নদ-নদী, খাল-বিলগুলো সংস্কার জরুরি

  15-01-2019 03:59PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ‘আমায় ভাসাইলি রে/ আমায় ডুবাইলি রে/ অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে...’। ভাটিয়ালি গান গেয়ে মাঝির চিরচেনা সে গান আজ আর কানে ভেসে আসে না। নদীমাতৃক বাংলাদেশের পল্লী এলাকায় আজ নদ-নদী, খাল-বিল আর হাওর-বাঁওরে বাঁধভাঙা জোয়ার এখন আর চোখে পড়ে না।অনেক নদ-নদী মরে গেছে অনেক আগেই।

ঐতিহাসিক তথ্যমতে, নদীমাতৃক বাংলাদেশের জন্ম নদীর পানিতে বয়ে আনা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পলিকণা দ্বারা। লাখো বছরের প্রক্রিয়ায় পলি সঞ্চয় করে নদীই গড়ে তুলেছে ‘ব’ আকৃতির পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের প্রধান নদীগুলো যৌবন হারাচ্ছে। ফলে অনেক শাখা নদী ও উপ-নদী মরে গেছে।

সরকারি তথ্যমতে, দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৭০০টি। বর্তমানে এ সংখ্যা ৪০৫টিতে নেমে এসেছে। বেসরকারি হিসাবে এ সংখ্যা আরো কমে ২৩০টিতে ঠেকেছে।পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই পানি আর এক ভাগ স্থল বা মাটি। আমাদের দেশের চিত্র কিন্তু ভিন্ন।পানির চেয়ে আমাদের স্থল ভাগের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে।

মূলত প্রয়োজনীয় খননের অভাবে দেশের ছোট নদীগুলো মরে যাচ্ছে। নদীগুলো মরে যাওয়ায় খালগুলোও বেঁচে নেই। পানি প্রবাহ না ধাকায় এই খালগুলোর অধিকাংশই অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।আমাদের পরিবেশকে বাঁচিয়ে রাখতে যে নদী ও খালগুলো খনন অথবা সংস্কার করা জরুরি। এই খাল ও নদীগুলো সচল রাখার মধ্য দিয়ে দেশের সেচপদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো যায়।

শুকনো মৌসুমে পানির অভাবে অনেক এলাকায় সেচকাজ ব্যাহত হয়। ফলে তারা গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উঠিয়ে সেচকাজ চালায়। এতে ভূগর্বের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। বাড়ছে অদৃশ্য বিষ আর্সেনিকের প্রাদুর্ভাব। আর পরিবেশকে অনুকূল রাখতে নদী ও খালের পানি সহায়ক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি সে পানি দিয়ে সেচকাজ করাও সহজ।

গভীর নলকূপ দিয়ে পানি তুলতে দামি ডিজেল ব্যবহার করতে হয়। অন্যথায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নাগালে থাকা নদী ও খালের পানি ব্যবহার করা যায় সহজেই। নদী-খালগুলো সচল থাকলে জোয়ারের সঙ্গে ফসলী জমিতে পলি চলে আসে।এতে জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি পায়। সচল নদী ও খালে প্রচুর মাছও পাওয়া যায়, যা দিয়ে আমিসের ঘাটতি মিটানো সহজ।

সড়কে যখন অসহনীয় যানজট ও মৃত্যুর মিছিল চলে তখন নদী ও রেলপথে অনেকটা নিরাপদ বোধ করেন যাত্রী সাধারণ।নিরাপদ সে পথকে আরো সুগম করতে নদ-নদী, খাল-বিলগুলো সচল রাখা সময়ের দাবি। প্রকৃতির ভারসাম্যপূর্ণ ও বহুমুখী এ সুবিধাজনক দিকগুলো বিবেচনায় দেশের মৃতপ্রায় নদ-নদী ও খাল-বিলগুলো সচল করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামল বাংলার রূপকে ধরে রাখতে বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি দেশের নদ-নদী, খাল-বিলগুলো সচল রাখা দরকার।পরিবেশকে অনুকূল রাখতে এটা অবশ্য করণীয়। কেননা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগুলো টনিকের মতো কাজ করে।পানির অপর নাম জীবন, সে পানির আধার নদ-নদী, খাল-বিলগুলো মরে গেলে জীবের শক্তি ক্ষয় হয় বৈকি।

উত্তাল গাঙে না হোক গ্রামাঞ্চলের নদ-নদী, খাল-বিলগুলোয় মাঝির দরাজ কণ্ঠে ‘আমায় ভাসাইলি রে/ আমায় ডুবাইলি রে/ অকূল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে...’ গানগুলো শুনতে চাই। আগের মতো পালতোলা নৌকায় চড়তে চাই।যেখানে প্রকৃতি বিষিয়ে উঠবে না; বরং এটা হলে পরিবেশ সতেজ হয়ে আবহমান বাংলার রূপ-যৌবন ফুটে ওঠে।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন