আশিকুরের বুকে কার গুলি?

  16-04-2018 02:45PM

পিএনএস ডেস্ক : কোটা সংস্কারের আন্দোলন করতে গিয়ে বুকে গুলি লাগে আশিকুর রহমানের। গুলিতে তাঁর যকৃৎ ও ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখনো শরীরের ভেতরে রয়ে গেছে গুলিটি। আশিকুর এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন। তবে ডাক্তাররা বলছেন, তিনি শঙ্কামুক্ত।

আশিকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ৮ এপ্রিল দিবাগত রাত দুইটার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। আশিকুরের বন্ধুরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের একটি পক্ষ রাতে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করে, তখনই গুলিবিদ্ধ হন আশিকুর। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে থাকা শিখ সম্প্রদায়ের উপাসনালয় গুরুদুয়ারা নানক শাহীর ঠিক সামনে হঠাৎ তিনি ঢলে পড়েন। তাঁদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছোড়া গুলিই আশিকুরের বুকে লাগে।

শুধু আশিকুরই নন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুরুতর আহত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও দুজন ছাত্র। তাঁদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. শাহরিয়ার হোসেন, অন্যজন নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. তানভীর হাসান। পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির আটটি স্প্লিন্টার লাগে শাহরিয়ারের পিঠে। আর পুলিশের লাঠিপেটায় মাথা ফেটে যায় তানভীর হাসানের।

পরিবার জেনে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় আশিকুরের বুকে গুলি লাগার বিষয়টি ধামাচাপা দেন তাঁর বন্ধুরা। ঘটনার পাঁচ দিন পর আশিকুর একেবারেই শঙ্কামুক্ত এমনটা বোঝার পর তাঁরা বিষয়টি তাঁর পরিবারকে জানান। এদিকে বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও আশিকুরকে পাঠিয়ে দেয় আইসিইউতে।

গতকাল আইসিইউতে গেলে কথা হয় আশিকুরের এক সহপাঠীর সঙ্গে, যিনি ঘটনার সময় আশিকুরের সঙ্গে ছিলেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থান নেওয়া ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা রাত দুইটার দিকে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। তখন টিএসসি থেকে আন্দোলনকারীরা পাল্টা ধাওয়া দিলে ছাত্রলীগের কর্মীরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে উপাচার্যের বাসভবনের দিকে সরে যান। এ সময় আশিকুর গুলিবিদ্ধ হন।

আশিকুর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক ফারুক হোসাইনের অধীনে আছেন। জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, ‘গুলিটা ঢুকে আর বের হয়নি। ভেতরেই আছে। ইনজুরিটা লিভার এবং লাংয়ে। তবে তাঁর অবস্থা এখন খারাপ না।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর এবং ঢাকা কলেজের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। আন্দোলনকারীদের ধাওয়া খেয়ে তাঁদেরই অন্তত তিনজন গুলি করেছিলেন।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘এই অভিযোগ ভিত্তিহীন। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় ছাত্রলীগের কেউ গুলি ছোড়েনি।’ ওই দিন ক্যাম্পাসের ওই স্থানে পুলিশ ছিল না, তা হলে কে গুলি করল, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কে গুলি ছুড়েছে সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত করলে হয়তো বের করতে পারবে।

আশিকুরের বড় ভাই আকরাম হোসেন এবং মা আফরোজা আক্তারকে পাওয়া যায় কেবিনে। ওই একই কেবিনে চিকিৎসাধীন পুলিশের ছররা গুলিতে আহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মো. শাহরিয়ার হোসেন।

মা আফরোজা আক্তার বলেন, পরশু রাতে তাঁরা এসেছেন। এখন আশিকুর ভালো আছেন।

শহীদুল্লাহ হলের বর্ধিত ভবনের বাসিন্দা শাহরিয়ার হোসেনের পিঠজুড়ে কালো গোল গোল আটটি দাগ। কেবিনের একটি বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে ছিলেন। শাহরিয়ার হোসেন বলেন, শাহবাগে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল আর রাবার বুলেট ছুড়ছিল। তখন পেছন ফিরলে তাঁর পিঠে এসে গুলি লাগে। নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. তানভীর হাসানের আহত হওয়ার ঘটনাটা একটু ভিন্ন। পুলিশের হাত থেকে আন্দোলনকারীদের বাঁচাতে তিনি মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলেন টিয়ার শেল আর লাঠি নিয়ে ধাবমান পুলিশের। দুই হাত দুদিকে ছড়িয়ে তাঁর দাঁড়িয়ে যাওয়ার ছবিটি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের লাঠির আঘাতে তানভীরের মাথা ফেটে গিয়েছিল।

আহত হওয়ার সময়কার ঘটনা স্মরণ করতে গিয়ে তানভীর বলেন, আন্দোলনকারীদের সামনে থেকে তিনি পুলিশকে উদ্দেশ করে হাতজোড় করে আর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ না করতে অনুরোধ করেন। পুলিশও তাঁদের বসে যেতে বলে। আন্দোলনকারীরা বসলেও পুলিশ ধেয়ে আসে। তিনি তখন বুঝতে পারলেন যে পুলিশকে যদি কয়েক মিনিট ঠেকানো না যায়, তাহলে এক থেকে দেড় শ আন্দোলনকারী বেধড়ক মার খাবেন। এই ভেবে তিনি একাই উঠে গিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে যান। এরপর পুলিশ তাঁকে বেধড়ক পিটুনি দেয়। তাঁর সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন।

তানভীর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় বকশীবাজার এলাকায় বিএনপি-ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে তিনি আহত হয়েছিলেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে তিনি বললেন, ‘আমি প্রথমে একজন ছাত্র। তারপর ছাত্রলীগ নেতা। আদর্শিক জায়গা থেকে এই আন্দোলন আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে বলেই অংশ নিয়েছিলাম।’

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবি
মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবিতে গতকাল গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা এবং সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে মানববন্ধন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের স্থানীয় শাখা এই কর্মসূচির আয়োজন করে।

কর্মসূচি থেকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে দেশ স্বাধীন করেছেন। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে তাঁদের অসম্মান করা হচ্ছে।

তাঁরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইনের পাশাপাশি রাজাকারদের সন্তানদের বাংলাদেশের সব চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণার দাবি জানান।

এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নীলফামারীর সৈয়দপুরে জাতীয় পার্টির এক কর্মিসভায় বলেছেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছিল ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন। প্রধানমন্ত্রী তা উপলব্ধি করতে পেরে কোটাপদ্ধতি একেবারে বাতিল করেছেন। তবে কোটাপদ্ধতি একেবারে বাতিল করা ঠিক হবে না।-প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন