স্বশিক্ষিত এমপি প্রার্থীদের সনদ চান ইসির কর্মকর্তারা

  27-07-2017 01:56AM

পিএনএস : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বশিক্ষিত প্রার্থীরা কোনো সনদই দেন না। স্বশিক্ষিত হলে এবার সনদ দেওয়ার বিধান করার প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মাঠ কর্মকর্তারা। গতকাল বুধবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের প্রথম বৈঠক এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার আবারও বৈঠক বসার কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের গতকালের বৈঠকে ভোটে কর্তৃত্ব রাখতে ইসি সচিবালয়ের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পেতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে সংস্কার আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে আমলাদের ভোটে আসতে নিষেধাজ্ঞা পাঁচ বছর, সশস্ত্রবাহিনীকে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংজ্ঞায় আনা, প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারকে দেওয়া, আচরণবিধি লঙ্ঘনে হাকিমদের মতো ক্ষমতা দেওয়া, জামানতের টাকা বাড়ানো, স্বশিক্ষিত হলেও সনদ দেওয়ার বিধান এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে তদারকি করতে নির্বাচনী আইনের সংস্কারের সুপারিশ করেন ইসি কর্মকর্তারা।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) অন্তত ৩৫টি অনুচ্ছেদে সংস্কার আনতে মাঠ কর্মকর্তারা একগুচ্ছ প্রস্তাব দেন।
আইন সংস্কার সংক্রান্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম। গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, মাঠপর্যায়ের মতামতগুলো আমরা নিয়েছি। যারা এগুলো ফেস করে তারাই কিন্তু বলতে পারবে, কোন কোন জায়গায় সংস্কার দরকার। মতামতগুলোর যেটা যুক্তিসঙ্গত মনে হবে, নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহজকরণ করবে, যুগোপযোগী করবে শুধু সেই বিষয়কেই সিলেক্ট করব। রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সংলাপে বিষয়গুলো তুলে ধরা হবে। তিনি বলেন, আমরা খসড়াটা চূড়ান্ত করব। তারপর আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করব।

আরপিও এর অনুচ্ছেদ-২ এ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রয়েছে। এর পক্ষে যুক্ত হচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ যুক্ত হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে ইসির নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান হবে।

স্বশিক্ষিতের নতুন সংজ্ঞায়নের প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় বলা হয়, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে হলফনামায় সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অনেক প্রার্থী স্বশিক্ষিত উল্লেখ করলে কোনো প্রকার সনদের কপি দেন না। বিষয়টি স্পষ্ট করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত থাকেন ভোটের সময়। ইসির সরাসরি নিয়ন্ত্রণের সুবিধার্থে আইন সেলের মাধ্যমে ‘ইলেকটরাল ম্যাজিস্ট্রেট’ নাম দিয়ে তাদের নিয়োগ করা যায়। এতে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদেরও প্রশিক্ষণ দিয়ে দায়িত্ব দেওয়া যাবে।

অনুচ্ছেদ ৭-এ ইসি কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, কোন কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হবে তা উল্লেখ নেই। সরকারি কর্মকর্তা বা ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের জন্য সংযোজন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক নির্বাচনী এলাকার জন্য ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ এবং কোনো ব্যক্তিকে দুই বা ততোধিক এলাকার জন্য নিয়োগ দিতে পারবেন। একই সঙ্গে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের বিধান করা যেতে পারে।

অনুচ্ছেদ ১৩ এ প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজারের প্রস্তাব করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৪ এ মনোনয়ন দাখিল থেকে ভোট পর্যন্ত কেউ অসত্য তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা রিটার্নিং অফিসারকে দেওয়া যেতে পারে।

অনুচ্ছেদ ৩৮ সমভোট প্রাপ্তদের মধ্যে বিজয় ঘোষণায় লটারি প্রথা বাতিল করে পুনঃভোট আয়োজনের প্রস্তাব কর্মকর্তাদের।

রাজনৈতিক দল নির্ধারিত সময়ে ব্যয় বিবরণী দিতে ব্যর্থ হলে জরিমানা ১০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ইসির আইন সংস্কার, তালিকায় নেই আইনজীবীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন সংস্কার, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, দলের নিবন্ধন, ভোটকেন্দ্র স্থাপনসহ সাতটি বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে ইসির পরামর্শ গ্রহণ শুরু হবে। কিন্তু যে সংলাপে আইন সংস্কার অন্যতম বিষয়, সেখানে আইনজীবীদের সঙ্গে আলাদা করে বসছে না সংস্থাটি।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি নিজে থেকেই সংলাপে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি এই মর্মে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে একটি আবেদনও জানিয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন