সুন্দরবনের পাশেই দ্বিতীয় সুন্দরবন!

  19-09-2017 12:09PM

পিএনএস ডেস্ক:জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের পাশেই যেন আরেক সুন্দরবন! প্রকৃতির নিয়মে সেটিকে আরো সুশোভিত করে তুলছে প্রাণিকুল। আসল সুন্দরবন ছেড়ে সেখানে গিয়ে যেন আত্মীয় বাড়ি বেড়ানোর সুখ উপভোগ করছে তারা। সুন্দরবনের আকার বৃদ্ধি হয়ে হিরণ পয়েন্ট ও দুবলার চরের মাঝখানে জেগে ওঠা এই অঞ্চলটি সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু চর’ নামে।শুরুতে ফাঁকা থাকলেও এখন চরে অনেক গাছ-গাছালি জন্মেছে। সুন্দরবন থেকে হরিণ, শূকর, বানর ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ সেখানে আবাস গেড়েছে।

জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ আগে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নতুন জেগে ওঠা চরের দেখা পান মৎস্যজীবী মালেক ফরাজি। ফিরে এসে তিনিই জনমানবহীন দ্বীপের নাম রাখেন ‘বঙ্গবন্ধু চর’।এরপর ১৯৯২ সালে অন্যান্য জেলেরাও দ্বীপটিতে যান। তখন এর আয়তন ছিল মাত্র দুই একর, বালি আর কাদায় ভরা। ২০০৪ সালের পর থেকেই দ্বীপটি বড় হতে থাকে। চলতি বছর দ্বীপটির আয়তন দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৪ বর্গকিলোমিটার।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং দুবলারচর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ‘বঙ্গবন্ধু চরের’ অবস্থান। চরটি সুন্দরবনের বন্যপ্রাণিদের অভয়ারণ্য (দক্ষিণ) এবং ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে পড়েছে। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু চরে কেওড়া, বাইন, সুন্দরি ও গরান প্রজাতির ম্যানগ্রোভ বৃক্ষ এবং লতাগুল্ম জন্মেছে।চরটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বন্যপ্রাণির অভয়াশ্রম এলাকা নীলকমলের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যাবে। বর্তমানে ভাটার সময় ওই দুই এলাকার মধ্যে ব্যবধান হয়ে রয়েছে ছোট্ট একটি খাল।

বঙ্গবন্ধু দ্বীপের বিষয়ে মোংলার চিলা ইউনিয়নের জেলে সরদার এবং দুবলার চরের মৎস্য ব্যবসায়ী মো. বেলায়েত হোসেন (৩৬) জানান, বর্তমানে চরটি হিরণ পয়েন্টের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। এজন্য ভাটা এলে সুন্দরবনের অনেক প্রাণি সাঁতার কেটে ওই চরে পাড়ি জমাচ্ছে। প্রায় ২০ বছর ধরে বেলায়েত সুন্দরবন এলাকায় ব্যবসা করছেন। বছরে ৪/৫ বার তার চরে যাওয়া পড়ে।বেলায়েতের ভাষায়, চরটি যেন সুন্দরবনের ভেতরে আরেক সুবিশাল সুন্দরবন, দেখতে ছবির মতো।

এ বিষয়ে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সিএফ আমির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চরে দিনকে দিন ইকো-ট্যুরিস্টদের পদচারণা বাড়ছে। তবে সেখানে কোনো পর্যটন স্পট করার পরিকল্পনা আপাতত বনবিভাগের নেই। চরটির পাশেই বিশ্ব ঐতিহ্য নীলকমল অভয়ারণ্য। এটি ন্যাচারাল ফরেস্ট, তাই এটিকে সংরক্ষণ করাই আমাদের কাজ।’ তবে আশঙ্কার বিষয় হলো, ২০১৫ সালে কোস্টগার্ড দ্বীপটির নাম ‘সরোয়ার স্যান্ড দ্বীপ’ উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার স্থাপনের অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসনে চিঠি দিয়েছে।এতে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী নৌযান ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লাবাহী জাহাজের নিরাপত্তা দিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারটি বসানো প্রয়োজন।এছাড়া চরের জমি চেয়ে ভূমি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও পৃথক আবেদন করেছে কোস্টগার্ড। বঙ্গবন্ধু চরে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার বসালে সেটি জীববৈচিত্রের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে।

তবে মোংলা কোস্টগার্ডের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘টাওয়ারটি নির্মাণ হলে মোংলা ও পায়রা বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা মনিটরিং করা সহজ হবে।’জেলেরা দুই যুগ আগে দ্বীপটি খুঁজে পেলেও ১৯৭৬ সাল থেকেই স্যাটেলাইট ইমেজে এর অস্তিত্ব ধরে পড়ে। এরপর দ্বীপটি মাঝেমধ্যে জেগে ওঠে, আবার ডুবে যায়। তবে ২০০৪ সাল থেকে দ্বীপের আকার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল অবস্থায় আসতে থাকে। এখন ক্রমেই বড় হচ্ছে এটি।চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ সদস্যের গবেষক দল বঙ্গবন্ধু চরে গিয়ে তিন দিন অবস্থান করে। এ সময় তারা দ্বীপের অভ্যন্তরীণ মৃত্তিকা, ডিসিপি জরিপ ও ভিজিবিলিটি অ্যানালাইসিসসহ বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞানভিত্তিক অনুসন্ধান চালান।

প্রতিনিধি দলের সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জেগে উঠার পর থেকে কয়েক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে বঙ্গবন্ধু দ্বীপের আয়তন। গেল এক যুগে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে।আমরা প্রায় ১৪ মিটার গভীর একটি ড্রিল করে এর অভ্যন্তরীণ মৃত্তিকা সংগ্রহ করেছি। তাতে দেখা গেছে, সমুদ্র তলদেশ থেকে চারটি পর্যায়ে দ্বীপটি গঠিত হয়েছে। বর্তমানে তা ধীরে ধীরে পূর্ণতা লাভ করছে।’ বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপটি দেশের স্বার্থে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’



পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন