‘এমনভাবে বিষয়টি হ্যান্ডেল হয়েছে, মানুষ মনে করবে সিনহা ভিকটিমাইজ’

  19-10-2017 11:51PM

পিএনএস ডেস্ক: একজন প্রধান বিচারপতি দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, নৈতিক-স্খলনসহ অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশের ঘটনা বাংলাদেশে এর আগে কখনো ঘটেনি।

সুপ্রিম কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হার বিরুদ্ধে এরকম ১১টি অভিযোগ সামনে এনেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। খবর বিবিসির।

এ প্রেক্ষাপটে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রতি বিচারপতিদের অনাস্থা, তার অসুস্থতা, ছুটি এবং বিদেশ যাওয়া পুরো ব্যাপারটি নিয়ে এক বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা তো একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। দেশের উচ্চতর আদালতের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সরকার এবং বিচার বিভাগের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে এটাতো কাঙ্ক্ষিত না’।

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি এবং অসদাচরণের’ অভিযোগ অন্যান্য বিচারপতিকে জানানো কোনো আইনি প্রক্রিয়া নয়।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হওয়ায় বিচারপতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর কথা। পুর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ওই কাউন্সিলের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাতে পারতেন। সেটাতেও সুপ্রিম কোর্টের জাজেরাই থাকতেন। কাউন্সিল হইলেই চিফ জাস্টিস কিন্তু ডিসপিউটেড হয়ে যেতেন। তিনি আর কোর্টে বসতে পারতেন না। এটুকু করলেই তো হয়ে যেতো।’

এদিকে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে এমন একটা সময়ে যখন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণ নিয়ে তিনি সরকারের তোপের মুখে রয়েছেন।

তার ওপর ক্ষুব্ধ সরকারের উচ্চ মহল। তার কড়া সমালোচনা হয়েছে সংসদে। বিভিন্ন সভা সমাবেশে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও উঠেছে।

এছাড়া গণমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, সরকার দলীয় নেতাদের সঙ্গে গত আগস্ট মাসে শোক দিবসের এক সভায় আপীল বিভাগের সাবেক একজন বিচারপতি বলেছিলেন, ‘সুরেন্দ্র কুমার সিন্হাকে শুধু পদ নয় দেশও ছাড়তে হবে’।

সাবেক বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যবস্থা যদি ষোড়শ সংশোধনীর আগে নেয়া হতো বা প্রকাশ পেত তাহলে আজকে যে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে এগুলি হতো না। এইখানে সরকারের একটা দোদুল্যমানতা বা শৈথিল্য দেখা যায়।’

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘এমনভাবে প্রধান বিচারপতির বিষয়টিকে হ্যান্ডেল করা হয়েছে, মানুষ এখন এটাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করবে না। এটাকে মনে করবে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ভিকটিমাইজ করা হয়েছে’।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের মতে প্রধান বিচারপতিকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলবে।

আর এটি এমন একটি দৃষ্টান্ত হলো যা দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের রাজনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে তিনি মনে করেন।

‘এটা চরম অসহনশীলতার পরিচয় দেয়া হয়েছে যে আমরা বিচার বিভাগকেও সহ্য করতে চাই না। আমরা যা বলবো তাই হবে। এটা বিচার বিভাগের জন্য এবং রাজনীতির জন্য রাজনীতিক নেতৃবৃন্দের জন্য আরেকটা নতুন সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।’

এদিকে এই পুরো পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রধান বিচারপতিকেই দায়ী করছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি এবং বিচার বিভাগের যে ইমেজ - সেটা রক্ষার জন্যই সরকার চুপ করেছিল অন্তত বেশ কিছু দিন। কিন্তু এগুলোকে উনিই (প্রধান বিচারপতি) উসকে দিয়েছেন। তিনি কেন বিদেশ যাবার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে বলতে গেলেন যে তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন না। কেউ কি বলেছে উনি পালিয়ে যাচ্ছেন? এ কারণেই সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিবৃতি দিতে হয়েছে।’

মআলম বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট কতগুলো অভিযোগ সামনে এসে যায় এবং রাষ্ট্রপতির গোচরীভূত হয় তখন তো রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হয়ে যায় অন্ততপক্ষে অন্যান্য বিচারপতিকে জানানো। তিনি বিচার বিভাগে আরো বসলে হয়তো বিচার বিভাগে আরো বেশি দুর্নীতি হয়ে যাবে এটাই রাষ্ট্রপতির কাছে মনে হয়েছে।’

এদিকে সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা ছুটিতে যাওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব নিয়েছেন।
তিনি এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদল করেছেন।

অথচ বিদেশ যাবার আগে প্রশাসনিক পরিবর্তনের বিষয়টিকে সরকারের হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রশ্নে উদ্বেগ জানিয়েছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

তার লিখিত বিবৃতির শেষ বাক্যটি হলো ‘এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না’।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন