শেষ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা লুট!

  21-01-2019 01:06PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : লুটপাট কতটা সীমা ছাড়িয়ে গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা লুট এর বড় প্রমাণ। দায়ীদের পাপ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেটা স্পষ্ট হয়েছে হাইকোর্টে একটি রিটের মাধ্যমে। আর হাইকোর্ট এ ব্যাপারে তদন্দের নির্দেশ দিয়েছেন।

অভিযোগে প্রকাশ, ৬ হাজার ৪৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার প্রায় ৪ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত। তিনিই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।

রিটে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বরিশালের জেলা প্রশাসক, তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কর্মকর্তাসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে।আইনজীবী অমিত দাস গুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, রিটে ভাতা লোপাটের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশনা ছাড়াও রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে।

গত ২ জানুয়ারি ‘সাড়ে ৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার ভাতা লোপাট’ শিরোনামে একটি দৈনিকে খবরটি প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বরিশালে ৬ হাজার ৪৫৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার প্রায় চার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাবদ এ টাকা ছাড় করেছে তারা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা জানান, তারা এই টাকা পাননি। বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে এ জামেলার সূত্রপাত। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মন্ত্রণালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা বাবদ প্রায় চার কোটি টাকা কম দেয়া হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর ইতোমধ্যে বরিশালে চারজন জেলা প্রশাসক বদলি হয়েছেন। কিন্তু আজও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। ভাতাও বুঝে পাননি মুক্তিযোদ্ধারা। এতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা অর্থসংকটে পড়েন। ফলে বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত বিষয়টি তদন্দের নির্দেশ দিয়েছেন।
দেশ ও জাতির জন্য যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ, মুক্তিযুদ্ধের সরকার দাবিদাররা যখন ক্ষমতায়, মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার যখন ব্যাকুল, তখন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিচিত যুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা নিয়ে যে বা যারা নয়ছয় করেছে, তারা সাধারণ মানুষের পাওনাদি নিয়ে কী না করতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।

এ কথা হলফ করে বলার প্রয়োজন পড়ে না যে, হয় মন্ত্রলালয়ে, না হয় বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দুটির যেকোনোটিতে অর্থ নিয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধারা যে তাদের ন্যায্য সম্মানি ভাতা পাননি, সেটা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট। ভাতা পেলে তো তারা মামলা করতেন না। এটা তো দুয়েকজনের ব্যাপারও না, সাড়ে ছয় হাজার মুক্তিযুদ্ধাকে ঠকানোর মতো জালজালিয়াতির ঘটনা।

ঘটনার যখন সূত্রপাত, তখন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়সহ চার সচিব ছিলেন ভুয়া মুক্তিযুদ্ধা সার্টিফিকেটধারী! প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঊর্ধ্বতন চার কর্মকর্তার ভুয়ামির বিচার হয়নি। অজানা কারণে তাদের দাঁড় করানো হয়নি কাঠগড়ায়। ফলে যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা নিয়ে অরাজকতার দুঃসাহস দেখাচ্ছে অধঃস্তনরা। ওই বিচারটি হলে তারা এমন সাহস পেতেন না বলে মনে করেন অফরাধ বিশেষজ্ঞরা।

সাড়ে ছয় হাজার মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতা প্রায় ৪ কোটি টাকা লোপাটের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত, তাদের খুঁটির জোর যত শক্তিশালী হোক না কেন; অনতিবিলম্বে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা জরুরি। সম্ভব হলে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি ভাতা নিয়ে যারা ছলছাতুরি করতে পারে, অন্যদের রাষ্ট্র এবং আমজনতার অর্থ লুটপাটে তারা কতটা সীমা ছাড়িয়ে। এই পাপিষ্ঠদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই সময়ের দাবি।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন