সারাদিনের রোজা শেষে রাস্তাতেই যাদের ইফতার

  20-05-2018 12:00PM

পিএনএস ডেস্ক:সূর্যটা তখনও পশ্চিম আকাশে ডুবে নাই। মাগরিবের আজান হতে সামান্য কিছু সময় বাকি আছে। রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ যখন ব্যস্ত হয়ে ছুটছে পরিবারের লোকজনের সাথে ইফতার করতে। ঠিক এমন সময়েই কিছু মানুষ রাস্তার পাশে ফুটপাতে অথবা খোলা জায়গায় বসে পড়েন সারাদিনের রোজা শেষে ইফতার করতে।

খেটে খাওয়া মানুষগুলো ফুটপাতে বসে সামান্য সঞ্চয় থেকে কেনা ছোলা মুড়ি দিয়ে ইফতার করেন। আবার কেউ কেউ কোন মসজিদ, মাদ্রাসা থেকে পাওয়া খাবার দিয়ে ইফতার করেন। তাঁদের ইফতারের আয়োজন খুব সামান্য হলেও, তৃপ্তি ও শুকরিয়া আদায়ের কোনো ঘাটতি দেখা যায় না।

প্রতিদিন ইফতারের আগ মুহূর্তে ঢাকার মূল কিছু কিছু সড়ক ছাড়া প্রায় রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। চারদিকে তখন তৈরি হয় এক ধরণের নীরবতা। লোকজনও রাস্তায় খুব একটা দেখা যায় না। ছিন্নমূল কিছু মানুষ, কাজের সন্ধানে বাইরে থাকা রিকশাওয়ালা, সিএনজি ও বাস চালকরা থাকে রাস্তায়। ইফতারের সময় হলে পথের পাশেই তাদেরকে ইফতার করতে দেখা যায়।

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদের রাস্তার পাশেই ইফতার করতে দেখা যায় আহমেদ নামের মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে। কাছে গিয়ে, কি করেন জানতে চাইলে বলেন, রিক্সা চালাই। তবে এক্সিডেন্ট করার পর হাঁটুতে মাঝে মাঝে অনেক ব্যথা করে তখন রিক্সা চালাইতে পারি না। আহমেদের বাড়ি রাজবাড়ি জেলার, পাচুরিয়ার নবগ্রাম গ্রামে। রাস্তার পাশে ইফতার করার কারণ জানতে চাইলে বলে, ইফতারের অনেক দাম কিনতে পারি না তাই এই মসজিদের দেওয়া ইফতার দিয়ে রোজা ভাঙ্গি।

একই স্থানে রাস্তার পাশে বসে ইফতার করছিলেন আরও কয়েকজন বৃদ্ধ মানুষ। তাঁদের একজনের সাথে কথা বলে জানা যায় তার নাম ইউসুফ আলি। ইউসুফ আলির বয়স ৭০ বছর। বাড়ি দুর্গাপুরে। ঢাকায় সে একাই থাকে। তার দুই সন্তান যদিও তাঁরা কেউ বাবার খোঁজ খবর নেয়না। কোন ধরনের সহযোগিতাও করে না বাবাকে। ইউসুফ আলি আগে কাঠ কাটতো তবে এখন বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোন কাজ করতে পারে না। মানুষের কাছে থেকে পাওয়া খাবার ও টাকা-পয়সা দিয়েই চলে তার জীবন।

ধানমন্ডি তাকওয়া মসজিদ থেকে একটু দূরে রিক্সার উপর বসে ছোলা-মুড়ি দিয়ে ইফতার করছিলেন মোহাম্মদ গাজী নামের এক রিক্সাচালক। গাজীর বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহে। ঢাকায় ৩০ বছর ধরে সে রিক্সা চালায়। ঢাকায় থাকেন মোহাম্মদপুরে তিন হাজার টাকার ভাড়া বাসায়। বাসায় আছে তার স্ত্রী এক ছেলে এবং মেয়ে। রাস্তার পাশে একা একা ইফতার করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে তিনি জানান, ভালতো লাগে না তয় উপায় নাই, কি করবো কন? আমার ছেলে মেয়ে দুইজন লেখাপড়া করে। অনেক খরচ লাগে সামলাইতে পারি না। রিক্সা চালাইতে চালাইতে যেইহানে সময় হয় সেইহানেই ইফতার করি। বাড়ি যাওনের টাইম নাই।

রোজার মূলমন্ত্রই যেখানে ধনী-গরিবের বৈষম্য, ব্যবধান ও ভেদাভেদ কমানো কিন্তু ইফতারের আয়োজন দেখেই বোঝা যায় আমাদের সমাজব্যবস্থায় ব্যবধান কতটা প্রকট। সাধ থাকলেও সামর্থ্য না থাকায় গরীব ও দরিদ্রদের কপালে জোটে না নামীদামী লোভনীয় কোন ইফতার। তাঁদের নির্ভর করতে হয় ফুটপাতের ছোলা মুড়ির উপরেই।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন