সু চির দোসর ও মানবতার শত্রুরা চাপ প্রয়োগের বিপক্ষে

  21-10-2017 02:33PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : সকালের সূর্য বলে দেয়, দিনটা কেমন যাবে। অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা সে অনুযায়ী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করে ফলও পান। মিয়ানমারের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার সে ব্যাপারটি আমরা আমলে নিচ্ছে না। আমলে নিলে আলোচনার নামে তারা জাতিগত নির্মূল অভিযানটি অব্যাহত রাখার সুযোগ পেত না। অলোচনার প্রথম ধাপই তো হলো, যা হয়েছে এভাব থামো। কিন্তু না!

মিয়ানমার মূলত আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করছে। সে সুযোগে আরাকানে মুসলিম নিধন তথা একটি জাতিগোষ্ঠী ও রাজ্যকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলছে। আন্তর্জাতিক সব চাপ ও আহ্বান উপেক্ষা করে আলোচনার নামে নির্বিচারে হত্যা, যৌন নির্যাতন এবং আরাকানের নাগরিকদের দেশত্যাগে বাধ্য করছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী, বৌদ্ধ সম্প্রদায় ও চাকমাদের নিষ্ঠুরতা লেশমাত্র কমেনি। তাদের প্রতিনিধি জাতিসংঘে গিয়ে দেয়া অঙ্গীকার এবং বাংলাদেশে এসে করা আলোচনার কোনো ফল বাস্তবে মিলছে না। তারা যদি সত্যিই আরাকানে শান্তি বজায় রাখত, তাহলে বাড়িও পুড়ত না, একজনও দেশত্যাগ করত না।

সহজ কথায় আরাকানে জাতিগত নিধন বন্ধে মিয়ানমার আন্তরিক হলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল অব্যাহত থাকত না। নিষ্ঠুরতা যে চলছে, তার নজির বিশ্ববাসীর সামনে প্রতিনিয়ত চলে আসছে। মানবতা বিরোধী অপরাধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যে চ্যাম্পিয়ন, ইতিমধ্যে তা তো সবার জানা হয়ে গেছে।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠনের ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ ধরনের ভূমিকা আরাকানে জাতিগত নিধনকে ত্বরান্বিত করেছে। এর পরও এসব সংগঠনের টনক নড়েনি। সেখানের নিরীহ মানুষকে রক্ষায় যেভাবে আটঘাট বেঁধে নামার দরকার ছিল, তার কিছুই না করায় প্রকাশ্যে একটি জাতি নিঃশেষ হয়ে যায়।

আরাকানে জাতিগত নিধনের দায় মিয়ানমারের যেমন, তেমনি জাতিসংঘেরও। মিয়ানমার অপরাধ করেছে আর জাতিসংঘ জেনে-বুঝে এসব করার সুযোগ দিয়েছে। মানবতাবাদীদের কাছে মিয়ানমারের ক্ষেত্রে সময়ের করণীয় ব্যাপারে জাতিসংঘের ব্যর্থতা স্পষ্ট। যে জন্য সচেতন মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণা বাড়ছে।

কফি আনান কমিশনের রিপোর্টে শুভঙ্করের ফাঁকি আছে, সেটা স্পষ্টভাবে জানা এবং বোঝার পরও মুসলমান নিধনে বিশ্বাসী এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী চক্র সে রিপোর্ট বাস্তবায়নে মরিয়া। কী এক দায়বদ্ধতার কারণে ঘুরে-ফিরে সেখানেই যাচ্ছে। আমাদের কেউ কেউ সেই সুরে সুর মিলাচ্ছে! ছিঃ।

মিয়ানমার আরাকানে সক্ষম ও সামর্থবান পুরুষদের কীভাবে নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে, তার অকাট্য প্রমাণ বাংলাদেশে আসা নাগরিকদের মধ্যে বয়স্ক পুরুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক কম। এখানে অভিভাবকহীন শিশুর সংখ্যা বেশি। ছয় লাখ মানুষের মধ্যে শিশুই ৩ লক্ষাধিক। যাদের বেশির ভাগ এতিম।

চোখের সামনে নির্মম পরিণতির মাধ্যমে স্বজন হারানোর দৃশ্য কোমলমতী শিশুরা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। বরং নির্মম ও নিষ্ঠুর দৃশ্য তাদের শিশুমনকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়ায়। যে কারণে বাংলাদেশে আসা বিপুল পরিমাণ অভিভাবকহীন শিশু হতবিহ্বল। তাদের চাউনিতে একধরনের ভয় কাজ করছে।

কক্সবাজারে দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোগান্তি সচেতন জনগোষ্ঠীকে পীড়া দেয়। জীবন ধারণের উপযোগী পরিবেশ এখানে অনুপস্থিত। ঘিঞ্জি পরিবেশে শিশুরা নানা রকম ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। বৈরী এই পরিবেশ থেকে শিশুদের অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া জরুরি। জরুরি মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে রাখা।

আরাকানের অভিভাবকহীন শিশুদের মনের গভীরে থাকা কষ্ট লাঘবে এবং সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে একটি স্বাস্থ্যকর ও শিশুবান্ধব পরিবেশে ফিরিয়ে নেয়া সময়ের দাবি। আর সেটা তাদের জন্মস্থানে হলে আরো ভালো। মিয়ানমারকে তাদের নাগরিকদের সম্মানে, মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে সব ধরনের চাপ প্রয়োগের বিকল্প নেই। যারা চাপ প্রয়োগের বিপক্ষে, তারা এর সুষ্ঠু সমাধানে আন্তরিক নন। বরং মিয়ানমারের দোসর, মানবতার শত্রু।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন