নিরাপদ সড়ক অনিরাপদ যে কারণে…

  22-10-2018 02:58PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : আজ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে চলবো, নিরাপদ সড়ক গড়বো’। সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে স্বস্তি নেই। একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় জীবনহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ স্থলপথে যাতায়াত কমিয়ে দিয়েছে। বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছে রেল ও নৌপথ।

সড়ক দুর্ঘটনা জ্যামেতিক হারে বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের মূল্যবান জীবনহানির ঘটনা। ফলে নিরাপদ সড়কের দাবি জোরদার হচ্ছে। ইতিপূর্বে এ নিয়ে রাজপথে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। তাদের হস্তক্ষেপে বেরিয়ে আসে পাহাড়সম অনিয়মের অনেক অবিশ্বাষ্য ঘটনা।

কোমলমতী শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরে এগোতে থাকে প্রশাসন। সতর্ক হন নিয়ম না মানা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। ঘুরে দাঁড়ায় বিআরটিএ। ফলে কিছুদিনের মধ্যে কোটি কোটি টাকার জরিমানা আদায় এবং লক্ষাধিক মামলা হয়। আইন করতে বাধ্য হয় সরকার।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিশেষ করে চালকদের সচেতন ও ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কঠিন আইন প্রণয়নের দাবি ওঠে সব মহলে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সে ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান না থাকায় চালকদের বেপরোয়া ভাব দূর হচ্ছে না বলে মনে করছে অভিজ্ঞ মহল।

বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালনা, অদক্ষতা, অসম প্রতিযোগিতা, দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা টানা গাড়ি চালানো, মদ্যপ অবস্থা্য় থাকা, গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোন ব্যবহার, ওভারটেক, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, বিশেষ করে রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানামা, ট্রাফিক আইন না মানা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। আর দুর্ঘটনার জন্য চালকরাই ৮০ ভাগ দায়ী বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

মালিকপক্ষেরও অপরাধ সংঘটনের অনেক দায় রয়েছে। এর মধ্যে ফিটনেস বিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো, অদ্যক্ষ চালক দ্বারা গাড়ি চালানো, চালক ও সহকারীকে নিয়োগ এবং সে মোতাবেক বেতন-ভাতা না দেওয়া, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি রাস্তায় নামানো, গাড়ি লিজে চালানো, অতিরিক্ত সিট বসানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ইত্যাদি কারণে মালিকরাও কম দায়ী নন।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এ বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা জরুরি। আরো বেশি জরুরি, সড়কগুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা। এটা করা গেলে সড়কে অনাচার, ডাকাতি, হাইজ্যাক, চাঁদাবাজিসহ অনিয়েমের সব ক্যামেরাবন্দী হয়ে যাবে। কেঊ অপরাধ করলে শনাক্ত করাও সহজ হবে। আর পাশাপাশি ক্যামেরায় ধরা পড়বে অনিয়ম সৃষ্টিকারী।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ২ হাজার ৮৬০টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ২৬ জন। এ সময়ে আহত হয়েছে ৮ হাজার ৫২০ জন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৪৯৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৩৯টি দুর্ঘটনায় ৪৫৯, মার্চে ৪৯১টি দুর্ঘটনায় ৪৮৩ ও এপ্রিলে ৪৪২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৪৬১ জন। বাকি ১ হাজার ১০৯ জন নিহত হয় মে ও জুনে।

মূলত আইন ও নিয়ম না মানার কারণে সড়ক দুর্ঘটনার আড়ালে একধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে এক শ্রেণীর চালক। কঠোর আইন না থাকায় চালকদের বেপরোয়া ভাবের পরিবর্তন হচ্ছে না। এমনিতেই আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাবে অনেকে পার পেয়ে যায়। তার ওপর ভীতিসৃষ্টির মতো আইন না হওয়ায় ওদের টনক নড়ছে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনাও কমছে না।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন