চাঁদ দেখা গেছে, সোমবার খুশির ঈদ

  25-06-2017 10:04PM


পিএনএস ডেস্ক: শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সোমবার যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।

রবিবার সন্ধ্যায় প্রথমে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আকাশে চাঁদ দেখা যায় বলে জানিয়েছে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি।

সন্ধ্যায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক থেকেও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো এক মাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে।

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে।

রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শায়খুল হাদীস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান।

রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকবৃন্দ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। ঈদগাহে মহিলাদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে।

ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখে চলেছেন। সাদা পোশাকে র্যাব এবং পুলিশ সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া ঈদগাহ পরিদর্শন করে জানান, জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মুসল্লিদের প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাগ বা অন্য কিছু নয়, শুধু জায়নামাজ সাথে নিয়ে মুসল্লিরা জামাতে আসবেন। ব্যাগসহ ঈদগাহে ও জাতীয় মসজিদে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

ডিএমপি পুলিশ কমিশনার বলেন, রাজধানীর প্রায় ৫শ’ স্থানে ছোট-বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেসব জায়গায় ঈদ জামাত হবে, সেসব স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব স্থানেই পোশাকে ও সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা থাকবে বলেও তিনি জানান।

এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারো ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এর পরপর বায়তুল মোকাররম মসজিদে আরো ৪টি জামাত হবে যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও পৌনে ১১টায়।

বায়তুল মোকাররমের প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন এ মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয়টিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান, তৃতীয়টিতে জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাশেম, চতুর্থটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির ধর্মীয় প্রশিক্ষক মাওলানা জাকির হোসেন এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইমামতি করবেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম মসজিদে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠেয় ঈদ জামাত দেশের প্রধান ঈদ জামাত হিসেবে গণ্য হবে।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিগণ জামাতে অংশ নেবেন।

ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহে ৪/৫টি করে মোট ৪০৮টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিআয় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের ইমাম খতিব হাফেজ নাজীর মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মেইন গেইট সংলগ্ন মাঠে এবং শহীদুল্লাহ হল লনে সকাল ৮টায় পৃথক দু’টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতি বছরের মতো এবারো কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানেও ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

গত ঈদুল ফিতরে জঙ্গি হামলার পরও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত। তাই এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চলছে ঈদ জামাতের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এবার ১৯০তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে শোলাকিয়ায়। প্রতিবছরের মতো এবারো জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। জামাতে ইমামতি করবেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ। সকাল পৌনে দশটা থেকে বৃহত্তর এ জামাতটি সরাসরি সম্প্রচার করবে চ্যানেল আই।

শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও পৌরসভা শোলাকিয়ার জামাতকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। জামাতের প্রস্তুতি ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো দেখতে জেলা প্রশাসকসহ র্যাব-পুলিশ ও বিজিবির কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ। তারা দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রবিবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করবে। বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে টানা ৭ দিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ঘোষণা দিয়েছে। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করছে।

ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

এছাড়া ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয়নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগ এবং নগরী জুড়ে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় কর্মসূচি ও নিজ নিজ কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন