দেশের ৬৬ ভাগ নারী ঘরে সহিংসতার শিকার

  17-01-2019 09:55PM

পিএনএস ডেস্ক : বাংলাদেশে ৬৬ ভাগ নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। সহিংসতার শিকার প্রায় ৯৭ শতাংশ নারীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়।
অন্যদিকে, কর্মক্ষেত্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধবিষয়ক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনাও মানছে না অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান। ফলে ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারীর নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়ন হুমকিতে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের হলরুমে দুটি পৃথক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সংস্থা একশনএইড বাংলাদেশ।

'সর্বক্ষেত্রে নারীর নিরাপত্তা চাই' শিরোনামে অনুষ্ঠানে তুলে ধরা এই গবেষণা পরিচালনা করেন সংস্থাটির কনসালট্যান্ট আহমেদ ইব্রাহিম। অনুষ্ঠানে 'বাংলাদেশে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার ওপর দৃষ্টিপাত :প্রবণতা এবং সমাধান' এবং 'শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ :সুপ্রিম কোর্টের ২০০৯ সালের নির্দেশনার প্রয়োগ ও কার্যকারিতা' নামের গবেষণা দুটি উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার কাশফিয়া ফিরোজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক তাসলিমা ইয়াসমিন।

এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রচলিত ধারণা এবং পিতৃতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস হচ্ছে নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ। প্রকৃত সত্য হচ্ছে নারীদের প্রতি বেশিরভাগ সহিংসতা বাড়িতে সংঘটিত হয়। প্রতি তিনজনের দু'জন নারীই নানাভাবে পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে আক্রান্ত হচ্ছেন। অর্থাৎ দেশের ৬৬ ভাগ নারী ঘরেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গণমাধ্যমে বাড়ির বাইরের সহিংসতা এবং যৌন সহিংসতাকে বেশি তুলে ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে নারীরা ঘরেই বেশি অনিরাপদ।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটিই আদালতে উত্থাপিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তারপর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নারী নিজেদের পক্ষে বিচার পান, ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মামলা খারিজ হওয়া বা আসামিকে খালাস দেওয়ার সম্ভাবনা ৩২ শতাংশ। মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ মামলা থাকে পারিবারিক বিরোধসংক্রান্ত। তবে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেদন ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণসম্পর্কিত।

গবেষণায় বলা হয়েছে, নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ দাখিল-সংক্রান্ত কোনো তথ্য থাকে না, এলাকার ক্ষমতাসীনদের বাধা এবং হস্তক্ষেপ, সুশাসনের অভাব, ঘরে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকা, মামলার ধীরগতির কারণে ভুক্তভোগীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ নিয়ে যেতে চায় না, বেশিরভাগ সময়ই ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে রায় যায়, যা তাদের আরও সমস্যায় ফেলে দেয়।

অনুষ্ঠানে 'কর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ২০০৯ বাস্তবায়ন' বিষয়ক পৃথক একটি গবেষণাপত্রও উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।

এতে বলা হয়েছে, আদালতের নির্দেশনার নয় বছর পরেও কর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা বা কৌশল হাতে নিতে দেখা যায়নি। এ অবস্থায় গবেষণায় উঠে এসেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ-সংক্রান্তত কমিটির কথা জানে না। ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে জানে না। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অসচেতনতার উল্লেখযোগ্য অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং নিজ ঘরে এর ব্যাপকতা নির্মূল করার জন্য একটি আইন করা এবং তার বাস্তবায়ন করা, নারীরা যেন ঘরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে পারেন।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ডেপুটি ডিরেক্টর ফারিয়া চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

বক্তব্য দেন দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল করিম এনডিসি, বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিয়া হক, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন প্রমুখ।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল




@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন