সব জেলেকে প্রণোদনার আওতায় আনা দরকার

  13-10-2018 03:59PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : প্রজনন মৌসুম ৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৫ দিন সারা দেশে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা সুফল মিলছে। এ উদ্যোগকে শুভ বলছে সচেতন জনগোষ্ঠীসহ অভিজ্ঞ মহল। সব মহলে উদ্যোগটি সমান সমাদৃত হয়েছে। এতে বড় বড় এবং পরিমাণে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় দামও কিছুটা নাগালের মধ্যে।

জাটকা নিধন বন্ধেও একই রকম নিষেজ্ঞা আরোপ করা হয়। এতে জাটকা তথা ছোট ইলিশ নিধনের হাত থেকে রক্ষা পায়। আর নির্দিষ্ট সময় পর বড় বড় ইলিশ পাওয়া যায়। বছরে দুবার প্রজনন ও জাটকা অবস্থায় ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেদের চাল দেওয়া হয়। এ সময় তারা যেন মাছ না ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সে জন্যই চাল দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ আছে, সাবই এ সুযোগ না পাওয়ার।

মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের জারি করা এক আদেশে বলা হয়, প্রটেকশন অ্যান্ড কনজারভেশন অব ফিস অ্যাক্ট ১৯৫০ অনুযায়ী ইলিশের প্রধান মৌসুমে সরকারের এই আদেশ অমান্য করে ইলিশ মাছ আহরণ ও বিক্রি করলে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে।

এ আইন অমান্য করে মাছ ধরায় ইতিমধ্যে লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, শরিয়তপুরম বরিশাল ও ঝালকাঠিতে অনেক দুই শতাধিক জেলেকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে মাছ ও জাল। অভিযুক্ত জেলেদের একই দাবি- তারা প্রণোদনার চাল পায়নি। তাদের তালিকা থেকে দূরে রাখা হয়েছে। তথ্যমতে, দেশের জেলে রয়েছে লক্ষাধিক। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৮৫ হাজার। ফলে এর বাইরে থাকা জেলেরা এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর বঞ্চিতরাই নিরুপায় হয়ে পেটের তাগিদে নদীতে মাছ ধরতে যায়।

প্রণোদন না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষতিয়ে দেখে তাদের ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। নৌকা আর জাল নিয়ে যারা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে, তাদের নাম তালিকাভুক্ত না হওয়া দুঃখজনক। কারণ তারা অপরিচিত কেউ নয়। এটা ইচ্ছাকৃত, না অনিচ্ছাকৃত, তাও ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। তবে ঘটনা যা-ই হোক না কেন, কাউকে অভিযুক্ত না করে বাদ পড়া জেলেদের অচিরেই তালিকাভুক্ত করে নেওয়া হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

প্রজনন মৌসুমে এবং জাটকা অবস্থায় ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ বা বিক্রয় নিষিদ্ধ ও সরবরাহ বন্ধ থাকায় নদীতে বড় বড় প্রচুর ইলিশ পাওয়া যায়। জেলেরা জালভরে আর ট্রলার-ভর্তি ইলিশ পওয়ায় তাদের মুখে হাসি ফোটে। আর বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় দামও ক্রেতাদের অনেকটা নাগালে থাকে। বড় কথা, বড় বড় ইলিশ পেয়ে তৃপ্তি মিটে খাদ্য রসিকদের। মাছের উৎপাদনও বাড়ে প্রচুর।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বিশ্বে প্রতিবছর ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়। এর ৭৫ শতাংশই আহরিত হয় বাংলাদেশে। সার্বিক প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় জিডিপিতে এর হিস্যা ১ শতাংশের বেশি। গত কয়েক বছর ধরেই দেশে ইলিশের উৎপাদন তিন থেকে চার লাখ মেট্রিক টনের মধ্যে ওঠানামা করছে।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের বেশি। মৎস্য অধিদফতরের হিসাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৪ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন হয়। আর চলতি বছর উৎপাদন সাড়ে ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এক মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নদীর পরিবেশ, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশে বছরে ইলিশের বাণিজ্য ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ভোলায় পদ্মার ইলিশের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। প্রজনন মৌসুমে এসব এলাকায় মা ইলিশ চরে যায়। এসব স্থান দিয়ে সমু্দ্রে আসা-যাওয়া করে। এ সময়ে মা মাছ না ধরলে এগুলো ডিম পাড়ে। এ ডিম থেকে রেণু এবং পরে এগুলো জাটক থেকে বড় হয়। এভাবে ইলিশ মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। প্রজনন মৌসুম ও জাটকা অবস্থায় ইলিশ মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা এবং ইলিশ ধরা থেকে বিরত থাকতে জেলেদের জন্য যে সুবিধা দেওয়া হয়, দল-মত নির্বিশেষে সব জেলে যেন এ সুযোগ পায়, সেটা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।


লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন