বড় নৌযান উদ্ধারে অক্ষম বিআইডব্লিউটিএ!

  25-06-2017 09:27AM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চারটি উদ্ধারযানের সম্মিলিত উত্তোলন ক্ষমতা ৬২০ মেট্রিক টন। কিন্তু বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী নৌযানগুলোর ওজন ৭০০ থেকে দেড় হাজার মেট্রিক টন। তাই এসব নৌযান দুর্ঘটনাকবলিত হলে বিআইডব্লিউটিএ তা উদ্ধারে অক্ষম।

নৌযানমালিকেরা বলছেন, গত দুই দশকে অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী, পণ্য ও জ্বালানি পরিবহনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন অনেক ভারী নৌযান তৈরি হচ্ছে ও চলাচল করছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি ২০১৪ ও ২০১৫ সালে এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতী নামের যে দুটি যাত্রীবাহী নৌযান নির্মাণ করেছে, নকশা অনুযায়ী এর প্রতিটির ওজন ১ হাজার মেট্রিক টন। বেসরকারি খাতে ঢাকা-বরিশাল ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন পথে চলাচলকারী বিলাসবহুল যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর ওজন ৭০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত।

বাংলাদেশ লঞ্চমালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও ঢাকা-বরিশাল পথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ কোম্পানি সুন্দরবন নেভিগেশনের মালিক সাইদুর রহমান বলেন, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর ৫০০ থেকে ২ হাজার টনের বেশি পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচলে অনুমোদন দিচ্ছে। তাই দুর্ঘটনার শিকার হলে এ ধরনের নৌযান উদ্ধারে আরও উচ্চক্ষমতার উদ্ধারকারী জাহাজ বিআইডব্লিউটিএর থাকা প্রয়োজন।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র বলেছে, তাদের কাছে বর্তমানে মাত্র চারটি উদ্ধারযান রয়েছে। এগুলোর সম্মিলিত উত্তোলনক্ষমতা ৬২০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে হামজা ১৯৬৪ সালে এবং রুস্তম ১৯৮২ সালে সংগ্রহ করা হয়। এর প্রতিটির উত্তোলনক্ষমতা মাত্র ৬০ মেট্রিক টন। পুরোনো ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এ দুটির উত্তোলনক্ষমতা এখন ৪০-৫০ টনের বেশি নেই। ২০১২ সালে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে নির্ভীক ও প্রত্যয় নামের আরও দুটি উদ্ধারকারী নৌযান আনা হয়। এগুলোর প্রতিটির উত্তোলনক্ষমতা সর্বোচ্চ ২৫০ মেট্রিক টন। নৌ-দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালানোর উদ্দেশ্যে রুস্তমকে পদ্মার মাওয়া ঘাটে, প্রত্যয়কে নারায়ণগঞ্জে, হামজাকে আরিচা ঘাটে ও নির্ভীককে বরিশালে রাখা হয়েছে।

২০১৪ সালের আগস্টে পদ্মায় মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে ডুবে যাওয়া এমভি পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি উদ্ধারে নির্ভীক ও প্রত্যয় একযোগে চেষ্টা চালায়। কিন্তু নৌযানটির অবস্থানই এগুলো শনাক্ত করতে পারেনি। গত ২২ এপ্রিল বিকেলে কীর্তনখোলা নদীতে মুখোমুখি সংঘর্ষে যাত্রীবাহী নৌযান গ্রিনলাইন-২ ও কয়লাবোঝাই একটি কার্গো ডুবে যায়। নৌযান দুটিকে উদ্ধারের জন্য বরিশালে থাকা নির্ভীক দুর্ঘটনাস্থলে যায় এবং কয়েক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে ঘাটে ফিরে আসে।

হামজা ও রুস্তমের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, প্রায় জীবনীশক্তিহীন এই উদ্ধারযান দুটি নানা সমস্যায় ভুগছে। দুটিরই জেনারেটর প্রায়ই বিকল থাকে। অন্যদিকে নির্ভীক ও প্রত্যয়েরও নানা সমস্যা। প্রত্যয়ের ক্রেন বার্জের লোড মিটার প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। নির্ভীকে বিদ্যুৎ সরবরাহই দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া উদ্ধারকারী চারটি জাহাজের প্রতিটিতে কমপক্ষে ১০ জন করে ডুবুরি থাকার কথা। কিন্তু হামজার আছে তিনজন, রুস্তমের দুই, নির্ভীকের তিন এবং প্রত্যয়ের আছে দুজন। হামজায় স্যালভেজ সুপারভাইজার, কমপ্রেসর অ্যাটেনডেন্ট ও ক্রেন অপারেটর নেই। রুস্তমেও স্যালভেজ সুপারভাইজার ও ক্রেন অপারেটর নেই। এ ছাড়া চার উদ্ধারযানেরই ওয়্যারলেস অপারেটর, লস্করসহ বিভিন্ন পদে জনবলসংকট রয়েছে। নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি এনে জরুরি মুহূর্তে কাজ চালানো হয়।

বাংলাদেশ নৌ, রেল ও সড়কপথে যাত্রীদের অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি তুষার রেহমান বলেন, প্রায়ই নৌযান দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে। সরকারের উচিত শিগগিরই অধিক উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ধারযান সংগ্রহ করা।

উদ্ধারকাজে বিআইডব্লিউটিএর অক্ষমতার কথা স্বীকার করেন সংস্থার সদস্য (অপারেশন) ভোলানাথ দে। তিনি বলেন, ‘এই বাস্তবতা আমরাও উপলব্ধি করছি। কারণ, আমাদের যে চারটি উদ্ধারযান আছে, তা বড় কোনো নৌযান উদ্ধারে সক্ষম নয়। এগুলো ৬০ থেকে ২০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত কোনো নৌযান উদ্ধার করতে সক্ষম। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ধারযান কেনার জন্য আমরা একটি কমিটি করেছি। এই কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’



পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন