২৬ এপ্রিল শেরপুরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী গণহত্যা চালায়

  25-04-2018 04:13PM

পিএনএস, শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা : আজ ২৬এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে সারাদেশের মত বগুড়ার শেরপুরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল। এই অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আমান উল্লাহ খানের বাড়ি জ্বালিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তাদের ধ্বংস লিলা শুরু করে। এরপর ঘোগা, দড়িমুকুন্দ, বাগড়া কলোনি, শেরপুর শহর ও কল্যাণী এলাকায় গণহত্যাসহ ধ্বংস লীলা চালায়। হানাদারররা দড়িমুকুন্দ গ্রামের লোকদের ডেকে নিয়ে গ্রামের প্রবেশ পথের দু’ধারে লাইনে দাঁড় করিয়ে দেয়।

একপর্যায়ে গুলি করে হত্যা করে ২৪জন স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাংলাদেশীকে। তারপর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় গ্রামের প্রতিটি বাড়ি। নিমিষেই মৃত্যুপুরীতে পরিনত হয় দড়িমুকুন্দ গ্রাম। হতাহতদের আর্তচিৎকারে সেদিন দড়িমুকুন্দ গ্রামের আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে ওঠে। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গুলিতে ওইদিন যারা শহীদ হয়েছিলেন তাঁরা হচ্ছেন, আজাহার আলী ফকির, ওসমান গণি ফকির, আজিজুর রহমান, একরামুল হক, সুজার উদ্দিন, সেকেন্দার আলী, বুল মাজন মিয়া, রমজান আলী, মোখলেছুর রহমান, ইসাহাক আলী, আবেদ আলী, আলিমুদ্দিন, ছোবহান আলী, গুইয়া প্রামানিক, দলিল উদ্দিন, হাসেন আলী, উজির উদ্দিন, আয়েন উদ্দিন, আফজাল হোসেন, মোহাম্মাদ আলী, আজিমুদ্দিন, নেওয়াজ উদ্দিন, হায়দার আলী ও জপি প্রামানিক। ধ্বংসযোজ্ঞ শেষে পাকিস্তানী হায়েনার দল গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ভীত-সন্ত্রস্ত লোকজন গুলিতে নিহত ২৪জনকে ঘটনাস্থলের পাশেই কবর দিয়ে রাখেন। এরপর বাগড়া কলোনিতেও নির্মমভাবে হত্যাযোজ্ঞ চালানো হয়। এখানে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ জন বাঙালী শহীদ হন।

সেদিনের ঘটনায় সকল শহীদদের নাম জানা যায়নি। ব্যাপক অনুসন্ধানের পর যাদের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হচ্ছেন, আফসার মন্ডল, শরকত মন্ডল, আলী আকবর মন্ডল, আয়েজ উদ্দিন মন্ডল, আলতাব সেখ, সিফাত মোল্লা, কুদ্দুস, হোসেন, মনছের, খোকা, আফজাল, ঈমান, হযরত, সাত্তার, রিয়াজ উদ্দিন, যদিমুদ্দিন, সদর আলী সরকার, আজিজ ও নবা ফকির। একইভাবে শেরপুর পৌরশহর ও কল্যাণী এলাকায় রাজাকার, আলবদরদের সহযোগিতায় পাকহানাদাররা ব্যাপক গণহত্যা চালায়। এরমধ্যে শহরের প্রায় অর্ধশত শহীদের পরিচয় পাওয়া গেছে।

তাঁরা হলেন রঞ্জন বসাক, বিশ্বনাথ বসাক, হরিপদ কর্মকার, মান্টু সাহা, যদুয়া বাঁশফর, সৈয়দ সাইদুজ্জামান, সৈয়দ তপন, হোরা সরকার, কৃষ্ণ বিহারী দত্ত, শতীর্ষ চন্দ্র কর্মকার, জহুরুল হক, তারাপদ কর্মকার, বিরেন্দ্র নাথ কুন্ডু, স্বপন কুন্ডু, জটুয়া চৌহান, সুবোধ কর্মর্কার, মনিবালা সাহা, নারায়ন মোহন্ত, গুপি মোহন্ত, আলোপাল, শতীয সরকার, ঝুলু মন্ডল, পুন্ন মৈত্রী, ডানু চক্রবর্তী, কাচু সাহা, রাধা বল¬ব সাহা, ডা. আলী আজগর, আমীর শেখ, সমর বক্স, জাফর প্রামাণিক, মোসলেম আকন্দ, মমতাজ আকন্দ, লালু প্রামাণিক, যোগেন তাম্বুলী, নরেন তাম্বুলী, নিমু বসাক, মণি গোপাল কুণ্ডুৃ, অবিনাশ কুণ্ডু, অমরেশ কুণ্ডু, রহমান বিশ্বাস, আব্দুস সাত্তার, সোনিয়া মোহন্ত, নিপেন কুণ্ডু, সচিন্দ্র নাথ সরকার, রবি দত্ত, মনছু দত্ত, এজরাজ কুণ্ডু, বনরাস চন্দ্রদেব ও গোলাম হোসেন।

এদিকে ২০০২সালের ২৬মার্চ তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রচেষ্টায় দরিমুকন্দ গ্রামটিতে শহীদদের নামফলক স্থাপন ও গণকবরটি প্রাচীর দিয়ে সংরক্ষিত করা হয়। এরপর সেখানে একটি উন্নতমানের শেড নির্মাণ করা হয়। এছাড়া কল্যাণীতে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। বাকি গণকবরগুলোর অবস্থা করুণ। বিশেষ করে বাগড়া, কল্যানী, গোপালপুর এবং ঘোগা বদ্ধভূমি এখন শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ, গণকবরগুলো সংরক্ষণের জন্য তাঁরা একাধিকবার উপজেলা পরিষদে লিখিত ও মৌখিক আবেদন করেছেন। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন অদ্যবধি পর্যন্ত কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে তাঁরা দাবি করেন।

এছাড়া পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শেরপুর পৌর শহরেও ব্যাপক গণহত্যা চালায়। আশার কথা হচ্ছে, শেরপুর পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সেসময়ে নিহতদের স্মরণে শহীদ স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করেন। যা মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মাঝে ইতিবাচক অনুভূতির সঞ্চার হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন