‘ক্ষমতাসীন দল না চাইলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়’

  22-08-2017 03:42PM

পিএনএস ডেস্ক : বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে অন্তর্নিহিত বাধা। এই অবস্থায় সবচেয়ে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষেও প্রতিযোগিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সহজ হবে না।

আজ মঙ্গলবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক ওই আলোচনা হয়।

সুজনের সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, প্রয়োজন মনে করলে সঠিক নির্বাচনের স্বার্থে ইসি তার বাইরেও কাজ করতে পারে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) আগেই বলে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের মধ্যস্থতা বা তফসিলের আগে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব নয়। এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক দল ভোট চাইছে। আরেক দল শৃঙ্খলিত হয়ে আছে। তফসিলের ৪৫ দিনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা অবাস্তব। এখন থেকে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাত্ত্বিক দিক থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো দেশের কমিশনের চেয়ে শক্তিশালী ও বড়। কিন্তু সরকার শতভাগ সহায়তা করলেও কী ভালো নির্বাচন সম্ভব? দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু এর অন্তরায় হচ্ছে, রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক দলগুলোকে ঠিক করতে হবে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় কি না। আবার ইসির ওপর সবার আস্থা না থাকলেও তাদের পক্ষে নির্বাচন করা কঠিন।

সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে আদালতেরও ভূমিকা আছে। ভারতীয় নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী বিচার বিভাগের কারণে। কিন্তু আদালতের কী ধরনের ভূমিকা আছে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি।

মূল প্রবন্ধে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সংবিধানে জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যেই পরবর্তী মেয়াদের জন্য নির্বাচন করতে হবে। আর সেটা বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই করতে হবে। এই বিধান বহাল রেখে নির্বাচন হলে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান হবে সুদূরপরাহত। এভাবে নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীনেরা বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে। তিনি বলেন, অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলোতেই ক্ষমতাসীনেরা জয়ী হয়েছে। সম্প্রতি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে দলীয়করণ আরও চরম আকার ধারণ করেছে। তাই বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামো সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের পথে অন্তর্নিহিত বাধা।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার স্বার্থে ইসিকে সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকারের সহায়তা ও সদাচরণ নিশ্চিত করতে হবে।

অংশীজনদের সঙ্গে ইসির সংলাপের বিষয়ে গবেষক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ইসি যদি শুধু আওয়ামী লীগকে ডেকে আলোচনা করত, তারা কী রকম নির্বাচন চায়, কী রকম সহায়তা করবে, সেটা জানত, তাহলে ভালো হতো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনঘন বসলে ভালো। কারণ, সব দল যদি বলে, তারা সুইজারল্যান্ডের মতো নির্বাচন চায়, কিন্তু আওয়ামী লীগ না চাইলে তা হবে না। তিনি প্রশ্ন রাখেন, তাহলে শুধু শুধু মতবিনিময়ে সময় নষ্ট করে কী লাভ?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, ইসির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তাদের এমন কিছু বলা উচিত না, যাতে এই সন্দেহ আরও বাড়ে। ইসি রাজনৈতিক মধ্যস্থতা করবে না—সিইসির এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যেসব আইন আছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন ও আস্থা তৈরি করতে পারলে মধ্যস্থতার প্রয়োজন হবে না।

আসিফ নজরুল বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কী অবস্থা হয়, তা গত চার বছরে দেখা গেছে। সরকার সব সময় নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ভীতির মুখে থাকে। এ কারণে ইমরান এইচ সরকার বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে গেলে হামলা হয়। বিএনপি সভা করতে গেলে বাধা আসে। প্রধান বিচারপতি কী বলেছেন, তা নিয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন