আজ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী

  14-12-2017 10:27AM


পিএনএস ডেস্ক: বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীরের ৪৬তম শাহাদত বার্ষিকী আজ। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরে আজকের এই দিনে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম মহানায়ক বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর যুদ্ধরত অবস্থায় শহীদ হয়েছিলেন।

তিনি ১৯৪৫ সালের ৬ মার্চ বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। ১৯৬৪ সালে মুলাদী মাহবুদজান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে এইচ এসসি পাশ করার পর ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তি হন।

ওই বছরই তিনি ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সফলভারে প্রশিক্ষন শেষে ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন এবং ১৭৩ মূলতান ইঞ্জিনিয়ারিং বাটালিয়নে যোগদান করেন। ছয় মাস পর তাকে রিসালপুর মিলিটারী কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ বদলি করা হয়।

১৯৭১ সালে কারা কোরামে কর্মরত থাকাকালীন ১৫ দিন ছুটি নিয়ে রিসালপুরে ফিরে যান। একদিন পর শিয়ালকোট সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার মোহদীপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগ দেন। তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে যুদ্ধের দায়িত্ব দেয়া হয়।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে ১৪ ডিসেম্বর একাত্তরের এই দিনে ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর মুক্তিযুদ্ধে ক্রমাগত সফলতায় মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন মাতৃভুমিকে মুক্ত করতে। বরিশালের টগবগে তরুন সামরিক অফিসার জাহাঙ্গীরের সর্বক্ষন একটাই চিন্তা মাতৃভুমিকে শত্রুমুক্ত করা।

১৪ ডিসেম্বর সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রেহাইচরে। তিনি ছিলেন ৭নং সেক্টরের মোহদীপুর সাব সেক্টর কমান্ডার। ওই সময় ৭ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন লে. কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর শিবগঞ্জ ডাক বাংলোয় যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ, কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য সেনা কর্মকর্তারা এক সভায় মিলিত হন।

সে সভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের রননীতি প্রস্তুত করা হয়। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর তার বাহিনী নিয়ে কয়েকটি নৌকায় করে মহনন্দা নদী পার হয়ে শহরের রেহাইচরে অবস্থান নেন।

মহানন্দা নদীর দক্ষিন পাশে বর্তমান সেতুর প্রান্ত সীমায় ছিল পাকিস্তান সেনাদের ঘাটি। সেখানে সন্মুখ যুদ্ধে পরদিন ১৪ ডিসেম্বর মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাপ্টেন মহীউদ্দীন জাহাঙ্গীর শহীদ হন। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর সোনামসজিদ চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের আরেক বীরযোদ্ধা শহীদ মেজর নাজমুল হকের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয় ।

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীরের ৪৫তম মৃত্যু দিবস পালনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় প্রশাসন দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ, মাজারে পুস্পস্তবক অর্পন, কোরান খানী, মিলাদ মাহফিল, দোয়া, আলোচনা সভা ও গরীবদের মধ্যে খাদ্য বিতরন।

বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ পৃথক কর্মসূচীর মাধ্যমে দিনটি পালন করবে। এছাড়া বীর শ্রেষ্ঠর শহীদ হবার স্থানটিতে স্মৃতিসৌধকে ঘিরেও আলাদা কর্মসূচী পালিত হবে বলে জানিয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সিরাজুল হক।

পিএনএস/আনোয়ার


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন