‘চট্টলবীর’ মহিউদ্দিনের কুলখানিতে ২০০ গরু ও ৪০০ ছাগলের মেজবান!

  18-12-2017 01:53PM

পিএনএস ডেস্ক: ‘চট্টলবীর’ নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি আজ সোমবার। এ উপলক্ষে নগরীর ১৩টি কমিউনিটি সেন্টার ও চশমা হিলের বাড়িতে মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে।

নগরীর ১৪ স্থানে একযোগে আজ দুপুরে ওই মেজবানে প্রায় তিন লাখ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা থাকছে। এজন্য রবিবার রাতে দুই শতাধিক গরু ও চার শতাধিক ছাগল জবেহ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি বন্দরনগরী চট্টগ্রামের স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মেজবান। একসঙ্গে একই সময়ে ১৪ স্থানে এত লোকের খাবারের আয়োজন আগে কখনো হয়নি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লাখো মানুষ আজকের মেজবানে অংশ নেবেন বলে আশা করছেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

মেজবানে খাবারের তালিকায় আছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রিয় সাদাভাত, গরুর ঝালভুনা এবং নলা দিয়ে ছোলার ডাল। মুসলমান ছাড়া অন্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য থাকছে সাদাভাতের সঙ্গে ছাগলের মাংস ও নলা দিয়ে ডাল। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের মানুষের জন্য ভাগ করে দেওয়া হয়েছে নির্দিষ্ট কমিউনিটি সেন্টার। দ্য কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে রয়েছে সবচেয়ে বড় আয়োজন।

মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন সেখানে। ঢাকা থেকে আগত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেবেন এ মেজবানে।

এ প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘সোমবার আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কুলখানি উপলক্ষে মিলাদ মাহফিল ও মেজবানের আয়োজন রয়েছে। কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারের পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য রীমা কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া নগরবাসী যাতে অংশ নিতে পারেন সেজন্য আরও ছয়-সাতটি কমিউনিটি সেন্টারে মেজবানের আয়োজন রাখা হয়েছে। ’

তিনি জানান, সোমবার সকাল নয়টায় চশমা হিলের বাসায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে ছোট পরিসরে। সেখানে তাঁর মা হাসিনা মহিউদ্দিন, নারী নেতাকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা থাকবেন। কিং অব চিটাগাংয়ে সকাল ১১টা থেকে দলের নেতারা থাকবেন।

নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসান মোহাম্মদ শমসের বলেন, ‘চট্টগ্রামের বর্ষীয়ান নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কুলখানি পারিবারিকভাবে আয়োজন করা হয়েছে। এই বিশাল আয়োজনের ব্যবস্থাপনায় থাকছে নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। ’

রবিবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, নগরীর দুই নম্বর গেট এলাকার চশমা হিলে মেয়রগলিতে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে নারীদের জন্য মেজবানে জবেহ করা হয়েছে ২০টি গরু। কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে থাকছে ২০ গরু ও ৩০ ছাগলের মেজবান।

নগরীর জিইসি মোড়ে কে স্কয়ার কনভেনশন সেন্টারের মেজবানে ১৩ নম্বর পাহাড়তলী, ১৪ নম্বর লালখান বাজার ও ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং আসকারদীঘি পাড় এলাকার রীমা কমিউনিটি সেন্টারে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্য ধর্মের মানুষ মেজবানে অংশগ্রহণ করবেন।

চকবাজার এলাকায় কিশলয় কমিউনিটি সেন্টারে ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর, ১৬ নম্বর চকবাজার ও ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ড, পাঁচলাইশ সুইস পার্ক কনভেনশন সেন্টারে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড, লাভলেইন এলাকার স্মরণিকা ক্লাবে ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়ি, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি, ৩১ নম্বর আলকরণ, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ড, মুরাদপুর এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারে ৮ নম্বর শুলকবহর, ৪২ নম্বর নাসিরাবাদ এবং ৪৩ নম্বর আমিন শিল্পাঞ্চল ওয়ার্ড, কালামিয়া বাজার এলাকার কে বি কনভেনশন হলে ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়া, ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ও ৩৫ নম্বর বক্সিরহাট ওয়ার্ড, কাজির দেউরি ভিআইপি ব্যাংকুয়েটে ২১ নম্বর জামালখান ও ২২ নম্বর এনায়েতবাজার ওয়ার্ড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড বেপারিপাড়া এলাকায় গোল্ডেন টাচ কমিউনিটি সেন্টারে ২৩ নম্বর উত্তর পাঠানটুলী, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদ, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ, ২৮ নম্বর পাঠানটুলী, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙা এবং ৩৭ নম্বর মুনিরনগর ওয়ার্ড, পাহাড়তলী পোর্ট কানেকটিং রোড অলংকার এলাকায় সাগরিকা কমিউনিটি সেন্টারে ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলী, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী, ১২ নম্বর সরাইপাড়া এবং ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ড, স্টিল মিল এলাকার মুনভিউ কমিউনিটি সেন্টারে ৩৮ নম্বর দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর, ৩৯ নম্বর দক্ষিণ হালিশহর, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা, ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গা ও ৪৪ নম্বর পূর্ব হালিশহর ওয়ার্ড এবং বহদ্দারহাট মৌলভীপাড় এলাকার চান্দগাঁও কমিউনিটি সেন্টারে ৩ নম্বর পাঁচলাইশ, ৪ নম্বর চান্দগাঁও ও ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আজকের মেজবানে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, চশমা হিলের বাসভবনে মেজবানে রান্নার দায়িত্বে থাকছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রিয় বাবুর্চি মোহাম্মদ বাদশা। এছাড়া কিং অব চিটাগাং কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা থেকে আগত দলের শীর্ষ নেতা এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য মেজবানে রান্নার দায়িত্বে আছেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর আরেক প্রিয়ভাজন বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসেন।

বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসেন ও বাদশা গত ২৫ বছর ধরে মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে নানা স্থানে আয়োজিত মেজবানে রান্না করে আসছেন।

তিনি প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকীতে টুঙ্গিপাড়ায় মেজবান আয়োজনের জন্য ওই দুজনকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন। চাটগাঁইয়া মেজবানের গরুভুনা, কালাভুনাসহ চৌধুরীর পছন্দের বিভিন্ন মুখরোচক খাবার রান্নায় পারদর্শী তাঁরা। মহিউদ্দিন চৌধুরীর বদৌলতে এ দুই বাবুর্চির খ্যাতিও চট্টগ্রামের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ‘চট্টলবীর’ মহিউদ্দিন চৌধুরী।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন