‘জনগণের জন্যই বিচার, বিচারের জন্য জনগণ নয়’

  18-12-2018 09:44PM

পিএনএস ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিচার পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। এখানে অনুগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। জনগণের জন্যই বিচার, বিচারের জন্য জনগণ নয়।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় লিখিত বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে তাঁর পাঠানো লিখিত বক্তব্য পড়া হয়।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সুপ্রিম কোর্ট জনগণের মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করে যাচ্ছে।

সরকার বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় নিরলসভাবে কাজ করে, উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিচার পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার, এখানে অনুগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে, জনগণের জন্যই বিচার, বিচারের জন্য জনগণ নয়। তাই বিচারকদের খেয়াল রাখতে হবে, মামলার রায় হওয়ার পর মামলার কপি পাওয়ার জন্য বিচারপ্রার্থীদের যেন আদালতের বারান্দায় ঘোরাঘুরি করতে না হয়, হয়রানির শিকার না হতে হয়। দরিদ্র বিচারপ্রার্থীরা যেন দ্রুত ন্যায়বিচার পান, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।

তাঁর বক্তব্যে বলা হয়, বিচারপ্রক্রিয়া কতটা জটিল ও বিচারপতিদের কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়, সে ব্যাপারে তিনি অবগত। কিন্তু এরপরও তিনি বিচারকদের তৎপর ও আন্তরিক হওয়ার জন্য বলেন। সঙ্গে সঙ্গে বিচারকদের সংখ্যা এবং তাঁদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে বলে জানান। বিচারকার্যক্রমে আইনজীবীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি। দেশের অগ্রগতির জন্য আইন, নির্বাহী ও বিচার বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের বিকল্প নেই বলেও জানান।

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য বিচারক ও আইনজীবীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখন আমাদের সামনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতসমূহের দৃঢ় অবস্থান জনগণের মধ্যে আদালত সম্পর্কে গভীর আস্থার সৃষ্টি করেছে।’

জনগণ এখন অনেক বেশি অধিকারসচেতন এবং মামলার পরিমাণ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলার পরিমাণ যে হারে বেড়েছে, সে হারে বিচারকদের সংখ্যা ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। বিচারকদের মামলা নিষ্পত্তি করতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন বলে জানান। সরকারের সহায়তায় বিচার বিভাগকে ডিজিটাল করতে চান বলেও জানান।

বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু শিক্ষা দিয়েছিলেন যে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রয়োজন শক্তিশালী, স্বাধীন ও জনগণের আস্থাশীল বিচার বিভাগ। ৪৭ বছরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্টের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে বলে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, জেলহত্যা মামলা, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অবদানের কথা তুলে ধরেন তিনি।

বিচার বিভাগ স্বাধীন জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, আজকের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু আজকের অবস্থানে পৌঁছাতে কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে।’ বিচার বিভাগের জন্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এ ছাড়া বলেন, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে বিচার বিভাগ আরও এগিয়ে যাবে।

আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ হোসেন প্রমুখ।

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন