বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যের মুক্তিযোদ্ধা লোকমান মাস্টার চিকিৎসা বঞ্চিত!

  22-10-2017 10:45AM

পিএনএস ডেস্ক: ১৯৫৮ সালে তদানীন্তন পুর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দুঃসময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সান্নিধ্যে থাকা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা পর্যন্ত যথাযথ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে। এমন অভিযোগ উঠেছে পরিবারের পক্ষ থেকে।

গত ১৫ দিন ধরে লোকমান হাকিম মাস্টার নামের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের ৪০৭ নম্বর কক্ষে রয়েছেন চিকিৎসাধীন।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাধারণ সম্পাদক এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ মোঃ ইহতেশামুল হক চৌধুরী (দুলাল) গতকাল শনিবার কক্সবাজার জেলা সদর হাসাপতাল পরিদর্শনে এসেছিলেন। এসময় সংবাদকর্মীরা জেলা সদরের একমাত্র সরকারি হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থায় চলমান নৈরাজ্যকর অবস্থার চিত্র তুলে ধরেন।

সরকারি হাসপাতালটির ব্ল্যাড ব্যাংক স্থানীয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করে- এমন কথাও জানানো হয় অতিরিক্ত মহাপরিচালককে। এমনকি তিনি (অতিরিক্ত মহাপরিচালক) খোদ জাতির জনকের একজন সেবক এবং মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা বঞ্চিত হবার বিষয়টি জানতে পেরে বিচলিত হয়ে উঠেন। তিনি বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে দেখা হবে বলে জানান।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালের কিছু জুনিয়র চিকিৎসক তাঁকে চিকিৎসা দিলেও গত দুই সপ্তাহেও তার কোনও শারিরিক উন্নতি হয়নি। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মতো একটি সরকারি হাসপাতালে জাতির জনকের একজন সেবক ও মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হবার সংবাদ পেয়ে কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক সহ একদল সংবাদকর্মী গতকাল শনিবার সকালে হাসপাতালে যান।

গত ৫ অক্টোবর থেকে এই মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি গতকাল হাসপাতালের সিটে এ প্রতিবেদককে দুঃখের সাথে জানান-এ পর্যন্ত কোনও সিনিয়র চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞ তাঁকে দেখেননি। হাসপাতালের কিছু জুনিয়র চিকিৎসকই তাকে দেখতে যান।

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া হাই স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম মাস্টার গত ৫ অক্টোবর রাতে এশার নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হবার সময় ব্যাটারি চালিত একটি ইজি বাইক যানের ধাক্কায় আহত হন। সেই রাতেই তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। তার মাথায়, হাতে এবং হাঁটুতে ব্যথা। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান থেকে শুরু করে ৭/৮ জন চিকিৎসক থাকলেও তাদের কেউই এ পর্যন্ত তাঁকে দেখতে যাননি।

যথাযথ চিকিৎসা বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম মাস্টারের সন্তান মোঃ রাশেল মোস্তফা কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসের ভারপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে কর্মরত। গত ১০ অক্টোবর বাবার চিকিৎসা বঞ্চিত হবার অভিযোগ করেন তিনি স্বাস্থ্য মহাপরিচালকের দপ্তরে। এরপর গত ১৬ অক্টোবর একজন চিকিৎসক এই মুক্তিযোদ্ধাকে দেখতে যান।

এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ পূ চ নু বলেন-‘আমি বিষয়টি জেনে ইতিমধ্যে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে দিয়েছি মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য। ’ তবে মুক্তিযোদ্ধা পুত্র রাশেল মোস্তফা জানান, গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক কক্সবাজার আসার কারণেই কালই এই বোর্ড গঠন করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০১০ সালের ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে ইনানী অরণ্যে বঙ্গবন্ধুর অজ্ঞাতবাস’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল ১৯৫৮ সালের পুর্ব পাকিস্তানের অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষণকালের জন্য কক্সবাজারের ইনানি অরণ্যের চেংছড়ি আদিবাসী পল্লীতে এসেছিলেন। কালের কণ্ঠের সেই প্রতিবেদনের পরেই জানাজানি হয় জাতির জনকের জীবনের অজানা এক অধ্যায়।

প্রয়াত আদিবাসী নেতা ফেলোরাম রোয়াজা চাকমা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন অকৃত্রিম ভক্ত। তখন পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা তখনকার ছাত্রলীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম মাস্টার ও শতায়ূ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক সেই ইতিহাসের জীবন্ত স্বাক্ষী হিসাবে রয়েছেন এখনো। এই দুই বঙ্গবন্ধু ভক্ত সেই সময় বঙ্গবন্ধুকে দেখভাল করতেন। ফিঃবছরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে জেলা প্রশাসন এই দুই মুক্তিযোদ্ধাসহ সেই আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের যথাযথভাবে সন্মান জানানো হয়ে থাকে।

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন