সবদিক দিয়ে সেরা মানুষটির সঙ্গে এ কেমন আচরণ!

  18-02-2019 03:34PM


পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : ৮২ বছর বয়সে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল-মাহমুদ ১৫ জানুয়ারি রাত ১১টায় চলে যান একেবারে না-ফেরার দেশে। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তার মৃত্যুতে সাহিত্য জগতে শোকের ছায়া নেমে আসে।

১৬ ফেব্রূয়ারি সকাল ১১টায় মরহুম কবি আল-মাহমুদের লাশ বাংলা এডাডেমি প্রাঙ্গণে নেওয়া হলে সর্বস্তরের মানুষ তাদের প্রিয় কবির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায়। এর পর জাতীয় প্রেস ক্লাবে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জানাজা শেষে লাশ নিয়ে যাওয়ায় তার গ্রামের বাড়িতে।

১৭ ফ্রেবুয়ারি কবি আল-মাহমুদের লাশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর পর হাসপাতাল, বাসা, বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, বায়তুল মোকাররম এবং গ্রামের বাড়িসহ যেখানে মরহুম কবি আল-মাহমুদের লাশ নেওয়া হয়েছে, সেখানেই কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে।

মূলত সংবাদপত্রে লেখালেখির সূত্র ধরে ১৯৫৪ সালে কবি ঢাকা আসেন । লেখালেখি শুরু করেন বিভিন্ন সংবাদপত্রে। কবির কালজয়ী লেখনী মানুষকে কতটা আকৃষ্ট করেছে, মৃত্যুর পর সর্বত্র তার প্রমাণ মিলেছে। জন্ম যে সৃষ্টির লক্ষ্যে, কবি আল-মাহমুদ সে সত্য সযত্নে রেখে গেছেন। তার অমর সৃষ্টি ও কৃর্তী আমাদের সামনে। লেখনির বাইরে সাংবাদিকতাসহ ও স্বাধীনতা যুদ্ধসহ তার অবদান রয়েছে আরো অনেক ক্ষেত্রে।

১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন আল-মাহমুদ। তার আসল নাম মীর আবদুস শুকুর আল-মাহমুদ। পঞ্চাশের দশকের কবি-সাহিত্যিবকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে কজন, তাদের মধ্যে আল মাহমুদ অন্যতম। লোকায়ত জীবন ও সাম্যবাদ তার কবিতায় বাবার উঠে এসেছে।

আল-মাহমুদ দৈনিক ইত্তেফাক, মিল্লাত, গণকণ্ঠে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি গণকষ্ঠের সম্পাদক থাকা অবস্থায় স্বাধীনতার পর দীর্ঘ এক বছর জেলে খাটেন। স্বাধীনে দেশে জেলখাটা সাংবাদিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার সম্পাদনায় পরিচালিত সে সময়ের দৈনিক গণকণ্ঠ ছিল ‍পাঠকদের পছন্দের তালিকায় আকেবারে শীর্ষে। জেল থেকে বেরোনোর পর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কবি আল-মাহমুদ।

সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে তার সাহিত্য। সাহিত্যে তিনি আঞ্চলিক শব্দগুলো পরম যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করেছেন। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে সোনালী কাবিন, লোক লোকান্তর, কালের কলস, ডাহুকী, কবি ও কোলাহল, নিশিন্দা নারী উপন্যাস লিখেছেন আল মাহমুদ। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে আরো আছে পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত ও গন্ধবণিক।

ভাষার মাসে চলে গেলেন কিংবদন্তিতুল্য সাহিত্যিক ও সম্পাদক কবি আল-মাহমুদ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার ছাড়াও একুশে পদক ও জয়বাংলা সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে তার অনন্য ভূমিকা ও অবদান। কিন্তু মৃত্যুর পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে ন্যূনতম সম্মান জানানো হয়নি। প্রকাশ করা হয়নি শোকও।

শুধু কি তাই, কবি পরিবারের চাওয়া অনুযায়ী লাশ দাফন করতে দেওয়া হয়নি হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে অন্যথায় শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে। এমনকি জানাজার জন্য দেওয়া হয়নি জাতীয় ঈদগাহ। কবি আল-মাহমুদের মতো একজন বড় মাপের কবির মৃত্যু-পরবর্তী এসব ঘটনা সচেতন জনগোষ্ঠীকে অবাক করেছে বৈকি।

অথচ তৎকালীন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর দমন-পীড়নের প্রেক্ষাপটে পঞ্চাশের দশকে কবি আল-মাহমুদের লেখায় সাম্যবাদ ও সংগ্রামের দিকগুলো উঠে আসে। তিনি যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধেও। তার লেখা কবিতা, গল্প, উপন্যাসগুলো কালোত্তীর্ণ। তার প্রতিটি সৃষ্টি অমর। সম্পাদনা সহকারী হিসেবে সংবাদপত্রে জগতে যার কর্মজীবন শুরু, দায়িত্ব পালনে সফলতায় তার সম্পাদনায় দৈনিকটি হয় জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সেরা। কর্মজীবনে সব দিক দিয়ে সেরা মানুষটির সঙ্গে মৃত্যুর পর হওয়া দুঃখজনক অবমূল্যায়ন তার সুহৃদদের যারপরনাই পীড়া দিচ্ছে।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন