১১ ইউটার্ন নির্মাণের শুরুতেই বাধা

  18-12-2017 08:56AM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নেয়া ইউটার্ন প্রকল্পের কাজ শুরুতেই বাধার মুখে পড়েছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ও সংস্থার সাথে সমন্বয় করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখন সড়ক ও জনপথ বিভাগ প্রকল্প এলাকার জমির দাম চাচ্ছে। নানা রকম ক্ষতিপূরণ দাবি করছে। ফলে কাজটি শুরু হওয়ার পরপরই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ইউটার্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডিএনসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব আলম বলেন, ২০১৫ সাল থেকে এ প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়। সর্বশেষ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সাথে অনুষ্ঠিত সমন্বয় সভা থেকে এ ব্যাপারে সম্মতি দেয়া হয়। বলা হয় প্রকল্পের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), সিভিল এভিয়েশন এবং রেলওয়ের কিছু জমি ব্যবহৃত হবে। কিন্তু টাকাপয়সার কোনো কথা তখন হয়নি। এখন সওজ ১ দশমিক ৩৬ একর জমির দাম চাইছে। ইতোমধ্যে সিটি করপোরেশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখন বলা হচ্ছে ওই জমি কিনে নিয়ে ব্যবহার করতে হবে। তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। আশা করি সমাধান হয়ে যাবে।

ইউটার্ন নির্মাণের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএম কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হাসিবুর রহমান শাহিন বলেন, মোট ১১টি ইউটার্নের কাজ শুরু করলে সওজের দু-একজন লোক বারবার এসে টাকাপয়সার কথা বলছে। তারা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে। বিষয়টির সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে বলেছে তারা। সম্প্রতি আর্মি গলফ ক্লাব ও তেজগাঁও সাতরাস্তা পয়েন্টের সাইনবোর্ড দুটি রাতের বেলা কে বা কারা ভেঙে নিয়ে গেছে। এ রকম হলে তো যথাসময়ে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি জানান, বর্তমানে তিনটি ইউটার্নের কাজ চলছে। বাকি আটটিতে সওজের সাথে জটিলতা থাকায় কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে।

জানা গেছে, আনিসুল হক ডিএনসিসির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর গাজীপুর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়কের যানজট নিরসনের উদ্যোগ নেন। এ জন্য ইউটার্ন নির্মাণের প্রস্তাব দেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সেবা সংস্থা, মেট্রোরেল প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক হয়। এক পর্যায়ে এসব প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের সাথে সমন্বয় করে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা পর্যন্ত ১১টি পয়েন্টে ইউটার্ন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো হলো তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, কোহিনুর কেমিক্যাল মোড়, মহাখালী বাস টার্মিনাল, মহাখালী ফ্লাইওভার, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী, বনানী কবরস্থান, বনানী ওভারপাস, শ্যাওড়া, কাওলা, উত্তরার র্যাব-১ অফিসের সামনের সড়ক এবং জসিম উদ্দিন এভিনিউয়ের সামনে। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা দেবে সরকার। বাকি চার কোটি ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেবে ডিএনসিসি। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। গত ২৯ অক্টোবর এসএম কনস্ট্রাকশনকে ইউটার্ন নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় ডিএনসিসি। ঠিকাদার কাজ শুরুর পর থেকেই এসব বাধা সৃষ্টি করছে সওজ।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী ইকবাল বলেন, ডিএনসিসিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শর্ত দেয়া হয়েছিল, যেসব স্থাপনা সরাতে হবে সে জন্য তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ইউটার্ন নির্মাণে যেসব স্থাপনা ভাঙা পড়ছে সেসবের ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করে ডিএনসিসিকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ দিলেই ডিএনসিসি কাজ করতে পারবে।

মেহেদি ইকবাল আরো বলেন, বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের জন্য জমি দেয়া হয়েছে। সেখানে ইউটার্ন নির্মাণের অনুমতি দেয়া হবে না। বিমানবন্দর ও উত্তরা জসিমউদ্দিন ক্রসিংয়েই এখন সর্বাধিক যানজট হচ্ছে। জসিম উদ্দিন থেকে এয়ারপোর্ট এই এক কিলোমিটার জায়গা পেরুতেই যানবাহনের এক ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
যেভাবে যানজট কমায় ইউটার্ন : রাজধানীর সড়কগুলোর ক্রসিং পয়েন্টে যানজট লেগে থাকা নিত্যবিষয়। মূলত ক্রসিংগুলোর যানজট কমানোই ইউটার্ন নির্মাণের উদ্দেশ্য। ক্রসিং পয়েন্টে রাস্তার দুপাশের কিছু জমি নিয়ে সেখানে ডানে টার্ন নেয়ার জন্য একটি লেন করে দেয়া হবে। সেই লেন ব্যবহার করে গাড়ি ডানে টার্ন নিতে পারবে।

এতে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। ক্রসিংগুলোতেও সিগনালের জন্য আর গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বিদ্যমান রাস্তার ওপরেই তৈরি করা যায় ইউটার্ন। বিটুমিন দিয়ে তৈরি রাস্তার মতো যাতে দ্রুত ভেঙেচুরে না যায় সে জন্য ইউটার্নের লেনগুলো তৈরি করা হয় কংক্রিট দিয়ে। এ ইউটার্নগুলোও তৈরি হবে কংক্রিট দিয়ে। আর ওই পয়েন্টে লেনের বাইরে যেটুকু উন্মুক্ত স্থান থাকবে সেখানে করা হবে ফুলের বাগান। এতে করে যানজটের যেমন নিরসন হবে, তেমনি বাড়বে নগরীর সৌন্দর্যও। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন