তারা কথাই শোনে না!

  16-08-2018 07:22PM

পিএনএস ডেস্ক : মাথায় বোঝা আর হাতে ব্যাগ। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে মিরপুর সড়ক পার হচ্ছিলেন এক পথচারী। চারদিক দিয়ে সাঁই করে গাড়ি ছুটছে। পুলিশের একজন সদস্য তাঁকে থামানোর জন্য পেছনে ছুটলেন। কিন্তু যানবাহনের ভিড়ে এগোতে পারেননি। আক্ষেপ করে বললেন, ‘মানুষ নিজে ভালো না হলে আইন করে কী হবে। বললেন এরা কথাই শোনে না।’

সদ্যই শেষ হল ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহ। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ রোভার স্কাউটের সদস্যরা এই ১০ দিন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছেন। তবে এই মোড়গুলোতে স্কাউট সদস্যরা এখন না থাকলেও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ট্রাফিক সপ্তাহের মতো কড়াকড়ি না হলেও পথচারীদের সড়ক ব্যবহার, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও লাইসেন্স পরীক্ষার কাজ চলছে। এ ছাড়া সড়কে বাসগুলোর বেপরোয়া মনোভাব কমেনি। মাঝপথে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন যানবাহনের যত্রতত্র পার্কিং আছেই। অন্যদিকে যাত্রীরা বলছে, সড়কে বাস এখনো কম।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ট্রাফিক সদস্যসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। যানবাহনগুলোকে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। মূল সড়কের ওপর দিয়ে পথচারী পারাপারে নিষেধ করেও লাভ হচ্ছে না। এক পথচারীকে রাস্তা পারাপারে বাঁধা দিয়ে পদচারী সেতু ব্যবহার করতে বলায় এক আনসার সদস্যের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মো. হেলালুদ্দিন বলেন, ‘ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হলেও আমাদের কাজ একই রকম থাকবে। এই মোড়ে ১০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। প্রায় এক মাস তাঁরা সচেতনতা তৈরিসহ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।’ তবে বললেন, ‘সড়কে চলাচলরত মানুষকে কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না। একদিকে একজনকে বোঝাতে থাকি, অন্যদিকে পাশ দিয়ে আরেকজন সুযোগ পেলেই দৌড় দেয়।’

শাহবাগ মোড়েও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য দেখা গেল। সিগন্যাল ছাড়তেই বাসগুলো পাল্লা দিয়ে চলা শুরু করে। শাহবাগ থেকে ধানমন্ডিমুখী দুটি বাস কার আগে কে যাত্রী তুলবে সেই প্রতিযোগিতা শুরু করে। দুই বাসের মধ্যে পড়ে একটি ভ্যানগাড়ি। অন্যদিকে ফার্মগেটমুখী বাসগুলো পুরো সড়ক দখল করেই যাত্রী তুলতে থাকায় পেছনের অন্যান্য যানবাহনের ভিড়ে পুরো মোড় টিতেই জট লেগে যায়।

এখানে তিনদিকে তিনটি পদচারী সেতু থাকা সত্ত্বেও পথচারী নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। বয়স্ক একজন পথচারীকে পদচারী সেতু ব্যবহার করতে বলার পরেও সে সড়ক দিয়েই পার হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে সেখানে কর্তব্যরত একজন ট্রাফিক সদস্য বলেন, ‘ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য যদি সাধারণ মানুষের প্রতিদিন জরিমানা করা যায়, তবে সেটা হতো যানবাহনের জরিমানার চেয়ে বেশি। কোনোভাবেই এদের বোঝানো যায় না। কথা বললেও শোনে না।’

আবদুর রহমান নামের এক পথচারী বলেন, ‘ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার কারণে অনিয়ম এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। কষ্ট করে পদচারী সেতুতে কেউ উঠতে চায় না। জেব্রা ক্রসিং ও সিগন্যাল যদি সঠিকভাবে মানা হয়, তাহলে পদচারী সেতুও লাগে না।’

শাহবাগ মোড়ে দায়িত্বরত সার্জেন্ট আহসান হাবিব জানান, আজকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০টি মামলা করেছেন। ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হলেও কার্যক্রম কমেনি। তবে বললেন, রাতারাতি পরিবর্তন না হলেও মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গত কয়েক দিনে হেলমেট ছাড়া তাঁরা কাউকে চলতে দেখেননি।

পাশাপাশি মোটরসাইকেলের আরোহীরাও এখন হেলমেট ব্যবহার করছেন। পাশেই আরেক সার্জেন্ট বললেন, ‘এই দৃশ্য দেখে এখন ভালোই লাগে।’

বাংলামোটরে পরিস্থিতি ঢিলেঢালা। এখানে যে যার মতো সড়ক পার হচ্ছেন। অথচ মাথার ওপর পদচারী সেতু ফাঁকা। অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ নেই। তবে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে দেখা গেল, সিগন্যালের সময় যানবাহনগুলোকে জেব্রা ক্রসিং থেকে দূরে দাঁড়াতে।

এখানে কোনো নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ না থাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউতে যাওয়ার মোড়ে সড়কের অর্ধেক জুড়ে অপেক্ষমাণ যাত্রী ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে।

কারওয়ান বাজার প্রজাপতি গুহার সামনে একজন দৌড় দিয়ে সড়ক পার হতে বিভাজকের ওপর দাঁড়ালেন। কর্তব্যরত একজন পুলিশ সদস্য তাঁকে ফিরে আসতে বলায় চলে এসে গুহা দিয়েই পার হন শেষপর্যন্ত। কিন্তু পাশেই আরেকজন অপেক্ষা করছিলেন, সুযোগ পেলেই সড়কে দৌড় দেবেন। ওই পুলিশ সদস্য তাঁকে বোঝালেন, কিন্তু কাজ হয়নি। তিনি দৌড়েই ঝুঁকি নিয়ে পার হন। এখানে পথচারী পারাপার নিয়ন্ত্রণে চারজন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।

ফার্মগেটে তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি পদচারী সেতু আছে। সেখানে লাঠি হাতে সড়ক বিভাজকের ওপর একজন পুলিশ সদস্য বসে আছেন। অন্যদিকে আনন্দ সিনেমা হলের সামনে রয়েছেন আরেকজন। উদ্দেশ্য কেউ যেন সড়কে দৌড় না দেন।

তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ট্রাফিক সপ্তাহ চলাকালে মামলার ভয়ে অনেকেই গাড়ি বের করেনি। ট্রাফিক সপ্তাহ শেষ হওয়াতে সেসব গাড়ি এখন বের হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কার্যক্রম আগের মতোই। এখন ওই গাড়িগুলো মামলা খাচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, পদচারী সেতু ও আন্ডার পাসের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। তাঁদের ওপর নির্দেশ আছে, সড়কে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার।

এ বছর ১০ দিনের ট্রাফিক সপ্তাহে সারা দেশে মামলা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৪৯ টি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৭ কোটি ৮ লাখ ১৪ হাজার ৩৭৫ টাকা। মামলা ও জরিমানা অধিকাংশই হয়েছে রাজধানীতে। - প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন