রাজধানীতেও নৌকায় ভরসা [ভিডিওসহ]

  26-07-2017 04:45PM

পিএনএস, নিজস্ব প্রতিবেদক : টানা বৃষ্টিতে জলজট আর যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। গত রাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও আজ বুধবার সকাল থেকে প্রায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষের কষ্ট সীমা ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার মতো শহরে, যেখানে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অতিশয় দুর্বল, সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র দুর্ভোগ। ফলাফল হিসেবে দেখা যাচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী জলজট এবং অবধারিত যানজট।
এর আগে চট্টগ্রামের কর অঞ্চল-৪ এর কর্মকর্তাদের নৌকা কেনার খবরও সংবাদ মাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছে। বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও কর্মস্থলে আসতে যেতে চট্টগ্রামে অনেকেরই এখন ভরসা নৌকা। এবার রাজধানীতেও নৌকায় ভরসা।



নৌকায় যাতায়াত করছে রাজধানীর যাত্রাবাড়ির শনিরআখড়া, শেখদী, ভাঙ্গাপ্রেস, দনিয়া, মাতুয়াইল এলাকার মানুষ। জনজীবন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। এলাকার অফিসগামী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী যাতায়াত করতে পারছে না। অল্প কিছু নৌকার ব্যবস্থা থাকলেও ভাড়া হাক্কাছে অনেক বেশি। এলাকার প্রতিটি ঘরের মধ্যে তিন ফুট পানি রয়েছে। মো. শ্যামল ইসলাম রাসেল বলেন, বাসায় রান্না করতে পারছে না, হোটেলে গিয়ে দেখেন সব দোকান বন্ধ রয়েছে। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছু খেতে পারেন নি। ময়লা-আর্বজনায় জনস্বাস্থ্য রয়েছে বিপর্যয়ে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অহরহ শিশু।

সিলেট বিভাগীয় চাকরিজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন সোহেল ফেসবুকে লিখেন পানি আর পানি। ৩০/- টাকার রিকশা ভাড়া ১০০/- টাকা দিলাম। তাহাও অনেক অনুরোধের পর।বৃষ্টির কারণে কোনো রিকশা পাওয়া যাচ্ছিল না। কেউ রাজি হলেও দ্বিগুণ ভাড়া চান। বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে আর গর্তের কারণে নাজেহাল হতে হয়েছে। বিশেষ করে মালিবাগ-মৌচাক এলাকার রাস্তার যে অবস্থা হয়েছে, তাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই এলাকা পার হতে হচ্ছে।

বৃষ্টির কারণে রাজধানীর প্রায় অধিকাংশ সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। ঘর থেকে বের হয়েই পড়তে হয়েছে দুর্ভোগে। যানবাহনের সংকটের কারণে অনেকেই হেঁটে রওনা দেন কর্মস্থলের দিকে। সুযোগ বুঝে রিকশাওয়ালা ও সিএনজিচালকেরা ভাড়া হাঁকেন দ্বিগুণেরও বেশি। বাধ্য হয়ে তাঁদের দাবিই মেনে নিতে হয় যাত্রীদের। বৃষ্টির ভোগান্তির পাশাপাশি রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকদের এমন ব্যবহারে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
মুগদা থেকে কারওয়ান বাজারে যাচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় বইয়ে পড়েছিলাম ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাঁতরে দামোদর পার হওয়ার কথা। আর আজ অনেকটা সেভাবেই অফিসে যেতে হচ্ছে। কিছু দূর বাসে করে এসে পরে পানির জন্য একটি ভ্যানের ওপর দাঁড়িয়ে বাকি রাস্তা পার হতে হয়েছে।’

এদিকে বৃষ্টির পাশাপাশি যানজট ভোগান্তির মাত্রা বাড়িয়েছে আরও কয়েক গুণ। সকাল সাতটা থেকেই রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও ধানমন্ডি এলাকা ছিল যানজটের কবলে। ওই সব এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী ব্যক্তিগত গাড়ির চাপে স্থবির হয়ে পড়ে সড়কগুলো। অনিরুদ্ধ রনি নামের একজন জানান, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে সকাল সাতটা থেকেই গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাত মসজিদ সড়কসহ আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলোও ছিল চরম যানজটের কবলে। মোটরসাইকেলে করেও মাত্র চার কিলোমিটার রাস্তা যেতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।

বৃষ্টিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে প্রায় হাঁটুসমান জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সচিবালয়ের কর্মী ও দর্শনার্থীরা। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তা থেকেই ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা যায়। ফটকের সামনেও একই চিত্র। কোনোমতে ফটক পর্যন্ত এলেও এরপর চলাচলের পথটা পানিতে একদম ডুবে গেছে। সচিবালয়ের ভেতরের প্রাঙ্গণও ডুবে রয়েছে।

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের অনেকটা এলাকাজুড়ে পানি জমে যাওয়ায় মিরপুর, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে আসা ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ওই সড়কে না গিয়ে সোজা যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে মিরপুর সড়কে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় আসাদগেট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চরম যানজট।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর ও মিরপুর রোডের সংযোগ সড়কে প্রায় বুকসমান পানি জমে গেছে। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর গ্রিন রোডে অনেক জায়গায় দুই ফুটের ওপরে পানি জমেছে। ফলে হেঁটে চলাচল করাও অনেকটা অসাধ্য হয়ে পড়েছে ওই সড়কে। এ ছাড়া মিরপুর, বাড্ডা, রাজারবাগ, পুরান ঢাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত পানি জমে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কাল বৃহস্পতিবার বৃষ্টি কমে যেতে পারে। এর লক্ষণ দেখা যেতে পারে আজ বুধবার দুপুরের পর থেকে।
এদিকে আজ সকাল থেকে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলো থেকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ১৮ জুলাই থেকে এই সংকেত দিয়ে রেখেছিল আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৩ নম্বরের বদলে এখন শুধু নৌবন্দরগুলোতে ১ নম্বর সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন