যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে

  20-07-2017 11:13AM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানী ঢাকায় বিগত ১০ বছরে যান চলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে সাত কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে, যা হেঁটে চলার গড় গতি থেকে একটু বেশি। এর ফলে ঢাকার যানজটে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি মনে করে, স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে নিয়ে যাওয়ার যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেজন্য ঢাকার শহরের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চাবি হচ্ছে একটি আধুনিক ঢাকা। এজন্য এখনই সঠিক পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা নিতে হবে অন্যথায় দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে পূর্ব ঢাকাও যানজট ও বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়বে। যা স্থানীয়দের বন্যা ও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে।

বুধবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক আয়োজিত 'টুওয়ার্ডস গ্রেট ঢাকা : এ নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইস ইস্টওয়ার্ড' শীর্ষক খসড়া প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মার্টিন রামা, ভারতের দিলি্লর সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, চীনের সাংহাইয়ের সাবেক ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র, উচ্চপর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, নগর পরিকল্পনাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বেসরকারি খাতের নেতারা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অঙ্ফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি ভেনাবল্স ২০৩৫ সালের দিকে ঢাকার উন্নয়নের জন্য চারটি বিকল্প কর্মপন্থাও উপস্থাপন করেন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৩৬ শতাংশ শহরাঞ্চলের মানুষ বৃহত্তর ঢাকায় বাস করে। বাংলাদেশের এই রাজধানী পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর। ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ঢাকার রাস্তা পাঁচ শতাংশ, জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ এবং যান চলাচল ১৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ যানজট ও বাসযোগ্যতার পরিবেশের আরও অবনতি ঘটাবে এবং বাসিন্দাদের বন্যা ও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এলোমেলো নগরায়ণের ফলে ঢাকা শহরের উন্নয়ন ধারাবাহিক বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। যথেষ্ট পরিকল্পনার অভাবে ঢাকা শহরে ঘনবসতি, নিম্নমানের জীবনযাত্রার পাশাপাশি ভূমিকম্প ও বন্যার জন্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ৩৫ লাখ বস্তিবাসীসহ শহরের আরও অনেক অধিবাসী তাদের মৌলিক চাহিদা এবং পর্যাপ্ত অবকাঠামো থেকে বঞ্চিত।

বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকার নগরায়ণ কেন্দ্র থেকে উত্তর দিকে এবং এরপর পশ্চিমাভিমুখে সমপ্রসারিত হয়েছে। মহানগরীর পূর্ব দিকে বেশিরভাগ এলাকা এখনও গ্রামীণ তবে দ্রুত বিকাশের সুযোগ রয়েছে। মহানগরীর প্রায় ৪০ শতাংশের সমান পূর্ব ঢাকা এই এলাকা গুলশানের মতো সমৃদ্ধ এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্ব ঢাকাকে নানা সুবিধাসহ বিভিন্ন কর্মকা-ের একটি প্রাণচঞ্চল কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব যা মূল শহরের অন্য অংশের ভিড় ও যানজট কমাতে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিকল্পনার মাধ্যমে যদি পূর্ব ঢাকাকে গড়ে তোলা যায় তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঢাকার এই অংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। অন্যথায় পূর্ব ঢাকাও খুব দ্রুত অপরিকল্পিত নগরায়ণের মাধ্যমে বসবাসের অনুপযোগী হবে এবং বন্যা ও ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকবে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়াবে তিন কোটি ৫০ লাখে। বিপুল এ জনসংখ্যাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে উৎপাদনশীল ও বাসযোগ্য মহানগরী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলা সম্ভব হবে। এটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তিনি বলেন, উন্নত মহানগরীর পূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ঢাকাকে নিয়ে অবশ্যই সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সব সংস্থার কাজের সমন্বয় সাধন এবং বিনিয়োগের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বিশ্বব্যাংক ঢাকাকে সমৃদ্ধ মহানগরী হিসেবে রূপান্তরে সহায়তা করতে সর্বদা প্রস্তুত।

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত মহানগরীর উদাহরণ টেনে সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মার্টিন রামা বলেন, পূর্ব সাংহাইয়ের পুডং এলাকা ও অন্য স্থান প্রমাণ করে যে, যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে যানজট নিরসন সম্ভব। এর মাধ্যমে সেখানকার অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির পাশাপাশি বসবাসের উন্নত পরিবেশও নিশ্চিত করা সম্ভব। এছাড়া ঢাকার বিশাল ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিবেচনায় যথাযথভাবে পূর্ব ঢাকার টেকসই উন্নয়ন, অত্যধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে রেট্রোফিট টেকনোলজি (এমন একটি প্রযুক্তি যেটা দিয়ে পুরনো ভবন না ভেঙে যথাযথ শক্তিশালী করা) ব্যবহার করা। এ প্রযুক্তি অনেক বেশি কার্যকর এবং অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভজনক। এখনই এ কাজ করার সঠিক সময় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ভারতের দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত এবং চীনের সাংহাইয়ের সাবেক ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও সম্মেলনকালে দিলি্ল ও পূর্ব সাংহাইয়ের পুদং এলাকার উন্নয়নের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। ওই দুই মহানগরীর একাধিক মন্ত্রণালয় ও সংস্থা থেকে প্রাপ্ত তথ্য সমন্বয়ের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নত ঢাকা গঠনে তাগিদ দেন বক্তারা।

মূল প্রবন্ধে এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকায় জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার জনসংখ্যা ৩ কোটি অতিক্রম করবে। সামনে এ মহানগরীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটাতে সরকার সব সেবা সংস্থাগুলোকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
বক্তরা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার ভিশন অর্জনে ঢাকার নগরায়ণ বৃদ্ধি অবশ্যই দক্ষতার সঙ্গে কার্যকর করতে হবে। অবস্থানগত কারণে এটি পূর্ব ঢাকার পূর্ণ সুবিধাসহ করতে হবে, যে স্থানটা নগরীর কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি এবং প্রচুর ভূমি পাওয়া সহজসাধ্য। এতে নগরীর অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে এবং সেটা বসবাসের জন্যও সহায়ক হবে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন