যেমন আছেন রাবির সেই তরিকুল

  14-07-2018 08:03PM

পিএনএস ডেস্ক : কোটা সংস্কার আন্দোলনে আহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারিকের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। আর কয়েকদিন পরে তরিকুল ক্রাচে ভর দিয়ে একটু হাঁটা-চলাও করতে পারবে।

গত ৯ জুলাই তারিকের পায়ে অস্ত্রপচার করার পর বর্তমানে তার অবস্থা ভালোর দিকে। তরিকুল বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

তরিকুলকে ঢাকায় নিয়ে আসা তার বন্ধু মঞ্জুরুল আলম জানান, ১১ জুলাই রাজধানীর একটি হাসপাতালে এই অপারেশন করা হয়েছে। আর এখন সেই পায়ে তীব্র ব্যাথা রয়ে গেছে। লাঠির আঘাতে ওর হাতের মাংসগুলো ফুলে আছে। কোথাও কোথাও রক্ত জমাট হয়ে আছে। সেখানে ‘ঘা’ হয়ে গেছে। যেগুলো শোকাতে আরো সময় লাগবে। মেরুদণ্ড, কোমর ও পায়ের জন্য থেরাপি দেওয়া হচ্ছে।

তরিকুলকে কোথায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সেটা প্রকাশ না করার কারণ জানতে চাইলে ঢাকায় নিয়ে আসার বন্ধু মঞ্জুরুল আলম বলেন, তাহলে আমাদেরকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বের করে দেবার কারণ কি? আমরা কি বড় অপরাধী ছিলাম?’

তরিকুলের বন্ধু বলেন, ‘ওর শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো না। যে পা ভেঙে গেছে সেটা ভীষণ ব্যাথা করে। কোমড়ে যে হাতুড়ি পেটা হয়েছিল সেটার কারণে উঠতে বা বসতে পারে না। কোন কিছু খেলে সাথে সাথে বমি করে। ডাক্তাররা বলছে সব কিছু ঠিক হতে এখনও দুই সপ্তাহ লাগবে।’

তবে তরিকুলের কোমড়ের হাড় ভাঙেনি বলে ডাক্তাররা নিশ্চিত করেছেন বলেও জানান তার সেই বন্ধু। তিনি বলেন, যেখানে হাতুড়ির আঘাত লেগেছে সেটা নিয়ে এক ডাক্তার বলেছিল ফেঁটে গেছে হাড়। তবে ঢাকায় আসার পর ডাক্তার বলেছে তেমন কোন সমস্যা নেই।

মঞ্জুরুলজানান, এখন পর্যন্ত তার বন্ধুর চিকিৎসা চলছে দানের টাকায়। কিন্তু তারা আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক টাকার বিয়ষটি এখন দেখাশোনা করছেন। তবে এখনও হাসপাতালের বিল পরিশোধ করা যায়নি।

তিনি জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ, পঞ্চাশ টাকা করে দিচ্ছে তাই দিয়ে চলছে; বিশেষ কেউ দিচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম দিকে সাপোর্ট দিতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা আর দেইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ভিসি বা ছাত্র উপদেষ্টারা তো আমাদের অভিভাবক। তারা একবার ফোন দিয়েও জানতে চায়নি তরিকুল কেমন আছে।’

মঞ্জুরুল আরও জানান, ‘ওর পরিবারের অবস্থা তেমন ভালো না, ও কৃষক পরিবারের ছেলে। পরিবারের পক্ষে সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসার খরচ বহন করা। তাই আমরাও ওর পরিবারকে চাপ দিচ্ছি না। পায়ের অপারেশনে অনেক কিছু দরকার ছিল। ডাক্তাররা টাকা ছাড়া অপারেশন করতে চাইছিল না। পরে আমরা বলেছি অপারেশন করেন আমরা টাকা যেভাবে হোক জোগাড় করব।’

তিনি জানান, হাসপাতালে আমাদের অনেক ডিউ হয়ে গেছে। আমরা বলেছি আমাদের সময় দিতে হবে টাকা পরিশোধে। ওর পায়ের অপারেশনের সব টাকা এখন বাকি আছে। এছাড়া ওর বেশ কিছু ওষুধ বাইরে থেকে আনতে গেলে দেখি অনেক ব্যয়বহুল সেগুলো।

গত ৩০ জুন ঢাকায় কোটা আন্দোলনের কয়েকজন নেতাকে পেটানো হয় ছাত্রলীগের জমায়েত থেকে। এর প্রতিবাদে ২ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। সে সময় হামলা করে ছাত্রলীগ। আর তরিকুলকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ধরে বাঁশের লাঠি দিয়ে পেটানো হতে থাকে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ-আল-মামুন হাতুড়ি দিয়ে পেটান তাকে।

এদিকে আজ শনিবার বিকেলে রাবির 'নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকবৃন্দ'র পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে জানানো হয়, "বর্তমানে তরিকুলের অবস্থা উন্নতির দিকে। সে দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে। এখন সে প্রয়োজনে নড়াচড়া করতে পারছে এবং একটু হলেও হাঁটু ভাঁজ করতে পারছে। নিয়মিত ড্রেসিং করায় কমে আসছে পায়ের ফোলা । কিন্তু হাতুড়ির আঘাতের কারণে পিঠের নিচের দিকে এখনও রক্ত জমাট বেধে আছে, পিঠের বিভিন্ন স্থানে লাঠির আঘাতে কালশিটে পড়েছে, মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেয়া হচ্ছে। ডাক্তারগণ মনে করেন, তরিকুল পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে আরও অন্তত তিন মাস সময় লাগবে।"

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষকরা আরও জানান, গুরুতর আহত একজন শিক্ষার্থীকে চিকিৎসাবঞ্চিত করার এই ঘটনা ছিল নজিরবিহীন। এই পরিস্থিতিতে তরিকুলের সহপাঠিরা নিরুপায় হয়ে তাকে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানকার চিকিৎসকরা তরিকুলের পায়ে অস্ত্রপচার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানায়।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একেবারে নীরব ভূমিকা পালন করে। এমনকি তারা তরিকুলের ন্যূনতম খোঁজখবর নেওয়ারও প্রয়োজনবোধ করেনি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এর আগে গত ৫ জুলাই অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা অসম্পন্ন রেখেই ছাড়পত্র দেয়ার পর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ৬ জুলাই রয়্যাল হাসপাতালে গিয়ে তরিকুলের সঙ্গে দেখা করেন শিক্ষকরা। সেখানে চিকিৎসক জানান, তরিকুলের ডান পা ভেঙে গেছে। মাথায় ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের পরামর্শে ৮ জুলাই তরিকুলকে ঢাকায় পাঠানো ব্যবস্থা করেন তারা। বিকেল তিনটায় তরিকুল ঢাকায় পৌঁছালে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৯ জুলাই তার পায়ে অস্ত্রপচার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের পাশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা পতাকা মিছিলের জন্য জমায়েত হয়। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সশস্ত্র হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। তরিকুলের উপরে চলে নির্মমতম অত্যাচার। বাঁশ, রড, রামদা ও হাতুড়ির আঘাতে তার মাথা ফেটে যায় এবং ভেঙে যায় ডান পায়ের হাটুর নিচের দুটি হাড়।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন