লন্ডনে অগ্নিকাণ্ড : মা-বাবাকে বাঁচাতে না পেরে তিন বাংলাদেশির স্বেচ্ছামৃত্যু!

  24-06-2017 03:45PM

পিএনএস ডেস্ক : বাবা-মা'কে আগুনে ফেলে রেখে গ্রেনফেল টাওয়ার থেকে বের হয়ে আসতে চাননি তাদের নিহত তিন সন্তান। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও নিজেদের জন্মসূত্র অস্বীকার করতে পারেননি তারা। বৃদ্ধ বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ভবন থেকে নেমে আসার মতো সময় ছিল না; তাই ভবনেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তারা একরকম স্বেচ্ছামৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের যুক্তরাজ্য সংস্করণ এই খবর দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যে বিবেক আর মনুষ্যত্বের এই অনন্য নজির স্থাপন করেছেন গ্রেনফেলে নিহত বাংলাদেশি পরিবারের তিন সন্তান।

১৪ জুন সংঘটিত ওই অগ্নিকাণ্ডে নিখোঁজ তালিকায় থাকা নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক বাংলাদেশি পরিবার। বাবা কমরু মিয়া (৮২), মা রাজিয়া বেগম (৬০) আর দুই ছেলে আবদুল হামিদ (২৯) ও আবদুল হানিফ (২৬) এবং কন্যা হুসনা বেগম ছিলেন ওই পরিবারে। কমরু মিয়ার পৈত্রিক নিবাস মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আকাইলকুড়া ইউনিয়নের কৈশাউড়া গ্রামে। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘটনার দিন রাত ৩টা ১০ মিনিটে এক খালাকে ফোন করে শেষ বিদায় জানান ওই পরিবারের তিন সন্তান। তাকে জানান, অসুস্থ বাবা-মাকে আঠার তলা থেকে নামানো সম্ভব না। তাই নিজেদের পক্ষে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তারা নেমে যাননি।

হামিদ, হানিফ আর হুসনার খালা বিজনেস টাইমসকে বলেন, 'টাওয়ারে আগুন লাগার পর এক ঘণ্টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারত তিন ভাই-বোন। রাত ১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত তাদের বেরিয়ে আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু এই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মা-বাবাকে মৃত্যুমুখে রেখে নিজেরা বাঁচতে চায়নি তারা। বরং একসঙ্গে মৃত্যুবরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

নিহত ভাই-বোনদের চাচাতো ভাই সামির আহমাদ বিজনেস টাইমসকে পরিবারের ছোট ছেলে সম্পর্কে বলেন, ‘হানিফ খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল। টেলিফোনে বলছিলো, তার সময় চলে এসেছে। তাদের জন্য যেন শোক বা বিলাপ করা না হয়। বরং অন্যরা যেন খুশি হন, কারণ তারা একটি অধিকতর ভালো জায়গায় যাচ্ছেন।’ সামির জানান, তাদের বাবা খুব ভালোভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না।

শূন্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন সামির, ‘কী করার ছিল ওদের? নিজেদের বাবা মার কথা না ভাবা?' নিহত ভাইবোনদের সম্পর্কে তার মন্তব্য, ‘ওরা ভীরু ছিল না। মা-বাবার সঙ্গেই থেকেছে। তাদের কাছে পরিবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তারা একসঙ্গে থাকত, একসঙ্গেই মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছে।’

ঠিক করে রাখা হয়েছিল নিহত কমরু মিয়ার কন্যা হুসনা বেগমের বিয়ের দিনক্ষণ। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে লিচেস্টারে তার যৌথ জীবন শুরুর কথা ছিল। সামির আহমাদ জানান, এ মর্মান্তিক ঘটনায় হুসনা বেগমের হবু বর ‘পাগলের মতো’ হয়ে গেছেন। তিনি হাসপাতালগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, ঘরে ফিরতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন