আগাম ঈদের তামাশা দেখতে নারাজ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা

  24-06-2017 02:52PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ করতে গিয়ে দেশের একটি শ্রেণী দেশের রোজাদারদের সঙ্গে চরম তামাশা করছে। এই তামাশা ধর্মপ্রাণ মুসলমান এবং দেশের প্রচলিত আইন ও রীতি-নীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এরা আগে রোজা রাখুক ঠিক আছে; কিন্তু বাংলার আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার আগে তাদের ঈদ উৎসব উদযাপন চরম ধৃষ্টতা। এটাকে আর চলতে না দেয়া সময়ের দাবি।

চাঁদ দেখে রোজা পালন এবং চাঁদ দেখে ঈদ পালন আমাদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। সে ঐতিহ্য মহানবীর হাদিস-সম্মত এবং মহানবীর দুনিয়ার জিন্দিগিতে করে যাওয়া কার্যক্রম দ্বারা সুবিবেচিত। এ অঞ্চলের বৃহৎ ওলামা কেরামের মতও তাই। চাঁদ দেখে রোজা পালন এবং চাঁদ দেখে ঈদ করাকে প্রষিদ্ধ আলেম সমাজের অভিমত। উপমহাদেশে আলেমদের মতও এমনই।

ফেরকাবাজ ও ফেতনা সৃষ্টিকারী এক দল বিপদগামী মানুষ কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যা নিজের মতো করে দিয়ে নিজেকে যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী-গুণী প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। এতে বেরোজাদার ও বেদীনদের সমর্থন মিলছে শতভাগ। শান্তির ধর্ম ইসলামকে যারা বিতর্কিত করতে চায়, সেসব মিডিয়া ও ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে একাট্টা।
সাহাবীদের সময়ও আরব দেশগুলোয় একদিনে ঈদ হয়নি। বিভিন্ন দিন ঈদ হওয়ার এবং ঈদ উৎসব পালন করার নজির রয়েছে। আর সেটাও হয়েছে মহানবীর নির্দেশিত পথ চাঁদ দেখা সাপেক্ষ। যাতে সাহাবীগণের মধ্যে কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়নি; হয়নি কোনো প্রকার দ্বিমত। অথচ অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর কথিত আলেমরা ফেরকাবাজির আশ্রয় নিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ পালনের মধ্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

সৌদি আরবের সঙ্গে সময়ের অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা যখন আসরে নামাজ পড়ি, তখন তারা পড়ে আশার নামাজ। আমাদের সঙ্গে সে দেশের সাড়ে তিন ঘণ্টার ব্যবধান। আর আমরা তো সৌদি আরবের ইসলামী হুকমতের রাষ্ট্রের অধীন নই যে সে দেশের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ করব। রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরবের অন্তর্ভুক্ত হলে সেটা হয়তো যুক্তি ও তর্কের খাতিরে মানা যেত; কিন্তু আমরা সেটাও নই। আমরা সম্পূর্ণ আলাদা ভূখণ্ডের বাসিন্দা। অতএব সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেলে সেটা আমাদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যায় না।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সেন্দরা-হত্তাপপুর গ্রামের কতিপয় জ্ঞানপাপি কয়েক বছর ধরে এটা করে আসছে। যারা ওই সমাজে গৌণ। সামাজিক ওই কীটরা এর মধ্য দিয়ে রোজা পালনরত মুসলমানদের বিব্রত করছে। রোজার সৌন্দর্য়কে ম্লান করছে। এদের সঙ্গে একই জেলার মতলবে লেংটার অনুসারীরা রোজা না রাখলেও ঈদ কিন্তু করছে। করছে পটুয়াখালী ও ভোলার চরাঞ্চলের কতিপয় ব্যক্তি। পুরো গ্রামের সবাই নয়, নষ্টভ্রষ্ট কেউ কেউ।

দেশের প্রচলিত আইন ও রীতি-নীতি মেনে চলা সুন্নাত। অথচ একদিন আগে ঈদ করার মধ্য দিয়ে তারা সেটা লঙ্ঘন করছে। এটা আইনের দিক দিয়ে অপরাধের শামিল। ধর্মের দিক দিয়েও তাই। যারা এটা করছে বা করে আসছে, তারা তো স্পষ্টতই আমাদের মধ্যে সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিগণিত। সে ব্যাধি দূর করা যাদের দায়িত্ব, তাদের অবহেলায় এই ব্যাধি ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। আর একদিন আগে ঈদের আনন্দে অনেকে তাতে গা ভাসাচ্ছে।

কোনো এক গ্রামের কজন মিলে একদিন আগে ঈদ করাকে মিডিয়া ওই গ্রামের সবাইকে যুক্ত করে সংবাদ পরিবেশন করে থাকে। আর এতে তাদের সংখ্যা ভারী হওয়ার দিকে ইঙ্গিত করা হয়। নামাজ-রোজার প্রতি উদাসীনরা এসব কাজে ওস্তাদ। গ্রামের উচ্ছন্নে যাওয়া কতিপয় এতে যায় হয়তো, আর মিডিয়া পুরো গ্রামকে জুড়ে দিচ্ছে! গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর হওয়ায় মিডিয়ার এমন পাগলামী সহজেই আমাদের চোখে পড়ছে।

দেশের প্রচলিত আইন ও বৃহত্তর ধর্মপ্রাণ মানুষের চিন্তা-চেতনাকে উপেক্ষা করে সৌদি আরবের সঙ্গে যে নরাধমরা ঈদ করছে, তারা মূলত এই দেশ ও জাতির প্রকাশ্য শত্রু। এদেশের অন্ন ধ্বংসকারী বৈকি। সমাজে অনাসৃষ্টিকারীও বটে। আরেক স্পষ্ট করে বললে ইসলামের নামে নৈরাজ্যবাদী। ইসলামের নামে কারা সমাজে এবং দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে- এরা নিজেদের কৃতকর্মের মধ্য দিয়ে তা শতভাগ প্রমাণ করছে। ধর্ম ও সমাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টির হোঁতাদের হয় আইনের আওতায় আনা হোক, না হয় তাদের চিন্তা-চেতনার ধারক সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়া হোক।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন