আরাকানবিষয়ক সংবাদকর্মীদের আমরা যেন ভুলে না যাই

  18-10-2017 07:17PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো সময়মতো সোচ্চার হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এটি সহজে দৃষ্টি কাড়ে। মানবতার প্রতি নির্দয় আচরণের করুণ কাহিনী ও চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে নিরলসভাবে তুলে ধরে জনমত গঠনে সক্ষম হয় গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংগঠন।

কীভাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও চাকমারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, তার বিবরণ ও সচিত্র প্রতিবেদন নিয়মিত তুলে ধরে রয়টার্স ও এএফপি। পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অমানবিক ও ধ্বংসাত্মক বিষয়ের প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণে সফল ভূমিকা রাখে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স ও এএফপি পরিবেশিত খবর দেখে মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গাদের উপর নেমে আসা নির্মম ও পৈশাচিক ঘটনা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়। যে র্ববরতা থেকে মুক্তি পায়নি নিরীহ নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। সক্ষম মুসলিম পুরুষদের শুরুতেই হত্যা করা হয় বলে খবরে প্রকাশ।

নিষ্ঠুরতার সবদিক অতিক্রম করে শিশুদের সারিবদ্ধভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে শুয়িয়ে ধারালো তরবারি দিয়ে হত্যা করা হয় পৈশাচিক কায়দায়। প্রকাশ্যে নারীদের শ্লীলতাহানি ঘটানোর মতো চরম অমানবিক আচরণ করছে নরপশুর দল। অত্যাচার-নির্যাতনের সব সীমা অনেক আগেই অতিক্রম করে ফেলেছে জুলুমবাজরা।

বছরের পর বছর নয়, যুগের পর যুগ নয়; শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেখানে বসত করছে এই রোহিঙ্গারা। সেখান থেকে তারা এমপি-মন্ত্রী সবই ছিল। কিন্তু একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে সে দেশের সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও চাকমারা পোড়ামাটি নীতি অবলম্বন করেছে।

আরাকানে নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি বসতিগুলো জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের ঘরের ভেতর আটকে দরজায় তালা লাগিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে জল্লাদের দল। কোথাও ঠাঁই না পেয়ে স্বজন হারিয়ে জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছে দিশাহীন-অসহায় রোহিঙ্গারা।

চোখের সামনে আপনজন হারিয়ে ওরা হতবিহ্বল। চোখের পানি ওদের শেষ। সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও চাকমাদের নিষ্ঠুরতায় তারা জন্মভূমি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তারা আবার স্বদেশে ফেরত যেতে চায়। কিন্তু মিয়ানমারের চির ধূর্ততার কাছে তাদের ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

মিয়ানমারে আজ যা হচ্ছে, সভ্যজগতে তা কখনো কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। আধুনিকতার এ যুগে মানবতাবিরোধী অপরাধ করে পাপিষ্টরা অধরা থাকা কারো কাম্য নয়। এটা হতে দেয়া যায় না। এমন অমানবিক-নির্দয় ঘটনার নায়করা পার পেয়ে গেলে বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এমনটা নিশ্চয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ চায় না।

প্রতিদিন-প্রতিনিয়ত আরাকানে অমানবিক ও পৈশাচিক ঘটনাগুলো জীবন বাজি রেখে তুলে ধরেন যারা, তারা সাংবাদিক তথা গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী। তাদের অবদানকে খাটো করে দেখলে চলবে না। মিয়ানমারের ফ্যাসিস্ট সেনাবাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে তারা পেশাগত কাজটি করেই খ্যান্ত হননি, প্রতিটি চিত্র বলে দেয়, তারা বিবেকের দায় থেকেও মুক্ত নন। তাদের জীবন বাজি রাখা কাজটির জন্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার সময়ের দাবি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন