ঈদযাত্রা ভোগান্তিতে শুরু

  18-08-2018 08:29AM


পিএনএস ডেস্ক: গতকাল শুক্রবার ভোর থেকেই ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেল। সকাল ৬টা ২০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা।

তবে ছাড়ল ৫৪ মিনিট দেরিতে। বিকেলে বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে গিয়ে জানা গেল, ট্রেনটি তখন চেঙ্গুটিয়া অতিক্রম করছিল। তখন পর্যন্ত ট্রেনে বিলম্ব ছিল দুই ঘণ্টা ২১ মিনিট। গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে একে একে ছেড়ে যায় ৫৯টি ট্রেন। আগাম টিকিটে ট্রেনে ঈদ যাত্রার প্রথম দিনে বেশির ভাগ ট্রেনেই বিলম্বের ফাঁদে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।

কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চিলাহাটির উদ্দেশে নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ে ৫০ মিনিট দেরিতে। সকাল পৌনে ৯টায় ট্রেনে ভিড় ঠেলে উঠতে গিয়ে হাত থেকে মালপত্র ফসকে নিচে পড়ে যায় মঈন উদ্দিনের। ভিড় ঠেলে পদপিষ্ট মালপত্র নিয়ে ট্রেনে উঠতে উঠতেই বললেন, স্টেশনেই তো জান বের হয়ে যাচ্ছে। ওই ট্রেনে শিশুদের নিয়ে কোনো রকমে উঠতে পারছিল নারী যাত্রীরা।

তাদের একজন করুণ স্বরেই বললেন, ‘যুদ্ধ আর শ্যাষ হয় না। টিকিটও নিছিলাম ১৭ ঘণ্টা দাঁড়াইয়া। ’ সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে নীলসাগর ট্রেনের জন্য প্ল্যাটফর্মের সামনে অপেক্ষা করছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা শিহাব উদ্দিন। নিজে টিকিট পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারের চার সদস্যকে আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। বাসের টিকিট না পেয়ে তদবির করে চারটি টিকিট জোগাড় করেছেন বলে জানান। গতকাল ভোর থেকে বিমানবন্দর রেলস্টেশনেও আগাম যাত্রার টিকিট হাতে নিয়ে ভিড় করে যাত্রীরা।

সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যায় ১৮টি ট্রেন। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী নীলসাগর ট্রেন ছাড়াও বিলম্বে ছাড়ে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস। ট্রেনের যাত্রীরা সকাল সাড়ে ৭টার আগেই প্ল্যাটফর্মে এসে জড়ো হয়; কিন্তু ট্রেন ছাড়েনি। এক ঘণ্টা দেরিতে ট্রেনটি ছাড়ে। নারী ও শিশুসহ ট্রেনের যাত্রীরা ভিড়ে ও গরমে ঘামছিল।

একজন বলেন, ‘প্রথম দিনের শুরুতেই যদি এমন হয় পথে পথে কী অবস্থা হবে—ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। ’ তিলধারণের ঠাঁই ছিল না সকাল ৯টায় ঠিক সময়ে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনে। রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী, সরকারি চাকরিজীবী সামির মাহমুদ বললেন, ‘বাড়তি ছুটি নিয়ে রংপুর যাচ্ছি। ’

মহাসড়কে অস্বস্তি : ঢাকা থেকে আগাম টিকিটের বাস সীমিত আকারে চললেও পথে যানজটে বসে থাকতে হয়েছে বিভিন্ন মহাসড়কে। বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার যাত্রীদের দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ রুটে ফেরি সংকটে বিলম্ব যাত্রায় পড়তে হচ্ছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক আগের বছরের চেয়ে স্বস্তিদায়ক। কারণ খুলে দেওয়া হয়েছে চার লেন প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতু। তবে গতকাল গাজীপুর সদরের হোতাপাড়ায় এলিগ্যান্টস গ্রুপের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বেতন ও বোনাসের দাবিতে সকাল ১০টায় বিক্ষোভে পথে নামলে ছয় ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। এ সময় উভয় পাশে ২০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে আব্দুল্লাহপুর প্রবেশপথেও যানজটে পড়তে হচ্ছিল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৯টায় এনা পরিবহনে রওনা দিয়ে চার ঘণ্টা বিলম্বে ভৈরব পার হয় যাত্রীরা।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও যানজট ছিল দুপুর পর্যন্ত। কারণ পণ্যবাহী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, মেঘনা ও গোমতী সেতু দিয়ে টোল আদায়ে ধীরগতি। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে লেগে থাকা যানজট গতকাল সকাল ১১টা পর্যন্ত দাউদকান্দি উপজেলার শহীদনগর পর্যন্ত ছিল। মেঘনা সেতুর টোল এলাকা থেকে এ প্রান্তে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ছিল বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার যানজট। গজারিয়ায় দুপুর ১টায়ও যানজট দেখা যায়। কাঁচপুর হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক আলী রেজা বলেন, ‘অতিরিক্ত গাড়ির চাপ ও কাঁচপুর সেতুর মধ্যে গাড়ি বিকল হওয়ার কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে আমাদের প্রচেষ্টায় (দুপুরে) পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। মেঘনা টোল প্লাজায় স্বেচ্ছাসেবক দল কাজ করছে। টোল দিয়ে দ্রুত যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জেলা ও মহাসড়ক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ’

তীব্র যানজট ও গরমে নারী ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চট্টগ্রাম পরিবহনের যাত্রী শান্তা ইসলাম বলেন, ‘এত পুলিশ সদস্য মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করার পরও কেন যানজটের কবলে পড়তে হয় আমাদের?’ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী দেশ ট্রাভেলস পরিবহনের বাসচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কাঁচপুর সেতু থেকে মেঘনা সেতু পর্যন্ত গত তিন দিন যানজটে পড়ে আমাদের অনেক মূল্যবান সময় নষ্ট হয়েছে। ’

ফেরি কম : নাব্যতা সংকটে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌ রুটে ফেরি সার্ভিস গতকাল সপ্তম দিনের মতো ব্যাহত হয়। বিকেলে ঘাটে অপেক্ষায় ছিল তিন শতাধিক গাড়ি। বিআইডাব্লিউটিসির এজিএম খন্দকার শাহ খালেদ নেওয়াজ জানান, এ রুটে গড়ে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার ছোট-বড় যান চলাচল করত। এখন করতে পারছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০টি। নৌ রুটে ২১টি ফেরি চলত। আমাদের মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নাব্যতা সংকটে এখন ২১টির মধ্যে ৯টি ফেরি চলাচল করছে।

পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে চারটি ফেরি যুক্ত করা হলেও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দুপুরের পর পাটুরিয়া ঘাট থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। ঘাটে সাত শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী নৌপথে নাব্যতা সংকট না কাটায় বিকল্প পথ হিসেবে যানবাহনের বাড়তি চাপ এ ঘাটে পড়ে। বিআইডাব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাউদ্দিন জানান, পদ্মায় প্রবল স্রোতের বিপরীতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

ছুটির দিন হওয়ায় গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর প্রধান প্রবেশপথগুলো ছিল যানজটে প্রায় অচল। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে আমিনবাজার অংশ পার হতেই শ্যামলী পরিবহনের চালক আবু হোসেনের দেড় ঘণ্টা লাগে। তিনি বলেন, আগে ১৫-২০ মিনিট লাগত।

ঢাকার বিভিন্ন পথে পরিবহন চলাচলে শৃঙ্খলা না থাকায় রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদরঘাটে পৌঁছতেও যাত্রীদের বিলম্ব-বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন পশুর হাট সংলগ্ন সড়কে পশুবাহী ট্রাক, পিকআপ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। মহাখালী বাস টার্মিনালের পরিবহন নেতা আবুল কালাম বলেন, সড়কে রাতে ও দিনে চাপ বাড়ছে। পশুবাহী ট্রাকের চলাচলে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ছুটির দিনে অভিযান শিথিল হওয়ায় ঢাকার নগর পরিবহনও গতকাল ছিল বেশি। কিন্তু অনেক মোড়েই ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি। সদরঘাটে নৌপথের যাত্রীদের ভিড় ছিল স্বাভাবিক। তবে সদরঘাটে ভিড় আজ শনিবার থেকে বাড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আমাদের মুন্সীগঞ্জ, দাউদকান্দি, সোনারগাঁ ও শিবালয় প্রতিনিধির পাঠানো তথ্যও এ প্রতিবেদনে যুক্ত হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন