হাসিনা-মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে যেসব ইস্যু নিয়ে আলোচনা হবে

  24-05-2018 12:36PM

পিএনএস ডেস্ক: রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বাংলাদেশ ভবন' উদ্বোধন করতে শুক্রবার (২৫ মে) শান্তিনিকেতন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও থাকছেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে শান্তি নিকেতনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়াদি নিয়ে বৈঠকে বসবেন।

আওয়ামী লীগ সরকারে মেয়াদপূর্তির আগে এটিই দুই দেশের সরকার প্রধানের শেষ বৈঠক। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে হাসিনা-মোদির এ বৈঠক দুই দেশের কূটনৈতিক মহলের কাছেই পাচ্ছে বাড়তি গুরুত্ব। কোন কোন ইস্যু নিয়ে প্রতিবেশী দেশ দুটোর প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করবেন, এ নিয়ে কূটনৈতিকদের আগ্রহ এখন তুঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রীর শান্তি নিকেতন সফরের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানাতে বুধবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এক সংবাদ সম্মেলন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন। এতে হাসিনা-মোদির বৈঠক প্রসঙ্গেই মন্ত্রীকে সবচেয়ে বেশি প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে।দুই প্রতিবেশী দেশের এ শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে কিনা জানতে চাইলে আবুল হাসান মাহমুদ আলী কৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, এটা নির্ভর করছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ওপর। মোদি চাইলে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়াসহ বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভারতের যে অবদান তা বাংলাদেশ কখনো ভুলেনি।কাজেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের আগ্রহ থাকতেই পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গও আলোচনায় উঠে আসতেই পারে।

তিনি বলেন, দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে গুরুত্ব পাবে রোহিঙ্গা সংকট, বিশেষত বাস্তুচ্যুতদের ফেরাতে ভারতের কার্যকর সহায়তা পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মোদির সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে অবকাঠামো তৈরিতে ভারত সহযোগিতা করবে বলে এর আগে অনুষ্ঠিত দ্বি-পাক্ষীয় বৈঠকে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

দীর্ঘদিন ঘিরে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে কি-না তাও স্পষ্ট করেননি পররাষ্ট্র মন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসাবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কোন প্রতিনিধির নাম না থাকায় তিস্তা আলোচনা আদৌ হবে কিনা সেই প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর দেননি তিনি। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এ নিয়ে কাজ চলছে এবং অগ্রগতি হচ্ছে, যথাসময়ে জানতে পারবেন।

অর্ধযুগ আগে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় মমতা ব্যানার্জীর আপত্তিতে ঝুলে যাওয়ার পর তিস্তার জট আর খোলেনি। নয়া দিল্লীতে পালাবদলে ক্ষমতায় আসা বিজেপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আশা দিলে এখনও মমতাকে রাজি করাতে পারেননি। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য তিস্তার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে দ্বিপক্ষীয় যে কোন বৈঠকেই ঢাকার পক্ষ থেকে নয়া দিল্লীকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে দুদিনের সরকারি সফরে শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলকাতা যাচ্ছেন। এ সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য-সচিব এবং গুণীজনরা সঙ্গী হলেও সেই তালিকায় নেই পানিসম্পদ মন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা। এর আগে ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ‌ব্যানার্জির আপত্তিতে তা থমকে যায়। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এই ইস্যুতে মমতা এখনো অনড় অবস্থানে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যকার আনুষ্ঠানিক আলোচনায় মমতা আমন্ত্রিত হলেও তার উপস্থিতির বিষয়ে এখনো ধূম্রজাল রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলীও এ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলেননি। তিনি শুধু বলেছেন, সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির দেখা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী সংবাদ সম্মেলনে জানান, পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তনে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি.লিট) উপাধি পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ২৬ মে (শনিবার) সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে এই উপাধি দেয়া হবে।

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট প্রধানমন্ত্রী ও তার সফর সঙ্গীদের নিয়ে শুক্রবার সকালে শাহজালাল বিমানবন্দর ছেড়ে সকাল ৯টায় (স্থানীয় সময়) কলকাতায় নেতাজী সুবাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার উত্তরে বীরভূম জেলার বোলপুর শান্তিনিকেতনে যাবেন। বিশ্ব ভারতীর উপাচার্য প্রফেসর সবুজ কলি সেন শান্তিনিকেতনে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর শেখ হাসিনা বিশ্ব ভারতীর সমাবর্তনে যোগ দেবেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত থাকবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন করবেন।

মন্ত্রী জানান, এই ভবনে নির্মিত হয়েছে আধুনিক থিয়েটার, প্রদর্শনী কক্ষ, বিশাল লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে রয়েছে সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক সম্পর্কিত গ্রন্থ। এছাড়া ভবনের প্রবেশ দ্বারের দুই প্রান্তে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মুর‌্যাল স্থাপন করা হয়েছে। এরপর শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন