অপরাধী চক্র জড়িয়ে ফেলতে পারে রোহিঙ্গাদের

  21-09-2017 09:47AM


পিএনএস ডেস্ক: জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতা শুরু হওয়ার পর প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই নিবন্ধিত বা অনিবন্ধিতভাবে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।

তবে এই অসহায় মানুষগুলোকে কোনও অপরাধী চক্র ব্যবহার করে কিনা- তা নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, কোনও কোনও চক্র যে রোহিঙ্গাদের ব্যবহারের চেষ্টা করছে, সেসব তথ্য তারা পেয়েছেন। এ কারণে তাদের নজরদারিও অনেক বাড়িয়েছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস বলেন, "তারা যেহেতু বাস্তুচ্যুত মানুষ এবং আর্থিক সমস্যাও রয়েছে, কোনও অপরাধী চক্র তাদেরকে যেকোনও ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলতে পারে। অথবা তারা স্বেচ্ছায় কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত হতে পারে। এটার জন্য আমরা সতর্ক রয়েছি। "

সহেলী বলেন, "আমাদের ইন্টেলিজেন্সের মনিটরিং রয়েছে। আমাদের নিজস্ব যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, তার মাধ্যমে আমরা তাদের পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সামাজিক মাধ্যমগুলোও কোনও প্রপাগান্ডা বা কর্মকাণ্ড চলতে না পারে, সে বিষয়টিও নজরদারি করা হচ্ছে।"

পুলিশের শীর্ষ একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টিকে তারা বড় উদ্বেগ হিসেবেই নিয়েছেন। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে তাদের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন, বিআইপিএসএস'র প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এ এন এম মুনীরুজ্জামান বলেন, "রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে পারে পাচারকারী ও অপরাধী চক্র। কিন্তু তার চেয়েও বড় ঝুঁকি বা সম্ভাবনা তারা দেখতে পাচ্ছেন।

ত্রাণ বা সহায়তার নামে রোহিঙ্গাদের যাতে কোনো চক্র জঙ্গি বা অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করতে না পারে সেজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যারা যাচ্ছেন, তাদেরও পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মুনীরুজ্জামান আরও বলেন, "বড় যে সমস্যাটি তৈরি হতে পারে, তা হলো রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে বা বিভিন্ন গোষ্ঠীর কাছ থেকে তাদের প্রতি সমর্থন দেখানো হয়েছে। আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট এবং দায়েশ তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে। চেচনিয়া থেকে বেশ কিছু গোষ্ঠী তাদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে।

ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশ কিছু ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের জন্য যুদ্ধ করতে সৈন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

মুনীরুজ্জামান বলেন, "যারা বিদেশি যোদ্ধা, তারা যদি এই রাখাইন অঞ্চলে এসে তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি নেয়, তাহলে আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি একটা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে, যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য একটি বড় হুমকি। "

ত্রাণ বা সহায়তার নামে রোহিঙ্গাদের যাতে কোনও চক্র জঙ্গি বা অপরাধমুলক কর্মকাণ্ডে জড়িত করতে না পারে সেজন্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে যারা যাচ্ছেন, তাদেরকেও পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন বলেন, "যেসব এলাকায় রোহিঙ্গারা বসবাস করে, সেসব এলাকায় আমাদের অনেকগুলো মোবাইল পেট্টোল সারাক্ষণ কাজ করছে। আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেসব গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে, সবার সঙ্গে মিলেই আমরা কাজ করছি। এ পর্যন্ত অশুভ কোনও তৎপরতার খবর পাইনি। " তিনি বলেন, "বিভিন্ন স্থানে আমাদের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, যাতে রোহিঙ্গারা টেকনাফ এবং উখিয়ার নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে না পারে। "

তবে মুনীরুজ্জামান বলেন, "এটি এমন একটি সমস্যা যার হয়তো আশু সমাধান আশা করা ঠিক হবে না। সুতরাং রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর আন্তর্জাতিক তৎপরতার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিরাপত্তার দিক থেকেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নিতে হবে। " সূত্র: বিবিসি

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন