‘সমাজে অবিচার থাকলে দারিদ্র্য বৈষম্য বাড়ে’

  25-02-2018 11:13PM

পিএনএস ডেস্ক: উচ্চবিত্তরা রাজনৈতিক এবং আইন প্রণয়নের মতো বিষয়গুলোকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে, এতে বৈষম্য বৃদ্ধি পায়। সমাজে অবিচার থাকলে দারিদ্র্য বাড়ে। আমরা সমস্যার উপরের দিকগুলো নিয়েই বেশি আলোচনা করি, সমস্যার ভেতরে যাচ্ছি না। ফলে দারিদ্র্য বিমোচনসহ অন্যন্য সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত সংলাপে এসব কথা বলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তার গবেষণার উপর এই সংলাপের আয়োজন করা হয়।

এতে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, সেলিম রায়হান, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম প্রমুখ। সংলাপে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার উপর জোর দেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে কমাতে হবে বৈষম্য। নিশ্চিত করতে হবে সুশাসন, যা উন্নয়নের পূর্বশর্ত। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উন্নয়ন হচ্ছে ঠিকই কিন্তু সেটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়।

রেহমান সোবহান বলেন, দক্ষিণ এশিয়াতে বৈষম্য বড় সমস্যা। এর কারণ হলো জনগণ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে থাকার কারণে বণ্টনে সাম্যতা আনা যায় না। এই অঞ্চলে শিক্ষার গুনগতমানেও পার্থক্য রয়েছে। অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে জোর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কৃষির জন্য সংস্কার কমিশন গঠন জরুরি। এই কমিশন কৃষির উন্নয়নে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করবে।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছি, উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ জরুরি। কিন্তু আমাদের বেসরকারি বিনিয়োগ কাঙ্ক্ষি হারে বাড়ছে না। ২০০৮ সালে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ২১ শতাংশ বিনিয়োগ ছিল। ২০১৬ সালে এসে তা ২৩ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই হারে বিনিয়োগ বাড়লে তা হতাশাজনক।

তিনি বলেন, যেসব দেশে উন্নয়ন হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে সুশাসন। কারণ সুশাসনই উন্নয়নের পূর্বশত। কিন্তু আমাদের দেশে প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যারা ভালো করছে, তার পুরস্কার নেই। আর যারা খারাপ করছে, তাদেরও শাস্তি দেয়া হয় না। এতে প্রশাসনিক কাঠামো প্রতিযোগিতামূলক হয় না। একইভাবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায় না। গ্রামে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও বাড়ানো দরকার।


ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নয়নের পলিসির ধারাবাহিকতা জরুরি। আর রাষ্ট্র ও বাজারের মধ্যে সমন্বয় করে দেশের আর্থিক পলিসি করতে হবে। কর ব্যবস্থার জন্য যে আইন রয়েছে, তাতে প্রতিবছর পরিবর্তন আনা হয়। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নয়। কারণ এ ধরনের পরিবর্তন করদাতা ও সরকার সবার জন্য সমস্যা তৈরি করে।

তিনি বলেন, আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কার জরুরি। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে না পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। আর সুশাসন না থাকলে কোনো উন্নয়ন টেকসই নয়। উদারণ দিয়ে তিনি বলেন, ভারতে প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়িয়ে গেছে। ফলে তাদের অর্থনীতি দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। এ সময়ে মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতির মধ্যে আরও সমন্বয়ের ব্যাপারে জোর দেন তিনি। তার মতে, এসব নীতি যখন তৈরি করা হয়, তখন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের উপর কী প্রভাব পড়বে, তার হিসাব ওইভাবে থাকে না। ফলে সবাই উন্নয়নের সফুল পাবে, তা নিশ্চিত করা যায় না।

ড. সেলিম রায়হান বলেন, আমরা সব কিছুতেই ভারত বা অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করি। কিন্তু ওই দেশের মতো আমাদের রাজনীতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র না থাকলে কোনোকিছুই হবে না। কারণ শনিবার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ যে আচরণ করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রাহণযোগ্য নয়। দেশের মানুষ শান্তি চায়। কিন্তু আমরা কী দেখছি। এটি ভাবা যায় না। রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির পালনের সুযোগ এককেন্দ্রিক।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ৩৫ কোটি বই ছাপা হয়েছে। এই বইয়ে স্বাধীনতার ইতিহাসে সোরাওয়ার্দীর নাম নেই। শিক্ষার ইতিহাসে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নাম নেই। উন্নয়ন অর্থনীতিতে রেহমান সোবহানের নাম নেই। এটি গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রশ্নফাঁস সম্পর্কে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, যেসব শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত তাদের ধরতে হবে। আমলাদের কারণে শিক্ষাব্যবস্থা এই অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আর আমলাদের দিয়ে এই ঘটনা তদন্ত করানো হচ্ছে। এসব কিছুই অস্বাভাবিক।

মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, একাত্তরে যে চেতনা নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, ওই চেতনায় ফিরে যেতে হবে। কারণ চারটি মূলনীতির কোনোটিই দেশে নেই।

ড. মসিউর রহমান বলেন, শহরে মানুষ ঋণ পায় বলে যে অভিযোগ এসেছে, তা পুরোপুরি ঠিক নয়। কারণ সরকার ঋণ ব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে। গ্রামে ঋণ বিতরণ বেড়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করা হয়েছে। আরও কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন