সরকার ভারত থেকে এক লাখ টন সিদ্ধ চাল কিনবে

  18-10-2017 08:51AM


পিএনএস ডেস্ক: দেশের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে এক লাখ টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানি করছে সরকার। ভারত সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ সরকার সরাসরি এই চাল আমদানি করবে।

ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান পিইসি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের জি টু জি পদ্ধতিতে (সরকারিভাবে) ক্রয়বিষয়ক কমিটির মধ্যে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। প্রতি টন চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫৫ ডলার। এই দরে ভারত থেকে এক লাখ টন চাল আমদানি করার প্রস্তাব এরই মধ্যে অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে আজ বুধবার এই ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন পেতে পারে। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এই বৈঠক হওয়ার কথা। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্তত এক দশক পরে ভারত থেকে সরকারিভাবে চাল আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সরকারিভাবে ভারত থেকে চাল আমদানির চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি। এক লাখ টন সিদ্ধ চাল আমদানি করা সম্ভব হলে সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ভারতের পিইসি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের জি টু জি পদ্ধতিতে ক্রয়বিষয়ক কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঋণপত্র খোলার ৬০ দিনের মধ্যে পুরো চাল সরবরাহ করবে ভারত। ১৫ হাজার টন চালের প্রথম চালান বাংলাদেশে পাঠাবে ঋণপত্র পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে। ২০১৭ সালে উত্পাদিত চাল সরবরাহ করতে হবে ভারতকে। এই চালে ৫ শতাংশ ভাঙা দানাসহ অন্যান্য প্যারামিটারে কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। তবে চালের আর্দ্রতার সর্বোচ্চ মাত্রা ১৩ শতাংশের বদলে ১৩.৫ শতাংশ স্থির করেছে উভয় পক্ষ।

বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে এ বছর চাহিদার তুলনায় চাল কম উত্পাদন হওয়ায় দেশে চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় জি টু জি পদ্ধতিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল সরবরাহ প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কম্বোডিয়ার কাছ থেকে আড়াই লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হওয়ার পর ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমার থেকে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের গুদামে তিন লাখ ৬৬ হাজার টন চাল এবং এক লাখ চার হাজার টন গমসহ মোট খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ চার লাখ ৭০ হাজার টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য এই ক্রয় প্রস্তাব উত্থাপন করা হচ্ছে। কমিটির আজকের বৈঠকের জন্য তৈরি করা সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য ক্রয়ের চুক্তি হলে তা সরবরাহ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা থাকে না। বর্তমান পর্যায়ে সরকারি ভাণ্ডারে খাদ্য মজুদ বাড়িয়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা, জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি সম্প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সুসংহত করা, সরকারের নির্ধারিত বিতরণ চ্যানেল নির্বিঘ্নভাবে পরিচালনা করা এবং খাদ্যশস্যের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য আমদানির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

খাদ্যসচিব মো. কায়কোবাদ হোসেনের সই করা ওই সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, ভারতের কাছ থেকে যে দরে চাল আমদানি করা হচ্ছে তা বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজার দরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ অবস্থায় দেশের চালের মজুদ সুসংহত করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় জরুরি সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে ভারত থেকে সরকারিভাবে এক লাখ টন সিদ্ধ চাল আমদানি করা একান্ত প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন করা এবং খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলামের সই করা সার-সংক্ষেপ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান পিইসি লিমিটেড গত ১৭ মে বাংলাদেশের কাছে সিদ্ধ ও আতপ চাল রপ্তানির আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠায়। পরে ভারত থেকে পাঁচ লাখ টন সিদ্ধ চাল আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে অনুরোধ করে ৩১ মে চিঠি দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত ১৬-১৭ জুলাই পিইসির দুই সদস্যের সঙ্গে বাংলাদেশের জি টু জি পদ্ধতিতে ক্রয়বিষয়ক কমিটির মধ্যে আলোচনা হয়। তখন ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠানটি দুই লাখ টন চাল বাংলাদেশকে দিতে রাজি হয়। তবে তারা প্রতি টন সিদ্ধ চালের দর হাঁকে সিআইএফ-এলও (কস্ট, ইনসু্যুরেন্স, ফ্রেইট-লাইনার আউট) ৪৯৫ ডলার। আর বাংলাদেশ ৪২৫ ডলার দর প্রস্তাব করে। দরদামে একমত না হয়েই ১৮ জুলাই সময় অফার ভ্যালিডিটি ধার্য করে বাংলাদেশ ত্যাগ করে পিইসির প্রতিনিধিদল।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ভারতের পিইসি লিমিটেডের দর অত্যধিক বিবেচিত হওয়ায় খাদ্য মন্ত্রণালয় তাদের বেঁধে দেওয়া সময় ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে কোনো সাড়া দেয়নি। পরে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে চাল সরবরাহের বিষয়ে আলোচনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে আবারও চিঠি পাঠায় ভারতের প্রতিষ্ঠানটি। পরে পিইসি কর্তৃপক্ষকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানায় বাংলাদেশ। গত ৫ অক্টোবর ঢাকায় আসা পিইসি প্রতিনিধির সঙ্গে বাংলাদেশের জি টু জি পদ্ধতিতে ক্রয়বিষয়ক কমিটির সভা হয়। ওই সভায় আলোচনা শেষে ৪৫৫ ডলার মূল্যে সিআইএফ-এলও টার্মে ৫ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট এক লাখ টন সিদ্ধ চাল সরবরাহ করতে রাজি হয়ে মিটিংয়ের কার্যবিবরণীতে সই করে দুই পক্ষ।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে তুলনামূলকভাবে কম খরচে এই চাল আমদানির সুযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে খাদ্য অধিদপ্তর ভিয়েতনাম থেকে ৪৭০ ডলার দরে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি ৫ শতাংশ ভাঙা দানাবিশিষ্ট সিদ্ধ চাল আমদানি করে। বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারদর অনুযায়ী, ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানির ব্যয় সিঅ্যান্ডএফ মূল্য (কস্ট অ্যান্ড ফ্রেইট) প্রতি টন ৪৫০ ডলার ও ৪৬৫ ডলার। এর সঙ্গে বীমা, পারফরম্যান্স সিকিউরিটি খরচ, দরদাতার মুনাফার জন্য ৫ শতাংশ হিসেবে যোগ হবে আরো ২১ দশমিক ৫০ ও ২০ দশমিক ৭৫ ডলার। তাতে বাংলাদেশে বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে চালের মূল্য দাঁড়াবে ৪৭১ দশমিক ৫০ ডলার এবং ৪৮৫ দশমিক ৭৫ ডলার।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন