বন্যার পানি কমার সময় যা করণীয়

  18-07-2017 05:29PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দেশের বড় একটা অংশ বন্যা তলিয়ে দিয়েছে। কিছু এলাকায় বন্যার পানি কমলেও সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে বন্যার পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
এপ্রিলে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় ব্যাপক ফসলহানির পর চলতি জুলাই মাসে দেশের বিরাট এলাকাজুড়ে বন্যা শুরু হয়। পাহাড়িঢল, অতিবর্ষণের ফলে বন্যার সূত্রপাত। উজান থেকে নেমে আসা পানিও এ জন্য কম দায়ী নয়। ভারতের বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ কেটে দেয়ায় দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বলে পানি বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তাই তারা এটাকে মানবসৃষ্ট বন্যা বলেও মন্তব্য করছেন।

বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক এলাকায় নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি মসজিদ, মাদ্রাসাসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। বন্যায় কষ্টের ফসল হারানোর পাশাপাশি ঘর-বাড়ি হারিয়ে কৃষকসমাজ মহাবিপকে পড়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের অভাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা একরকম মানবেতর জীবন যাপন করছে। আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত নানান রোগে। এর মধ্যে খোসপাচড়া, আমাশয় ও পেটের পীড়া অন্যতম। কোথাও কোথায় ডায়রিয়া দেখা দিয়েছে।

রোগ-বালাইতে শুধু মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে না, এ থেকে গবাদিপশুও বাদ যাচ্ছে না। পাতলা পায়খানা থেকে শুরু করে খুরা রোগে ভুগছে গরু ও মহিষ। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি চলে গেলে নতুন গজানো ঘাস খেয়ে গরু-মহিষের রোগ-বালাই আশঙ্কাজনক হারে দেখা দিতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসকদের আগাম পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

অনেক পানি বিশেষজ্ঞের মতে, এবারের বন্যা সহজে কাটবে না। এটা নানাভাবে অন্য এলাকাও গ্রাস করতে পারে। এমনকি রাজধানী ঢাকা না হলেও ঢাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এমনিতে মুষলধার একটু বৃষ্টিতে ঢাকা নৌ-চলাচলে উপযোগী হয়, বন্যায় সেটা কী রূপ নেয়, সেটা ভেবে কূল পাচ্ছেন না সচেতন মানুষ। শ্রাবণ ও ভাদ্র মাস না যাওয়া পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বন্যা নিয়ে আগাম প্রস্তুতি রাখা জরুরি বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।

এপ্রিলে হাওরাঞ্চলের সাত জেলার পর কক্সবাজার, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর ও নেত্রকোনায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে জেলাগুলোর শাকসবজির পাশাপাশি আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভেসে যায় মাছের খামার। এতে কৃষক ও জেলে সম্প্রদায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফসলের এই ক্ষতি আগামী দিনে প্রভাব ফেলবে চালের বাজারে। এমনিতেই এপ্রিলে হাওরাঞ্চলের সাত জেলায় ফসলহানির কুফল ভোগ করছে দেশবাসী।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর নাম ইতিমধে সবার কমবেশি জানা হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পরিসংখ্যান আছে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা অফিসগুলোয়। নিয়ম অনুযায়ী যা চলে আসবে সচিবালয়ে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নপূর্বক জরুরি ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। সে সময়ের দাবি পূরণে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশা কৃষি, স্বাস্থ্য ও প্রাণিসম্পাদ মন্ত্রণালয়কেও সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন