বাংলাদেশী অভিবাসীদের আটক না করতে ভারতের প্রতি এএইচআরসি’র আহ্বান

  20-08-2017 04:44AM



পিএনএস ডেস্ক: বাংলাদেশী অভিবাসীদের অবৈধভাবে আটক বন্ধ করতে ভারত সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি)।

নিজস্ব ওয়েবসাইটে পোস্ট করা এক প্রতিবেদনে এমন আহ্বান জানিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে যাদেরকে পাচার করা হয় এর পিছনে কে বা কারা রয়েছে তা ভালভাবে জানতে দু’দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ গবেষণা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

‘ইন্ডিয়া/বাংলাদেশ: স্টপ দ্য আন ল’ফুল ডিটেনশন অব বাংলাদেশী মাইগ্রেন্টস’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ১৮ আগস্ট।

এতে বলা হয়, এ বছর মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুর থেকে বিএসএফের কর্মকর্তারা এক টিনেজকে আটক করে। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পশ্চিমবঙ্গের অঙ্গ সংস্থা মাসুম এ বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়।

তাতে দেখা যায়, ওই টিনেজের পিতা প্রায় দেড় বছর আগে দালালের সহায়তায় ভারত গিয়েছেন কাজের সন্ধানে। ওই টিনেজকেও দালালরা জানায় ভারতে তার পিতা অসুস্থ। এ কথা বলে তারা ১০ বছর বয়সী এই বালককে নিয়ে যায় সীমান্তে।

৩০ মে সে দালালের মধ্যস্থতায় সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করে। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি সীমান্তে তাকে আটক করে বিএসএফ। একই দিনে তাকে বালুরঘাট পুলিশ স্টেশনে হস্তান্তর করা হয়।

ওই বালকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়। তাকে রাখা হয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে।

পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগর জেলার দত্তপাড়া গ্রাম থেকে পুলিশ ২০ জুন আটক করে ২২ থেকে ৫৫ বছর বয়সী চার বাংলাদেশী নারীকে। তাদেরকেও দালালরা সীমান্ত পাড় করে দিয়েছে। তাদেরকে আটক করার পর ১৪ দিনের জন্য পাঠানো হয় দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। তারপর থেকে তারা সেখানেই আছে।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকায় যেভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এ দু’টি ঘটনা হলো তার উদাহরণ।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের বহু মানুষের কাছে নিজের দেশের মতো ভারত। তাদের অনেকেই ভারতে যান অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে কাজ পেতে। বর্তমানে যেসব বাংলাদেশী অভিবাসীকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে আটক করা হয়েছে এবং ফরেনার্স অ্যাক্টের অধীনে তাদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, এটা সবারই জানা যে, এসব ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’দের মধ্যে বহু সংখ্যক পাচারের শিকার। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। তাদেরকে ভাল বেতনে শ্রমিক বা যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করা হয়। বিপন্ন এসব মানুষের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে ভারত সরকার পাচার হওয়া বৈদেশিক নাগরিককে সুরক্ষা দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।

এ বিষয়ে ২০১২ সালের মে মাসে একটি সমঝোতা স্বারক ইস্যু করা হয়। এর শিরোনাম ‘এডভাইজরি অন প্রিভেন্টিং অ্যান্ড কমব্যাটিং হিউম্যান ট্রাফিকিং ইন ইন্ডিয়া- ডিলিং উইথ ফরেন ন্যাশনালস’।

এতে বলা হয়, যদি দেখা যায় বিদেশী কোনো ব্যক্তি পাচারের শিকার হয়েছেন বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া তাহলে বিষয়টিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখতে হবে। অনুসন্ধানের পর যদি দেখা যায় সংশ্লিষ্ট নারী বা শিশু শিকারে পরিণত হয়েছেন তাহলে তাদেরকে ফরেনার্স অ্যাক্টের অধীনে বিচার করা যাবে না।

যদি দেখা যায় তিনি ভারতে তার নিজের ইচ্ছায় যান নি বা কোনো অপরাধে জড়িত নন তাহলে সরকার তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে না। যদি দেখা যায় ফরেনার্স অ্যাক্ট ও অন্য সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে ঘটনার শিকার ব্যক্তির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়ে যায় তাহলে এ মামলায় তার বিরুদ্ধে বিচার প্রত্যাহার করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহ কূটনৈতিক চ্যানেলের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেয়া হয়।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলেছে, এমন পরামর্শ সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নারী, শিশুদের অব্যাহতভাবে আটক করছে রাজ্য কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে তারা পাচারের শিকার হয়েছে কিনা সেই তদন্ত ছাড়াই তাদেরকে আটক করা হচ্ছে।

বর্তমানে পাচারের শিকার ব্যক্তি এবং পাচারকারী উভয়ের বিরুদ্ধেই ফরেনার্স অ্যাক্টের অধীনে অভিযোগ আনা হচ্ছে। এই আইনের অধীনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়া হচ্ছে এবং তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এর মাধ্যমে যে মানুষগুলো পাচারের শিকার হয়েছে বিপন্ন সেই মানুষকে অপরাধী করে তোলা হচ্ছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন