বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

  16-12-2017 09:42AM


পিএনএস ডেস্ক: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসছে সর্বস্তরের মানুষ। বিজয়ের আনন্দ তাদের চোখেমুখে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ শীতের সকালে এমনিতেই নিরিবিলি থাকে। তবে বিজয় দিবসে সূর্যোদয়ের পর থেকেই লাখো মানুষের ঢল নামে।

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা-ভালোবাসার ফুলে ভরে ওঠে স্মৃতিসৌধের বেদি। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আজ সূর্যোদয়ের পর থেকে মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শহীদদের প্রতি।

আজ ছিল বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্তি। দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে। তারা শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যাওয়ার পর স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সবার জন্য।

নারী-পুরুষনির্বিশেষে সব বয়সী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্মৃতিসৌধে ফুল দিচ্ছেন। শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আবেগ জানিয়েছেন। রাজনীতিক, কূটনীতিক, সমাজকর্মী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরে, শিল্পী-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, পেশাজীবী, শ্রমিক, শিক্ষার্থী, সর্বোপরি সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত শ্রদ্ধার পুষ্পাঞ্জলিতে ঢেকে যায় স্মৃতিসৌধ।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের নেতাদের নিয়ে আবার ফুল দেন শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সাংসদ, বিচারপতি, তিন বাহিনীর প্রধান, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকেরা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, এনসিটিবিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ফুল দেওয়া হয় স্মৃতিসৌধে। শ্রদ্ধা জানায় সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।

পুষ্পস্তবকের ব্যানারে দেখা যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, দুর্নীতি দমন কমিশন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, জাতীয় জাদুঘর, বিভিন্ন গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নাম। এর বাইরে অসংখ্য সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সরকারি দপ্তরের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সাভারে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের (সিআরপি) কর্মীরা ও হুইলচেয়ারে করে সেখানকার রোগীরা সকালে এসে শ্রদ্ধা জানান। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানান সকালে।

নেত্রকোনার সিদ্দিক মিয়া আসেন একটি ভ্যানের ওপর লোহা ও টিন দিয়ে তৈরি ১২ ফুট লম্বা একটি নৌকা নিয়ে। নৌকায় বৈঠা হাতে বসে ছিল তার দুই সন্তান সাকিব ও আশিক। তিনি বলেন, গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের সময় এটা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কাছে গিয়েছিলেন।

পরে ন্যাম ভবনের এক জায়গায় রেখে গিয়েছিলেন। চার দিন আগে ঢাকায় এসে রং করে গত বৃহস্পতিবার রাতে স্মৃতিসৌধ এলাকায় আসেন।

তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণির অনেককে দেখা গেল, স্মৃতিস্তম্ভ পেছনে রেখে একা, যুগল, দলবেঁধে মুঠোফোনে সেলফি তুলছেন।

ভিভিআইপি যাতায়াতের কারণে ফজরের আগ থেকেই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল বন্ধ করা হয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার পর মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়া হয়। স্মৃতিসৌধে প্রতিবছর শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এমন কয়েকজন বলেন, এবার মানুষের ঢল একটু বেশি ছিল।

মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে খুব সকালে স্মৃতিসৌধে আসেন কলেজশিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এখানে এলে বিজয়ের গৌরবটা একটু বেশি অনুভব করা যায়। বোধ-চেতনায় দোলা দেয়।

বিজয়ের দিনে কেমন বাংলাদেশ প্রত্যাশা করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশই চাওয়া। আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশের স্বপ্নে প্রতিদিন ঘুম ভাঙে। বিজয়ের দিন স্বপ্নটা আরও রঙিন হয়ে ওঠে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন