কথা-কাজে মিল না থাকায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না

  25-06-2017 05:10PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় আজ রবিবার সকাল ১০টার দিকে বাসের ধাক্কায় মোহাম্মদ আলী (৪৫) নামের এক কলেজশিক্ষক নিহত হয়েছেন। মোহাম্মদ আলী নোয়াখালীর চৌমুহনীর একটি কলেজের শিক্ষক ছিলেন। এ ঘটনায় জড়িত চালক পালিয়ে গেছেন। তবে চালকের সহকারী মোবারক শরিফকে বাসসহ আটক করা হয়েছে।

যা্ত্রী পরিবহনে কোথাও নিয়ম মানা হচ্ছে না। শৃঙ্খলার কোনো বালাই নেই। যার যার মতো করে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন, বাস, লঞ্চ-স্টিমারে অবাধে উঠছে। অবস্থা দেখে মনে হয় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণে কোরোই যেন কোনো দায় নেই। নেই দায়িত্ব-কর্তব্য। মিডিয়ার সামনে অন্যকে উপহাস, চাপাবাজি আর অতিকথনে ব্যস্ত দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।

দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, এবার ট্রাকে যাত্রী হয়ে কেউ গন্তব্যে যাবে না। কিন্তু সে বক্তব্য যে অসার, রংপুরে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক উল্টে ১৭ জনের মৃত্যু ও ১৫ জন আহতের ঘটনা সেটাই অকাট্য প্রমাণ দিচ্ছে। গাজীপুর থেকে রংপুর যাওয়া পর্যন্ত দায়িত্বশীলদের কারো চোখেই বিষয়টি ধরা পড়েনি। ফলে দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে ১৭টি মূল্যবান প্রাণ অকালে ঝরে যায়।

ঈদে ঘরমুখো মানুষকে নিয়ে যারা বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছেন এবং চাপার জোরে অন্যদের তুলোধুনা করছেন, ২৫ জুন রংপুরে ১৭ জনসহ সারা দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জনের মৃত্যুর দায় তারা কি এড়াতে পারেন? এ লাশের মিছিল কি তাদের ব্যর্থতার দায় নয়। যে ব্যর্থতার জন্য জাতির কাছে ক্ষমতা চেয়ে পদত্যাগ করা সমীচীন; উল্টো ব্যর্থতারই মিডিয়ার বদৌলতে মুখে খই ফুটাচ্ছে!

দলদাশ মার্কা কয়েকটি টিভি চ্যানেল কদিন ধরে প্রচার করছে ‘দীর্ঘ যানজট, ধীরে ধীরে যান চলছে। ভোগান্তি নেই।’ যানজট দীর্ঘ হলে ভোগান্তি হয় না- সেটা কি বিশ্বাসযোগ্য। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গুটি কতক ছাড়া দেশময় খানাখন্দে ভরা সড়কগুলো দুর্ঘটনার আকরে পরিণত হলেও এগুলো মেরামতে কার্যকর উদ্যোগ নেই। অভিজ্ঞ মহলের মতে, মাঝেমধ্যে মেরামতের নামে লিপিস্টিক দেয়া হয়, একটু বিষ্টিতেই যা ধুয়ে-মুছে যায়।

আজকে অবশ্য নিউজ টুয়েন্টিফোর নামক একটি মিডিয়া যানজটে ভোগান্তির বিষয়টি তাদের স্ক্রলে দিয়েছে। আরেকটি মিডিয়ায় একজন মহিলা বলেছেন, ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ধীর্ঘ ৬ ঘণ্টা বসে থাকার বিষয়টি। একই রকমভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেনে যানজট যাত্রী সাধারণকে নাকাল করছে। বিশেষ করে ব্রিজগুলোর দুপাশে অসহনীয় যানজট নিত্যদিনের ঘটনা।

যানজটের বাইরে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি একরকম ওপেন সিক্রেট হলেও তা নিয়ে যাত্রী ছাড়া আর করোই যেন মাথা ব্যথা নেই। বলা হয়েছিল অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হলে গাড়ির রুট পারমিট বাতিল করা হবে… ইত্যাদি। ছাদে অবাধে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। মই দিয়ে ট্রেনের ছাদে যাত্রী উঠছে। মহিলারাও ছাদে উঠা থেকে বাদ নেই। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রীর দিকে তাকালে যে কারো মাথা ঘুরে যাবে। নিয়মের ব্যত্যয় সর্বত্র চোখে পড়লেও দায়িত্বশীলরা নিজের অপারগতার জন্য লজ্জিত না হয়ে বরং বড় বড় বুলি আওড়াচ্ছে। ছিঃ

২৪ জুন ফেইসবুকে একটি দৃশ্য চোখে পড়ে। একটি পুরনো লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাস। ভেতরে ও ছাদে অসংখ্য যাত্রী। কজন বাসটিকে ধাক্কাছে! দৃশ্যটি চোখে পড়ামাত্র সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর চেহারা মনের আয়নায় ভেসে ওঠে। মনে পড়ে বিআরটিএর দায়ও। পাঠকদের জন্য সে বাস ও ধাক্কার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করব। ফেইসবুকে ওই চিত্র দেখে একজন বেরসিক মন্তব্য করেন, সড়ক ও সেতু মন্ত্রীর বাসটি ধাক্কালে মন্দ হতো না।

খোদ রাজধানীতে মোহাম্মদ আলী (৪৫) নামে এক কলেজশিক্ষক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। সদরঘাটে দুটি লঞ্চের ধাক্কায় ২৪ জুন এক যাত্রী পানিতে পড়ে আজও নিখোঁজ। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে লঞ্চগুলোয় দুর্ঘটনার আশঙ্কা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে কার্যকর ও ফলপ্রসূ উদ্যোগের অভাবে জীবন বাজি রেখে যাত্রী সাধারণ স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ করতে যাচ্ছে। এই আনন্দ যেন নিরানন্দের কারণে পরিণত না হয়, এগুলো যাদের দেখায় দায়- তারা কোথায়? এখনো সময় আছে সতর্কপদক্ষেপ গ্রহণের।


লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন