চাল নিয়ে আর কত চালবাজি?

  19-08-2017 04:11PM

পিএনএস ডেস্ক : চালের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। কেন বাড়ছে? কারও সংরক্ষণে কি চাল নেই? মিলারদের মিলে কি চাল নেই? ব্যবসায়ীদের গুদামে কি চাল নেই? চাল কি তবে ঝড়ে উড়ে গেল যে দেশের বাজারে চালের ঘাটতি পড়েছে? আসলে চালের দাম বেড়েছে এবং বাড়ছে শুধু হুজুগে।

ওই যে ওরা শুনেছে দেশের পূর্বাঞ্চলের সবক’টি হাওর ডুবে সেখানকার অর্ধেকের বেশি বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে হাওরাঞ্চল থেকে বোরো সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে। তাছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান শস্যভা-ার চলনবিলও অকাল বন্যার শিকার। তাই চালের দাম আরও বাড়াবে।

ক’দিন আগে খবরে প্রকাশ, চলতি মৌসুমে অকাল বন্যায় প্রায় সবক’টি হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত জেলায় ৩৭৩টি হাওরের জমির পরিমাণ প্রায় ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬১ হেক্টর। এদিকে বন্যায় সুনামগঞ্জের ২ লাখ ৬৮ হাজার ৫৩১ হেক্টর, হবিগঞ্জের ১ লাখ ৯ হাজার ৫১৪, নেত্রকোনার ৭৯ হাজার ৩৪৫, কিশোরগঞ্জের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪৩, মৌলভীবাজারের ৪৭ হাজার ৬০২, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৯ হাজার ৬১৬ হেক্টর হাওরের জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে সাত জেলায় প্রায় ৩ কোটি মানুষ এখন বিপর্যয়ের মুখোমুখি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৬৮ হাজার টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। এটা তার আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ ৫৮ হাজার টন বেশি। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চাল উৎপাদনের লক্ষ্য ৩ কোটি ৫০ লাখ টন। এ কারণে এক বছরে জন্যসংখ্যা যতটা বৃদ্ধি পাবে, চালের ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং যারা চালের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী, তারা ‘পূর্বাঞ্চলের হাওরে বোরোর ফসল ডুবেছে’- এজন্য দাম বাড়ায়নি, দাম বাড়িয়েছে তাদের নিজের স্বার্থকে লালন করতে।

চালের দাম বৃদ্ধির কিছু কিছু প্রমাণ তো দৃশ্যমান সবসময়। যখন রমজান কাছে আসে, তখন অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।

এটা দৃশ্যমান বাস্তবতা। রমজানে পণ্যদ্রব্যের দাম এমন হু-হু বাড়ে কেন? প্রশ্নের জবাব আছে? নেই। সুতরাং চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাওর ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে কারসাজি নামের নাটকই করছেন।

অনেকখানে ধান কাটা-মাড়াই হলে দেশের বাজারগুলোয় নতুন মৌসুমের চাল থাকে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বা খবর থেকে জানা যায়, পুরনো চালের সরবরাহও বেশ ভালো রয়েছে। তারপরও পাইকারি বলুন আর ও খুচরা- সব বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। প্রশ্ন হলো, বাজারে চালের সরবরাহ ভালো থাকলে সে চালের দাম বাড়ে, না কমে? নিশ্চয়ই দাম কমে যাওয়ার কথা। না কমুক, স্থিতিশীল থাকার কথা। কিন্তু এমনটির একটিও নেই এখন চালের বাজারে।

বরং চালের বাজারে শুধু দাম বাড়ছে আর বাড়ছে। তাই চালের বাজারে অস্থিরতা বলে কিছু নয়, এর পেছনে অসাধু সিন্ডিকেটের ইশারা। অসাধু ব্যবসায়ীরা যে কোনো সময় কারসাজি করে চালের দাম বাড়াতে পারেন। তাদের কোনো ইস্যু লাগে না। আর হাওর ডুবে যাওয়া তো তাদের জন্য এখন বড় ইস্যু হিসেবে কাজ করছে। তারা এখন চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে আর চালের দাম বাড়াবে, নিজের পুঁজি বাড়াবে।

বিদেশ থেকে চাল আমদানি সত্ত্বেও চালের দাম বাড়ছে কেন? কেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ঘামের অর্জন শুধু চাল কিনতেই ব্যয় করতে হবে? অসাধুদের অসৎ পথ অবলম্বন তাই কখনোই কাম্য নয়। আমাদের দেশের প্রধান খাদ্যই হচ্ছে ভাত। আর চাল থেকেই ভাত পাই আমরা।

তাই চাল নিয়ে এত চালবাজি জনসাধারণের কখনোই প্রত্যাশা নয়। মিলারদের কাছে চালের কোনো মজুদ আছে কিনা, তা যাচাই করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ অভিযান চালাতে পারে। কিছু বিবেকবর্জিত ব্যবসায়ীর কাছে জাতি যেন জিম্মি না থাকে, যাতে তারা বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে না পারে, সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে। চাল নিয়ে আর কোনো চালবাজি নয়।-সৌজন্যে আলোকিত বাংলাদেশ

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন