের যাত্রীদের চূড়ান্ত ভিড় শুরু হবে বলে জানান লঞ্চের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ সুন্দরবন ১০-এর ব্যবস্থাপক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘মনে হয়, যাত্রীদের তুলনায় আজ লঞ্চ বেশি হয়ে গেছে। বলতে পারেন এটা ভিড়ের মহড়া। আজ (বৃহস্পতিবার) আমাদের কম্পানির দুটি লঞ্চ একসঙ্গে ছেড়ে যাবে বরিশালের উদ্দেশে, অন্যগুলোরও একই অবস্থা। তেমন ভিড় নেই। কাল ও পরশু (শুক্র ও শনিবার) হবে চূড়ান্ত ভিড়। কোনো কোনো লঞ্চ দিনের বেলায়ও বিভিন্ন সময় ছেড়ে দিতে হবে, শিডিউল রক্ষা করা যাবে না। ’

গতকাল সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবনের পাশাপাশি সুরভী, পারাবত, টিপু, কীর্তনখোলাসহ অন্যান্য লঞ্চ সারি বেঁধে অবস্থান করছে। যাত্রীদের নিরাপত্তায় অন্যবারের চেয়ে এবার আরো সতর্ক পদক্ষেপ দেখা যায় ঘাটে। মাইকে বারবার অতিরিক্ত যাত্রী লঞ্চে না ওঠার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কোন ঘাটে কোন লঞ্চ তা মাইকে প্রচার করা হচ্ছে যাত্রীদের সুবিধার জন্য। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের সদস্যরাও সতর্ক অবস্থানে দায়িত্ব পালন করছেন ঘাটে। আছে আনসার ও স্কাউটের টিম।

গতকাল নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এবার ঈদে নৌপথে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিতকরণে একটি বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যে কেউ যেকোনো সমস্যায় ওই কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারবে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর ০১৭১২০৯৯৮৩০ ও ০১৫৫২৪৯৮৯৭৯।

ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট : গাজীপুরে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সকাল থেকে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে থেমে থেমে চলতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানায়, দুর্ভোগ এড়াতে বিপুলসংখ্যক যাত্রী আগেভাগেই রওনা হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল দুপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে কথা হয় যাত্রী ও পরিবহন চালকদের সঙ্গে। শেরপুরগামী ইমাম পরিবহনের চালক রবিউল হোসেন জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে সকাল থেকে থেমে থেমে যানজট চলছে। এক ঘণ্টার পথ দুই-আড়াই ঘণ্টায় পাড়ি দিতে হচ্ছে।

একই অবস্থা ছিল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে। সকাল থেকে মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে কড্ডা, কোনাবাড়ী, সফিপুর, চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর অংশে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করায় যানজট দেখা দেয়।

হাইওয়ে পুলিশ ও যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কালিয়াকৈর রেল ব্রিজের গোড়ায় পৃথক দুটি স্থানে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পুলিশ বিকেলে গাড়ি দুটি সরিয়ে নিলেও মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে যানজট দেখা দেয়।

সালনা হাইওয়ে থানার ওসি কাজী মুহাম্মদ হোসেন সরকার জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে গাড়ি চলেছে। বিকেলে গাজীপুরের বিভিন্ন পোশাক কারখানা ঈদের ছুটি হওয়ার পর গাড়ির চাপ আরেক দফা বেড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল শত শত যাত্রী। কারখানা ছুটি হওয়ার পর দুপুর থেকে সড়কে যাত্রীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। কিন্তু যানবাহন না থাকায় তাদের ভোগান্তি বেড়েছে। যাত্রীর তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা কম থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগও করেছে যাত্রীরা।

চন্দ্রা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অন্যবারের মতো এবার গাড়ির কোনো জট নেই। তবে ঈদে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। বেশির ভাগ যাত্রীই উত্তরবঙ্গে যাওয়ার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। যাত্রী ভরে ঢাকা থেকে যেসব বাস আসছিল সেগুলোতে আসন না পেয়ে অনেকে বাসের ছাদে উঠে যাচ্ছিল। কিছু কিছু বাসকে চন্দ্রা থেকে যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়। উপজেলার শাখা সড়কে যাত্রীবাহী রিজার্ভ বাসগুলোর কারণে শাখা সড়কে সকাল থেকে যানজট দেখা গেছে।

তবে সড়কে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয় সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ, থানা পুলিশ, আনসার সদস্য ও কমিউনিটি পুলিশ সড়কে অবস্থান করছে। যানজট এড়াতে চন্দ্রা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে। কালিয়াকৈর থানার ওসি (তদন্ত) মোহাম্মদ মাসুদ আলম বলেন, দুই-তিন দিন ধরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট নেই। তবে যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম। কারখানার শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে শুরু করায় মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যাচ্ছে। যানজট হলেও তা নিরসনে পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।

মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত জট : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে গতকাল। বুধবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে যানজট লেগেই ছিল। দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা ওভারলোড গাড়ি নিয়ন্ত্রণে অনলাইন স্কেলে টাকা আদায়ে ধীরগতির কারণে রাতের বেলায় যানজট হয়। তবে ভোর থেকে যানজট সহনীয় অবস্থায় ফিরে আসে।

গতকাল মহাসড়কে দাউদকান্দি টোল প্লাজা পার হওয়ার পর মেঘনা-গোমতী সেতুর পশ্চিম পাড় থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার মেঘনা সেতু পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকায় থেমে থেমে যানজট দেখা গেছে। মহাসড়কে চার লেনের গাড়িগুলো মেঘনা সেতু দিয়ে দুই লেন হয়ে ধীরগতিতে চলার কারণে এ যানজটের সৃষ্টি হয়।

গজারিয়া হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ সার্জেন্ট আবুল হাসেম বলেন, অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকায় দুইদিকে চার লেনের গাড়িগুলো মেঘনা-গোমতী সেতু দিয়ে দুই লেন ওঠে। এতে ধীরগাতির কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

মেঘনা সেতুর টোল এলাকা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১১ ঘণ্টায় ৩৫ কিলোমিটার যানজট দেখা যায়। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি শেখ শরিফুল আলম বলেন, ‘অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও কাঁচপুর সেতুর মধ্যে গাড়ি বিকল হওয়ার কারণেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরে আমাদের প্রচেষ্টায় পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। ’

এ মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া অংশে মেঘনা সেতু থেকে বাউশিয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় গতকাল।

ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এস আই মো. হাসেম উদ্দিন জানান, ঘরমুখী মানুষের চাপে গতকাল সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হয়।

তবে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের চিত্র ছিল ভিন্ন। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডাব্লিউটিসির এজিএম শাহ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘গতকাল সকালে ছোট গাড়ির চাপ কিছুটা থাকলেও এখন ঘাট ফাঁকা। যাত্রীবাহী গাড়ি না থাকায় এখন আমরা পণ্যবাহী ট্রাক পার করছি। শুক্রবার (আজ) এ ঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়তে পারে। ’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম পিপিএম বলেছেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিতের যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুটি মহাসড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ঢাকা ও গাজীপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক এবং টাঙ্গাইল, কালিয়াকৈর, দাউদকান্দি, সোনারগাঁ ও মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি)

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন