দারিদ্র্যই কারণ নয়তো চাক্তাই বস্তির ৯ হতভাগ্যের

  19-02-2019 12:24PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : বন্দর নগরী চট্টগ্রামের চাক্তাই এলাকার একটি বস্তিতে আগুন লেগে ৯ জন দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তিন পরিবারের ৯ জনের লাশ ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করেছেন। আগুনের এই ঘটনা রহস্যজনক বলে মনে করছেন বস্তিবাসীসহ অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। প্রশ্ন উঠেছে, দারিদ্র্য ছাড়া আর কী অপরাধ ছিল নিহত ওই ৯ হতভাগ্যের।

নিহতদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে। হতভাগ্যরা হলেন- রহিমা আক্তার (৫৫), তার দুই মেয়ে নাজমা (১৬) ও নাসরিন (৫) এবং ছেলে জাকির (১০); আয়শা আক্তার (৩৫) ও তার ভাগ্নে সোহাগ (১৯); হাসিনা এবং অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তি। নিহতদের প্রত্যেকের দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলয়াস হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার গভীর রাতে এই অগ্নিকাণ্ডে চাক্তাই এলাকার ভেড়া মার্কেট সংলগ্ন বস্তির প্রায় ২০০ ঘর পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, কর্ণফুলী রাজাখালী খালের পাশের ভেড়া মার্কেট সংলগ্ন ওই খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে ওই বস্তি গড়ে তোলা হয়েছিল। হাসিনা বেগম নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী জানান, স্থানীয় সাত্তার, ফরিদ, হেলালসহ পাঁচজন ওই বস্তির ঘরগুলো থেকে ভাড়া তুলতেন। বস্তির বিভিন্ন অংশ সাত্তার কলোনি, ফরিদ কলোনি নামে পরিচিত ছিল।

বস্তিবাসীর অভিযোগ, তারা জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সরে যেতে চাইলেও তাদের যেতে দেওয়া হয়নি। আর যদি যেতেই হয়, তাহলে বস্তিতে অবৈধভাবে বস্তি তুলে ভাড়া আদায়কারীদের অতিরিক্ত টাকা দিয়ে যেতে হবে বলে তারা চাপে ছিল। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই বস্তি ছেড়ে যায়নি। আর এর চরম মাসুল গুণতে হলো ৯টি তাজা প্রাণ আগুনে অঙ্গার হয়ে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিকভাবে আমলে নেওয়া উচিত জেলা প্রশাসনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া এবং যারা বস্তির নিম্ন আয়ের মানুষকে সরে যেতে না দেওয়ার মতো বিষয়টি। বস্তির লোকজন সময়মতো চলে গেলে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ৯টি তাজা প্রাণ অকালে ঝরে যেত না। এই খাস জমিতে আগুন দিলে কারা লাভভান হবে বা হতে পারে, তদন্তে এ বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার।

রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে, যেখানেই বস্তি সেখানেই একটি মহল নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত। ভাড়া আদায় থেকে শুরু করে অস্ত ও মাদকের অবৈধ ব্যবসায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো ব্যবহার করা হয়। হয় জোরপূর্বক অন্যথায় কাঁচা টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের এসব কাজে ব্যবহার করা হয়। বরাবরই সমাজের নষ্ট-ভ্রষ্টরা এসব নোংরা কাজে লিপ্ত। আর এর মাসুল দেয় সাধারণ মানুষ, যেমন বলি হয়েছেন চাক্তাই বস্তির ৯ জন নিরীহ মানুষ।

অতীতে দেখা গেছে, রহস্যজনকভাবে বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। বস্তি খালি করে কব্জায় নেওয়ার জন্য মহলবিশেষ এমনটা করে বলে অভিযোগ আছে। এসব কাজ করে মূলত সমাজে দলখদার ও চাঁদাবাজ হিসেবে পরিচিত অপরাধীরা। একের কবল থেকে অন্যরা দখল নেওয়ার জন্য অথবা বস্তির ভাড়ায় ভাগ বসাতেও নিম্ন আয়ের মানুষের মাথার গোঁজার ঠাঁই এবং তাদের জীবন নিয়ে তারা সর্বনাশা তামাশায় লিপ্ত হয়।

চাক্তাই বস্তিতে আগুন লাগিয়ে সৃষ্টির সেরা জীব ৯ জন মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে এবং এ ধরনের অতীতের রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের প্রতিটি ঘটনায় যে বা যারা জড়িত, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক ওইসব খুনীদের বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। শাস্তিটা এমন হওয়া উচিত এমন, যেন আর কেউ ভবিষ্যতে নিম্ন আয়ের মানুষের অসহায়ত্ব ও জীবন নিয়ে জুয়া খেলার সাহস না পায়।

প্রতিবেদক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন