রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশকে খালেদার চিঠি

  16-09-2017 07:57AM


পিএনএস ডেস্ক: রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ১৫টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে পাঠানো চিঠিতে জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা গঠনসহ পাঁচ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই চিঠি গত ১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য থেকে একযোগে পাঠানো হয়। ওআইসিভুক্ত প্রতিটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও সংস্থার প্রতিনিধিদের কাছেও এই চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পাঁচটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খালেদা জিয়ার পাঁচ দফা সুপারিশমালায় রয়েছে—মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বাস্তব অবস্থা নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থা গঠন এবং প্রয়োজনে জাতিসংঘের অধীনে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া; রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী জরুরি সহায়তা হিসেবে যেসব ত্রাণ পায় তার ওপর থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নিতে মিয়ানমার সরকারকে তাগিদ দেওয়া; রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং রাখাইন রাজ্য পর্যবেক্ষণ করতে সাংবাদিক ও মানবাধিকারবিষয়ক পর্যবেক্ষকদের প্রবেশের অনুমতি দিতে মিয়ানমার সরকারকে বলা; রোহিঙ্গা আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা এবং তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের সব প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করা; রোহিঙ্গাদের মৌলিক, মানবিক মর্যাদা ও শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে তাদের ‘রাষ্ট্রহীন’ অবস্থার ইতি ঘটানো।

চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিএনপির এক নেতা জানান, চিঠিতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে জাতিসংঘকে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বলেছেন—আপনি ও আপনার সরকারের উচিত জাতিসংঘের কাছে (সাধারণ অধিবেশন বা নিরাপত্তা পরিষদ, যেখানেই উচিত মনে হয়) বিষয়টি তুলে ধরা।

বিএনপির ওই নেতা আরো জানান, খালেদা জিয়া অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেটের (কফি আনানের নেতৃত্বে করা সুপারিশ) সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করার কথা বলেছেন। এটা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ মন্তব্য করে তিনি এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষায় জরুরিভিত্তিতে এবং অবিলম্বে হস্তক্ষেপের কথা বলেছেন। চিঠিতে খালেদা জিয়া আরো উল্লেখ করেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো জোরালো ভাষায় এবং সমস্বরে কথা বলার সময় এটা।

আমরা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের নিষ্ক্রিয় প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারি না। আমাদের দ্ব্যর্থহীনভাবে পক্ষ বেছে নিতে হবে। এ বিষয়টি পরিষ্কারভাবে মনে রাখতে হবে, বিশ্বের কোনো স্থানেই মানবাধিকারের বিরুদ্ধে নৃশংসতা সহ্য করা হবে না। হলোকাস্টের পর এ বিশ্ব এমনটি আর কখনো ঘটবে না বলে প্রতিশ্রুতি করেছিল। বসনিয়ার পর, রুয়ান্ডার পরও প্রতিশ্রুতি করা হয়েছে। কিন্তু তবুও মিয়ানমারে তা আবারও ঘটছে।

চিঠিতে বলা হয়—আপনারা জানেন, মিয়ানমারে জাতিগত নির্মূলের লক্ষ্যে সম্ভাব্য গণহত্যার মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি থেকে চিরতরে নির্মূলের লক্ষ্যে এ অপরাধ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এ জন্য অপরাধীদের কোনো শাস্তির আওতায় আনা হবে না। বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়োজিত ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের প্রধান জন ম্যাককিসিক মিয়ানমার সরকারকে জাতিগত নির্মূলের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন বলেও বিশ্ব নেতাদের মনে করিয়ে দেন বিএনপিপ্রধান।

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা চালানোর পর থেকে বিগত ১২ দিনে (১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপি নেত্রী।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন