মায়ের লিভারে বাঁচল জাওয়াদ

  16-11-2017 09:22PM

পিএনএস : শিশুটির নাম আমান জাওয়াদ। বয়স তখন ২ বছর ১০ মাস। এ সময়ে সে আক্রান্ত হয় জন্ডিসে। এরপর জ্বর, বমি আর জন্ডিসের সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা-মা তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন।

১১ সেপ্টেম্বর সেখানে ভর্তির পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে জানা যায় হেপাটাইটিস-এ এর কারণে লিভার বিকল হয়ে গেছে। চিকিৎসকরা জরুরি ভিত্তিতে শিশুটির লিভার প্রতিস্থাপন (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করানোর পরামর্শ দেন। তারা জানান, দ্রুত সময়ে প্রতিস্থাপণ করা না হলে শিশুটির বেঁচে থাকা অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়াবে। চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটির পরিবার তাকে দ্রুত দিল্লিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করেন।

প্রাথমিক পরীক্ষার পর সেখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত লিভার প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন। অবশেষে জটিল অপারেশনের মাধ্যমে মায়ের লিভারের অংশ শিশুটির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তিন সপ্তাহের মধ্যে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।

শিশুটির মায়ের নাম ফারজানা তানজিম রাহা। বাবার নাম মো. জামাল উদ্দিন। তারা রাজধানীর আগারগাঁও তালতলা এলাকায় বাস করেন।

মা ফারজানা তানজিম রাহা বলেন, ‘আমার লিভারের একটা অংশ দিয়েছি। সেই সময়ে আমার মাথায় আর কিছু আসেনি। সন্তানের জীবন রক্ষাই ছিলো বড় বিষয়। লিভারের এই অংশ দেওয়ার ব্যাপারে ম্যাচিংয়েরও বিষয় আছে। শুনেছি বাবা-মায়েরটা হলে ভাল হয়। আমারটা ম্যাচ করেছে। তাই দেরি না করে নিজেই সেটা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছি।

বৃহস্পতিবার রাতে ফারজানা বলেন, ‘অপারেশন হয় ২০ সেপ্টেম্বর। আমাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ২৮ সেপ্টেম্বর। আর শিশু আমান জাওয়াদকে ছেড়ে দেওয়া হয় ১৭ অক্টোবর। আমান সুস্থ হয়ে ওঠার পর দেশে আসি ১০ নভেম্বর।’ লিভারের অংশ দেওয়ায় শরীরে কোন অসুবিধা বোধ করছেন না বলেও জানান ফারজানা।

লিভার প্রতিস্থাপনের সঙ্গে যুক্ত অ্যাপোলো হাসপাতালের গ্রুপ মেডিক্যাল ডিরেক্টর, গ্যাস্ট্রোএনটেরলজিস্ট ও হেপাটলজিস্ট ড. অনুপম সিবাল বলেন, ‘এই অপারেশন ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, শিশুটি ইতোমধ্যেই হেপাটনিক এনকেফেলাপ্যাথি’র তৃতীয় পর্যায়ে থাকার কারণে লিভার দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে পারছিল না। এর ফলে মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে জরুরিভাবে লিভার প্রতিস্থাপনই ছিল শিশুটিকে বাঁচানোর একমাত্র উপায়। আমরা এমন একটি জটিল কাজ বিপদমুক্তভাবে করতে পেরে অত্যন্ত খুশি।’

এ সম্পর্কে দিল্লি অ্যাপোলো হাসপাতালের সিনিয়র লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ড. নিরব গয়াল বলেন, ‘শিশুটি খুবই অসুস্থ ছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে শিশুটির ডায়ালাইসিস করানো হয়। তীব্র লিভারের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এই শিশুটির জন্য স্বাভাবিক লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট এর চেয়ে উন্নত ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন ছিল।’

১৯৯৮ সালে দিল্লি অ্যাপোলো হাসপাতালে প্রথমবারের মত সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়। তখন থেকে দুই হাজার নয়শ’র বেশি রোগীর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয় যার মধ্যে ২৩৫ জনই ছিল শিশু। ১৯৯৮ সালে মাত্র ১৮ মাস বয়সে ভারতে প্রথমবারের মতো যে শিশুটির সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করানো হয় সেই শিশুটি এখন একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন