বইমেলায় এসেছে তিন তালাক!

  18-02-2018 05:53PM

পিএনএস ডেস্ক : অমর একুশে বইমেলায় মুহাম্মদ শহিদুল ইসলামের নতুন বই ‌‌‘তিন তালাক ও নিকাহ হালালা’।

হিল্লা স্বরূপ, হিল্লার পরিস্থিতি কেন সৃষ্টি হয়, প্রতিকারের উপায় কি এ বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ’র আলোকে এই বইয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বহুবিধ প্রশ্নের জবাব।

‘শয়তান গুরু ইবলিস নিত্য ব্যস্ত কি করে পৃথিবীটা অশান্তি অপ্রীতিতে ছেয়ে দেয়া যায়। পৃথিবীর কোন মানুষকেই সে ভাল কাজে দেখতে চায় না। কিছু অসৎ অভিসন্ধি চরিতার্থের কাজে সে এতবেশি যতœশীল ও কল্পকমনা হয়ে উঠে, কাজের অর্গলতা এড়াতে সে প্রথমে নিভৃত নিস্তব্দ কোন সমুদ্রের মাঝে গিয়ে তার আস্তানা পত্তন করে, তারপর একাগ্র হয়। সে চায় মানুষ নানা অধর্ম, অন্যায়, অনাচার, অনৌচিত্যে ডুবে থাকুক। মানুষকে কতভাবে কতবেশি বিরোধ-বিবাদ, হানাহানি-মারামারিতে প্রলিপ্ত করা যায় তার খাটুনির অন্ত নেই। আর এসব কাজে সহযোগীতার জন্যও তার দপ্তরে নিযুক্ত আছে বহু শয়তান অনুচর । একেক জনের একেক দায়িত্ব। পৃথিবীতে যে যতবেশি ফিতনা-গোলযোগ লাগিয়ে দিতে পারবে সে ততবেশি গুরুর নৈকট্য পাবে। গুরুর একটু সন্তুষ্টি লাভের জন্য কতকিছুই না করে দেখায় তারা। কাজের শেষে একজন এসে বলে, ‘আমি আজ এই করেছি গুরু’। গুরু বলে, ‘তুই ছাই করেছিস’। আরেকজন এসে বলে, ‘আমি এই করেছি’। না, ‘তুই কিছুই করিসনি’। গুরু নারাজ। কিন্তু যখন কোন শিষ্য এসে বলে, ‘আমি আজ তেমন কিছু করিনি, তবে একলোক আমার কুমন্ত্রণায় পা দিয়ে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে’। এবার শয়তান গুরু ইবলিসের প্রমোদলীলা দেখে কে? শিষ্যকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘সাবাস! কাজের কাজটি তুইই করেছিস’। আয় বুকে আয়।’ উপরোক্ত হাদীসের মর্মবাণী এই।

শয়তান চায় মানুষ উচ্চহারে তালাক দিক, আর মহান আল্লাহর ইচ্ছা হলো মানুষ একেবারে নিরুপায় না হলে তালাকের চিন্তা থেকেও দূরে থাকুক। শয়তান তার কাজ অবিশ্রান্তে চালিয়ে যাচ্ছে। মানুষও আল্লাহ বিমুখ হয়ে প্রতিনিয়ত শয়তানের ফাঁদে পা রাখছে আর ভুল করছে। এই ভুলের দরুনই কখনও কখনও মানুষ ক্রোধের বশীভূত হয়ে কুরআন সুন্নাহর তোয়াক্কা না করেই আপন স্ত্রীকে একসাথে তিন তালাক দিয়ে বসে। পরে রাগ প্রশমিত হলে স্বামী স্ত্রী উভয়েই যখন পরস্পরকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে, তখন সমাজের একদল স্বার্থাণে¦ষী, গোঁড়া ও অপরিণামদর্শী অসূর তাদের সংসার যাত্রায় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় আর ‘শরীয়ত গেল, শরীয়ত গেল’ বলে চিল্লা ফাল্লা আরম্ভ করে দেয়। বস্তুত এরাই ইবলিসের প্রকৃত অনুচর যারা ইবলিসের পক্ষ নিয়ে ইবলিসকেই জয়ী হতে সাহায্য করে। তিক্ত হলেও সত্য যে, সভ্যতার এ যুগে এসেও আমাদের মুসলিম সমাজ বহুলাংশেই কুসংস্কারে নিমজ্জিত। এই সমাজে আত্মহত্যা অমার্জনীয় পাপ জেনেও কেউ বিষপান করে বাঁচতে চাইলে তাকে বাঁচাতে সবাই এগিয়ে আসতে পারে, কিন্তু ভুল করেও যদি কেউ একটিবার তিন তালাক বলে ফেলে তো সব শেষ, তাকে বাঁচানোর আর কোন উপায় নেই। তখন অন্ধ, কুশিক্ষিত সমাজপতিদের চোখে এই একত্রিত তিন তালাক আত্মহত্যার চেয়েও অমার্জনীয় অপরাধ হয়ে দাঁড়ায়। তারপর স্ত্রীর পরিশুদ্ধা হওয়ার নামে অন্যের বিছানায় গা বিলানো থেকে শুরু করে কত নোংরামীই না দেখতে হয় ধর্মের নামে। সমাজের এই সমস্ত অশুভ, অসুস্থ অপচ্ছায়াগুলোকে কুরআন সুন্নাহর বাস্তব বাণী আরেকবার মনে করিয়ে দিতেই আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।

মুুসলিম সমাজে বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও কুশিক্ষার কারনে তালাকের বিষয়ে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়ি হয়ে আসছে। সম্প্রতি এ নিয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও ঝড় ওঠেছে। আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে তালাকের এই বাড়াবাড়ি। সে দেশের সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলছে। চলছে নানা তর্ক বিতর্ক। কুরআন সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়ে অনেক মুসলমানকেই লজ্জায় মুখ লুকাতে হচ্ছে। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হিন্দুদের কিছু চক্র মুসলিম নারীদের তাদের প্রাপ্য সম্মান ও অধিকার বুঝিয়ে দেয়ার নাম করে নানা লোভনীয় প্রস্তাবও রেখে আসছে। এই তো কিছুদিন আগে ভারতের ‘হিন্দু মহাসভা’ সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারী মিঃ পূজা শকুন পান্ডে তার এক বক্তব্যে মুসলিম মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনারা তিন তালাক ও নিকাহে হালালা হতে মুক্তি পেতে হিন্দু হয়ে যান। আপনাদের আইন যদি ন্যায় বিচার না দিতে পারে তাহলে আমরা দেব।’ কোন কোন মুসলিম দম্পতিও তাদের সংসার বাঁচাতে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আশংকা হচ্ছে, এই ফিতনা অদূর ভবিষ্যতে আরও একটি বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারন হবে। আসলে মুসলমানদের ধর্মীয় বিষয়ে হিন্দুদের নাক গলানো যতটা না দুঃখজনক, তারচেয়েও দুঃখজনক হলো খোদ আমরা মুসলমানরাই এসব বিষয়ে কুরআন সুন্নাহ নির্দেশিত বিধি-বিধানকে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে মেরেছি আর বিভিন্ন পীর-ফকিরের গাল-গপ্পকে জীবন বিধান বলে ধারণ করে বসে আছি। হে মুসলিম! যদি ন্যূনতম বিবেকবোধটুকুও আপনার অন্তরে অবশিষ্ট থাকে তাহলে আপনাকে আজ দুটো প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে, বলুন কোনটি বড়? দল না দলিল? কোন দলিল বড়? ওহী-ভিত্তিক নাকি মনুষ্য-প্রদত্ত? এই গ্রন্থণা আপনার জন্য যদি আপনার নিকট দলের চেয়ে দলিল মূখ্য হয় আর দলিল হিসেবে ওহী-ভিত্তিক দলিলই অধিক শক্তিশালী হয়।

এই গ্রন্থণায় তালাকের বিষয়ে পবিত্র কুরআন সুন্নাহ’ অনুমোদিত প্রকৃত বিধান কি, তালাক কি দূর্ঘটনা নাকি প্রক্রিয়া, একসাথে তিন তালাক দিয়ে বসলে তিন তালাকই কার্যকর হবে নাকি এক তালাক এবং হিল্লা বিষয়ে ইসলাম কি বলে তা সাতটি অধ্যায়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। আশা করছি তিন তালাক বিষয়ে ভারতে চলমান বিতর্কেও এই গ্রন্থণা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। প্রিয় পাঠক! গ্রন্থণায় উপস্থাপিত তথ্য উপাত্তগুলো দলনিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিবেচনা করুন। বিভ্রম হলেই যাচাই করুন। আমি যথাযথ চেষ্টা করেছি, যাতে কোন গতানুগতিক বক্তব্য বা প্রবৃত্তি প্রসূত কোন মন্তব্যের অভিনিবেশ না ঘটে যায়। পাতায় পাতায় দলিল প্রমাণাদির উদ্ধৃতি যুক্ত করেছি। প্রতিপক্ষের আপত্তিসমূহেরও সমুচিৎ জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছি। এতদসত্ত্বেও ভুল ভ্রান্তি থেকে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাজেই, যখনই কোন প্রকার ভুল ত্রুটি কোন সুহৃদ পাঠকের দৃষ্টিগোচর হবে সঙ্গে সঙ্গে তা অবহিত করে বাধিত করবেন। আপনার সুচিন্তিত পরামর্শ বইটিকে আরও সুসজ্জিত ও সমৃদ্ধ করে তুলবে।

তিন তালাক ও নিকাহ হালালা, লেখক : মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, বিষয় : ইসলামিক রেফারেন্স, প্রকাশক: মুন্নী প্রকাশন, প্রকাশকাল: অমর একুশে বইমেলা ২০১৮, প্রচ্ছদ: ফারহান শাহরিয়ার, ISBN: 978-984-8208-007-7, ভাষা: বাংলা, বাঁধাই: বোর্ড বাঁধাই, মূল্য: ৩৫০ টাকা, ঘরে বসে বইটি কিনতে ফোন করুন, মুন্নী প্রকাশন : ০১৭১১-৮৩৪৯৪৪

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন